বিক্রি হচ্ছে মূল্যবান পণ্য ॥ বহির্নোঙ্গরে স্ক্র্যাপ জাহাজ ডাকাতের দখলে

চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে নোঙ্গর করা একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ এখন ডাকাতদের দখলে। ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে এ জাহাজের অনেক মূল্যবান সামগ্রী। ডাকাতরা এমনই জেঁকে বসেছে যে, সেখানে মালিকপক্ষ ও জাহাজ এজেন্টের ওয়াচম্যান দলও যেতে পারছে না।
এ অবস্থায় মালিকপক্ষ যেমন বিপাকে, তেমনিভাবে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে স্ক্র্যাপ জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পানামার পতাকাবাহী নিনা-পি নামের এ বাল্ক কেরিয়ারটি দীর্ঘদিন ধরে নোঙ্গর করে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের সি এন্কোরেজে। জাহাজটির ওজন ৬ হাজার ৫৫২ টন। হাইকোর্ট থেকে অকশনের মাধ্যমে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় জাহাজটি কিনে নেয় চট্টগ্রামের সীতাকু-ের সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত এ জাহাজটিতে কোন ওয়াচম্যান নিয়োগ দেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর এ সুযোগে জাহাজটির দখল নেয় একটি ডাকাত চক্র। তারা ইতোমধ্যেই জাহাজের মূল্যবান দড়িসহ অনেক সামগ্রী বিক্রি করে দিয়েছে। কেউ না থাকায় এ জাহাজে তাদের অবস্থান একেবারেই নির্বিঘœ। এদিকে, ওয়াচম্যান নিয়োগ দেয়া না হলেও এ জাহাজের এজেন্ট নিয়মিত ওয়াচম্যানের বিল তুলে আসছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এজেন্টের দেয়া ওয়াচম্যান জাহাজে ওঠার চেষ্টা করেও ডাকাতদের পাল্টা আক্রমণে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় শঙ্কিত জাহাজ মালিকপক্ষ। উৎকণ্ঠায় শিপ ব্রেকিং এ্যাসোসিয়েশনও।
বন্দর বহির্নোঙ্গরে পড়ে থাকা এ জাহাজে ডাকাতদের দখলদারিত্ব এতটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সেখানে ভিড়তে পারছে না মালিকপক্ষ। সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে জানানো হয়, ওই জাহাজে ওঠার জন্য গিয়ে ডাকাতদের তাড়া খেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের নিয়োগকৃত ওয়াচম্যানদের। এ ব্যাপারে তাঁরা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের সাহায্যও চেয়েছেন। কিন্তু কোনই সাড়া নেই। সাগরে ভাসমান জলযানগুলোর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব কোস্টগার্ডের হলেও এ সংস্থা থেকেও কোন দায়িত্বশীলতা পরিলক্ষিত হয়নি।
এদিকে, বন্দর বহির্নোঙ্গরে নোঙ্গর করা এ স্ক্র্যাপ জাহাজটি ডাকাতের পাল্লায় পড়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও। কেননা, বন্দরের চারটি এন্কোরেজে প্রতিনিয়ত আসছে এ ধরনের জাহাজ। পণ্যবাহী জাহাজগুলো সরাসরি পণ্য খালাস করে চলে গেলেও স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোকে ভাসমান থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। শুধু তাই নয়, বন্দর এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা দেশের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ অবস্থায় বহির্নোঙ্গরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে শিপিং ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন নাজমুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, বহির্নোঙ্গরে কোন জাহাজে এ ধরনের ঘটনার কোন অভিযোগ তারা পাননি। এছাড়া অনেক সময় পরিত্যক্ত জাহাজের ক্রুরা বেতন-ভাতাদি না পেয়ে জাহাজের নানা পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে দিয়ে থাকে। এটাও সে রকম কোন ঘটনা কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। অপরদিকে, কোস্টগার্ড সূত্রে বলা হয়েছে, তারাও এ ধরনের কোন তথ্য পায়নি।

No comments

Powered by Blogger.