বিশ্ব এজতেমায় জুমার নামাজে মুসল্লিদের ঢল- কাল দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত

 টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসেন গোদরার বয়ানের মধ্য দিয়ে এজতেমার মূল কাজ শুরু হয়।
তাঁর বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান। বাংলার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায়ও মূল বয়ান তরজমা করা হচ্ছে। এজতেমা মাঠে জুমার নামাজে মুসল্লিদের ঢল নামে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এজতেমায় ৪ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে আজ শনিবার হবে। কাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরা পর্যায়ক্রমে আখলাক. ঈমান ও আমলের উপর বয়ান পেশ করবেন।
এজতেমা মাঠে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো এ যাবতকালের বৃহত্তম জুমার জামাত। এতে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ জোবায়ের। জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি এজতেমা মাঠে হাজির হন। ভোর থেকেই এজতেমামুখী মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার মধ্যেই এজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। প্রথম পর্বের তুলনায় বেশি সংখ্যক মুসল্লি জুমার নামাজে শরিক হন।
বয়ান ॥ প্রথম দিনে বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসেন গোদরা,বাদ জুমা বাংলাদেশী মাওলানা মোঃ হোসেন, বাদ আছর ভারতের মাওলানা মোঃ জোবায়রুল হাসান ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা সা’দ বয়ানকারীদের তালিকায় রয়েছেন বলে জানান বিশ্ব এজতেমার শীর্ষ মুরব্বি মোঃ গিয়াস উদ্দিন।
প্রথম দিনের বয়ানে বলা হয়, যতদিন দ্বীন থাকবে, ততদিন দুনিয়া থাকবে। আর দীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ দীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন।
বয়ানে আরও বলা হয়, জুমার দিন একটি পবিত্র দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানী দিন। এটি দু’ ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এদিনে হযরত আদমকে (আ) সৃষ্টি করা হয়। এ দিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে।
এ দিনে আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-ওজু করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকী লেখা হয়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।
বিশ্ব এজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তবলীগ মারকাজের ১৫-২০জন শূরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবী, তামিল, মালয়, তুর্কী ও ফরাসী ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাঁদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করেন।
৪ মুসল্লির মৃত্যু ॥ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪ মুসল্লি মারা গেছেন। তাঁরা হলেন- বগুড়ার ধুনট থানার হাতিয়াপাড়া এলাকার হাজী আফজাল হোসেন (৬০), কুমিল্লা সদরের হোসেনপুর সাতবাড়ী এলাকার মোঃ নাজির আহম্মদ (৫৫), গোপালগঞ্জ টঙ্গিপাড়ার নীল্ফা এলাকার মোঃ বাদল ফকির (৭০) ও খুলনা সদরের সোনাডাঙ্গা গ্রামের শামসুল হক (৭২)। এ নিয়ে এজতেমায় মোট ১৭ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা ॥ টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্ববধানে পরিচালিত ৩টি মেডিক্যাল ক্যাম্পে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত দু’দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৩ হাজার ৮২৭ মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগজনিত ১৪ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং ১৫ জন টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন সৈয়দ হাবিব উল্লাহ। এছাড়াও এজতেমাস্থলের আশপাশে প্রায় অর্ধশত ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে কয়েক হাজার মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন।
সক্রিয় ভ্রাম্যমাণ আদালত ॥ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পরিবেশন ও ভেজাল খাদ্য বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন খাবারের দোকান ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা দায়ের, ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
আড়াই হাজার বিদেশী মুসল্লি ॥ এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন আমেরিকা, আরব, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৭৭টি দেশের প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে এজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের জন্য মোট ৩টি তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা ॥ শুক্রবার সকাল থেকে এজতেমা ময়দানসংলগ্ন ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে মুসল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য

No comments

Powered by Blogger.