সত্যেন বোস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে কিছু কথা by শহিদুল ইসলাম

এক. পৃথিবীর যে প্রান্তেই যান, বাতাসে কান রাখলেই দুটি নাম জোরেশোরে শোনা যাবে। হিগস ও বোস। তাঁদের সাম্প্রতিক আবিষ্কার নিয়ে বিশ্বের মানুষের আজ কৌতূহলের শেষ নেই। দুজনই আজ আলোচনার কেন্দ্রে স্থাপিত হয়েছেন। তবুও বোসের ব্যাপারটা আলাদা। তিনি আমাদের ঘরের মানুষ।


সদ্য প্রতিষ্ঠিত (১৯২১) আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বসে ১৯২৪ সালে যা আবিষ্কার করেছিলেন, তার গুরুত্ব যে কতটা আজ সারা বিশ্বের মানুষ সেটা উপলব্ধি করছে। অনেক আশা নিয়ে তিনি সেই ছোট্ট লেখাটি প্রকাশ করার জন্য ইংল্যান্ডের বিজ্ঞান জার্নালে পাঠালে, তারা তখন তাঁর লেখাটির মর্ম বুঝতে পারেনি। ফেরত পাঠিয়েছিল। অজ্ঞাত কুলশীল এক নেটিভ বাঙালির লেখা। হ্যাঁ। কিন্তু সে লেখাটির মর্ম বুঝেছিলেন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে লেখাটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে ছাপিয়েছিলেন। আইনস্টাইন যে সেদিন মানুষ চিনতে ভুল করেননি, আজ তা প্রমাণ হলো। আজই প্রমাণ হলো এটা ঠিক নয়। ১৯৮৪ সালে সত্যেন বসুর আবিষ্কারের ওপর গবেষণা করে কার্লো রুবিয়া ও সাইমন ভ্যান ভার মির নোবেল পুরস্কার পান, তখনই সত্যেন বসুর আবিষ্কারের মাহাত্ম্য বোঝা গিয়েছিল। তার পরও ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০১ সালে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেন্টের ওপর কাজ করে আরো সাতজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পান। দুঃখের হলেও সত্য, স্বয়ং সত্যেন বসু নোবেল পাননি। কিন্তু জামাল নজরুল ইসলাম তাঁকে 'লরিয়েট অব নোবেল লরিয়েটস' বলে মনে করেন। যে মানুষটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে কাজ করে আজ সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন, দুঃখের কথা সেই বাংলাদেশ, বিশেষ করে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আজও এক অপরিচিত নাম। এত বড় লজ্জার কথা! তাঁর নামে একটি 'অধ্যাপকের চেয়ার' উদ্বোধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সরকার তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু এ দেশের মানুষ তাতেই সন্তুষ্ট নয়। তারা সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্মৃতিকে ভাস্বর করে রাখতে আরো কিছু প্রত্যাশা করে। যে ভবনে বসে সত্যেন বসু তাঁর কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন এবং তার পরও ২৪টি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন, সেই ভবনটির নাম কেন যে আজও একজন বাঙালিবিরোধী ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের নামে পরিচিত, তা বোঝা ভার। ভারত সরকার উপনিবেশবাদী শাসকদের নামে নামাঙ্কিত রাস্তা ও ভবনগুলোর নাম ক্রমান্বয়ে দেশের বিখ্যাত ব্যক্তির নামে রাখা শুরু করেছে। যেমন- ডালহৌসি স্কয়ারের নাম রাখা হয়েছে প্রখ্যাত স্বাধীনতাসংগ্রামী বিনয়-বাদল-দীনেশের নামে- বিবাদীবাগ। এভাবে তারা ব্রিটিশ শাসনের চিহ্নগুলো ঝেঁটিয়ে বিদায় করছে। আমরা কি পারি না 'কার্জন হলের' নাম পরিবর্তন করে 'বসু ভবন' রাখতে। তাহলে যাঁরাই বাংলাদেশ বা ঢাকায় আসবেন, বসু ভবনের নাম শুনে বুঝবেন, আজকের মহান বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এখানেই কাজ করেছিলেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ করব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে।
দুই. পাঠক, সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে কোনো গুরুগম্ভীর কিছু লেখার জন্য বসিনি আজ। ১৯৭১ সালে আমি যখন কলকাতায় শরণার্থী, তখন এই মানুষটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। প্রথম গিয়েছিলাম ৫ মে। সঙ্গে ছিলেন সুব্রত মজুমদার ও আনিসুর রহমান। সুব্রতর বাবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন বোসের ছাত্র ছিলেন। ১৯১৮ সালে এমএ পাস করেছিলেন। সুব্রতর সঙ্গে আনিস ও আমি ৫ মে গিয়ে উপস্থিত হই ১ নম্বর ঈশ্বরীপ্রসাদ লেনে। তারপর আরো দুদিন- এক দিন আমি একা, অন্য দিন আনিস আমার সঙ্গে ছিল। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কথা এই কলমের মাধ্যমে প্রকাশ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতার আগে ঈশ্বরীপ্রসাদ লেন, তাঁর বসার ঘর ও পরিবেশ সম্পর্কে কিছু না বললে পুরো মানুষটাকে তুলে আনা যাবে না। একটি কথা প্রথমেই বলব, 'আমি জীবনে এত বড় মানুষ দেখিনি। আমি এক ছোট্ট জায়গা থেকে উঠে এসেছি যে কোনো বড় মানুষের দেখা পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। সত্যেন বোসের মতো এভারেস্ট স্পর্শকারী মানুষের কথা চিন্তাই করা যায় না। বড় মানুষ কেমন হয়- এটাই আমার জানা ছিল না। তাই ১৯৭১ সালের ৫ মের সেই স্মৃতির কথা আজও আমার মনে আগুনের মতো জ্বলছে। তারই সামান্য একটু পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য কলম ধরেছি। এই লেখায় অতিশয়োক্তি দূরে থাক, আমি যা বলতে চাই, তার শতাংশও তুলে আনা যাবে কি না সন্দেহ।
তিন. ঈশ্বরীপ্রসাদ লেন এক ফুট চওড়া একটি সরু গলি। দুদিকে দুটি বাড়ির দেয়াল। কোনো দেয়ালে কোনো জানালা নেই। গলির বাঁ পাশে এক হাত চওড়া একটি নালা। পানি বয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। নিচে যত আবর্জনা জমে স্থির হয়ে যাচ্ছে। গলিতে পা রাখলেই একটা সোঁদা গন্ধ এসে নাকে লাগে। রুমাল দিতে হয়। ডান দিকে এক হাত চওড়া সিমেন্ট দিয়ে মোড়ানো সরু রাস্তা। নালার পাশ দিয়ে। সেই পথ ধরে হাত দশেক গেলে হঠাৎ করে ডান দিকের দেয়ালে ছোট দরজার মতো একটা কাটা। সেই ফাঁকটাতে কোনো পাল্লা বা দরজা ছিল না। আমরা তিনজন মাথা নিচু করে সেই ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। সুব্রত কাশি দিয়ে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেন। আমরা দুটি নিচু সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় উঠে এলাম। হাতের ডানের দরজা দিয়ে জনৈক মহিলা এসে আমাদের ভেতরে আসতে বললেন। আমরা ভেতরে ঢুকলাম। দেখি, একটি ডবল চৌকির ওপর ধবধবে সাদা চাদর পাতা। তার ওপর দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসে ছিলেন সত্যেন বোস। খালি গা। তাঁর কোলের ওপর মোটা কোনো বালিশ। তিনি চোখ থেকে ইঞ্চিখানেক দূরে নিয়ে এসে একটি থিসিসগোছের কিছু দেখছিলেন। আমরা সন্তর্পণে ঢুকলাম। নিস্তব্ধ। মহিলা ভেতরে ঢুকে গেছেন। ঘরের মধ্যে আমরা চারজন। তিনি চোখ তুলে আমাদের দিকে চাইলেন। হাতের থিসিসটা উপুড় করে বালিশের ওপর রেখে বললেন, পিএইচডি থিসিস। আমাদের বসতে বললেন। কিন্তু ঘরের মধ্যে মাত্র দুখানা তেল চিটচিটে হাতলবিহীন চেয়ার। সুব্রত ও আনিসকে চেয়ারে বসতে বলে আমি চৌকির এক কোণায় বসলাম। বসে বুঝলাম, কোনো গদি পাতা নেই। কাঠের ওপর চাদর পাতা। ঘরের চারধারে চোখ বুলিয়ে নিলাম। এক কোণে সম্ভবত বাপ-দাদার আমলের চামড়ার চার-পাঁচটি সোফা পালা করে রাখা আছে। চামড়া ছিঁড়ে ভেতরের নারিকেলের ছোবড়া ও লোহার স্প্রিংগুলো বেরিয়ে আছে। ঘরে আর কোনো কিছু নেই। বইয়ের কোনো তাক বা বইপত্র দেখলাম না। মেঝে স্থান স্থানে চটা ওঠা। মলিন। মাথার ওপর বহু পুরনো ফ্যান ঘুরছে।
চার. সুব্রত আনিসুরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আমার পরিচয় দিলেন। আমি বললাম, 'আমার বাড়ি ঈশ্বরদী।' ঈশ্বরদীর কথা শুনেই তাঁর ভাবান্তর লক্ষ করলাম। প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, 'ঈশ্বরদীতে কি ইলেকট্রিসিটি গেছে?' আমি হ্যাঁ বলে জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনি কি ঈশ্বরদী গেছেন?' তিনি বললেন, হ্যাঁ, ১৯১১ সালে আইএসসি পরীক্ষার আগে কলকাতার হৈ-হুল্লোড় থেকে বের হয়ে একটু নিবিরিলি পড়াশোনার জন্য পাকশীতে ছিলাম। আমার বাবা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের চিফ অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। তারপর পাকশী আর পদ্মার গল্প। মনে হলো, তিনি মুহূর্তে ১৯১১ সালে ফিরে গেছেন। তারপর বললেন, 'পরীক্ষার তিন দিন আগে কলকাতায় ফিরব। হঠাৎ বাংলো প্যাটার্নের খড়ের বাড়িতে আগুন লাগে। আমার বই-খাতা সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মনের দুঃখ নিয়ে পরীক্ষার আগের দিন কলকাতায় ফিরে এলাম।' এ পর্যন্তই বললেন। এ কথা বললেন না যে সেবার আইএসসি (বর্তমানে এইচএসসি) পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। গল্পের ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোরা আছিস কোথায়?' বললাম। 'টাকা-পয়সা সঙ্গে কিছু আছে?' নাই শুনে বললেন, 'তাহলে তো মুশকিল? কিভাবে চলবে? কত দিন যে যুদ্ধ চলে?' বলে তিনি ফোনের রিসিভারটা তুলে কোথায় যেন ফোন করলেন। বললেন, 'দেখ, আমার সামনে তিনটি ছেলে বসে আছে। ওরা বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। তোর ওখানে কি একজনের জায়গা হবে?' ফোনের ওপর থেকে পজিটিভ উত্তর শুনে তিনি ফোনটি রেখে সুব্রতকে বললেন, 'তুই কাল ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে যোগ দিবি। কেমন?' তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্যেন সেনকে ফোন করে একরকমভাবে জিজ্ঞেস করলেন, 'একজনকে প্রোভাইড করতে পারবি?' তিনি দুদিন সময় চাইলেন। অতঃপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ফোন করে অনুরূপভাবে একজনের চাকরির কথা বললেন। ওপার থেকে 'হ্যাঁ-সূচক' উত্তর পাওয়ার পর বললেন, 'হ্যাঁ, ওর নাম শহিদুল ইসলাম। আছে বালিগঞ্জ। সায়েন্স কলেজের হোস্টেল সুপারের বাসায়। আগে কলকাতায় আসেনি। তুই নিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করিস। ওপারের উত্তর শুনে আমাকে বলছেন, 'কাল সকালে তোকে নিয়ে যাবে, যাদবপুরে। কেমন?' পরদিন ইস্ট ইন্ডিয়া ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কের প্রধান কেমিস্ট ড. নিগোসি তাঁর গাড়ি করে আমাকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে নিয়ে গেলেন। আমি 'জয়েন' করলাম। আনিসের চাকরি একইভাবে হয়ে গেল বেঙ্গল ইম্যুউনিটি ফার্মাসিউটিক্যালে। এভাবে তিন টেলিফোন কলে আমাদের তিনজনের চাকরি হয়ে গেল। আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। আমরা এত বড় আশা নিয়ে তাঁর কাছে যাইনি। গিয়েছিলাম তাঁর পায়ের ধুলো মাথায় ঠেকাতে। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওই চাকরিই করেছিলাম।
পাঁচ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি যেন অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। বললেন, ঢাকার কথা কি ভোলা যায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আমার ঠিকানা। যে লেখাটা আইনস্টাইনকে পাঠিয়েছিলাম, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে। অনেক পরে রোনাল্ড, ডাবি্লউ ক্লার্কের আইনস্টাইনের জীবনী পড়তে গিয়ে দেখি, তিনি ডায়েরিতে লিখেছেন, 'আজ ভারতের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ছেলের একটি লেখা পেলাম।' এভাবেই সত্যেন বোস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা বিশ্বে পরিচিত করে তোলেন। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর পর আইনস্টাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত হন সত্যেন বসুর মাধ্যমে। আরো অনেক কথা। একসময় বললেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে পাঁচ পৃষ্ঠার কী এক আর্টিক্যাল লিখেছিলাম, 'মানুষ এখনো যে কেন তা নিয়ে হৈচৈ করে?' কী অদ্ভুত সারল্য! নিজের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ একেবারেই গুরুত্বহীনভাবে দেখা তাঁর মতো বড় মানুষের পক্ষেই সম্ভব। এ যেন আর এক সক্রেটিস। দৈহিক মৃত্যুর পর তিনি আজ আরো বেশি জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। মৃত্যু তাঁকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগৎ থেকে কেড়ে নিতে পারেনি। তিনি বেঁচে আছেন।
ছয়. সেদিন আমরা তিনজন তাকিয়ে দেখলাম ভারতের মানুষ তাঁকে কেমন শ্রদ্ধা করে। তিনটি টেলিফোনে আমাদের তিনজনের চাকরি হয়ে গেল। বাংলাদেশে এমন ঘটনার কথা চিন্তাই করা যায় না। কতভাবে অখণ্ড ভারত তাঁকে সম্মানে ভূষিত করেছে, তা নিশ্চয়ই আজ সবাই জেনে গেছে। তবুও আবারও উল্লেখ করলে দোষ হবে না। ১৯২৯ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিদ্যা শাখার সভাপতি হন তিনি। ১৯৪৪ সালে নির্বাচিত হলেন কংগ্রেসের সভাপতি। ভারতীয় স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, কলকাতা, এলাহাবাদ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৫৯ সালে হন ভারতের জাতীয় অধ্যাপক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'দেশিকোত্তম' এবং ভারত সরকার তাঁকে 'পদ্ম বিভূষণ' উপাধি প্রদান করে। এ ছাড়া ১৯৫৮ সালে লন্ডনের রয়েল সোসাইটিরই ফেলো হন সত্যেন বসু। এর বিপরীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর সম্মানার্থে 'সত্যেন বসু অধ্যাপক' পদ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এর প্রভাব কত বিশাল আমরা তা নিজ চোখে দেখে এসেছি। নিজের চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিনই হতো। আমরা কলকাতা থাকতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখনই কলকাতায় এসেছিলেন, তখনই প্রথম ঈশ্বরীপ্রসাদ লেনে 'ঈশ্বরদর্শন' করে তাঁর নিজের কাজ শুরু করেন। শুনেছি, ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যখনই কলকাতায় আসেন, প্রথমেই সত্যেন বোসের পদধূলি নিতে ঈশ্বরীপ্রসাদ লেনে যেতেন। এত বড় সম্মান তাঁকে জানাল। তাই আমার দেশবাসীর কাছে আবেদন, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সম্মানার্থে 'কার্জন হলের' নাম পরিবর্তন করে 'বসু ভবন' বা অন্য কিছু তাঁর নামে রাখা হোক। সবাই যেন জানতে পারে, কে এই সত্যেন বসু? কী তাঁর পরিচয় ও কাজ? এটা না করলে যে তাঁর বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে, তা নয়। ১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি অমন হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আমি এই লেখাটি না লিখলে তাঁর কোনো ক্ষতি হতো না। এতে আমিই সম্মানিত হয়েছি। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি বসুর নামে কার্জন হলের নামকরণ করে, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই গৌরবান্বিত হবে। সবাই জানবে, সত্যেন বোস এই ভবনে বসে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেছিলেন। সত্যেন বসুর মতো শিক্ষক ও গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কেউ যোগদান করেননি। প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত যত শিক্ষক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে গেছেন, তাঁদের তালিকায় সত্যেন বোসই প্রথমে। টপ অব দ্য লিস্ট। সক্রেটিসের মতো তিনি অমর।
লেখক : শিক্ষাবিদ

No comments

Powered by Blogger.