পুড়ে ছাই শতবর্ষের ঐতিহ্য

মাথা ব্যথার জন্য যদি মাথা কেটে ফেলা হয়, তবে এর চেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা আর কী হতে পারে! রবিবার এমনই একটি কা- ঘটেছে সিলেটে। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষের জের ধরে সেখানে এমসি (মুরারী চাঁদ) কলেজের একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেন এক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আগুনে পুড়ে গেছে প্রাচীন ও ঐতিহ্যম-িত এ স্থাপনা।


এ ঘটনায় সিলেটের সর্বত্র বয়ে গেছে ধিক্কার, ক্ষোভ, নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড়। ছোট ছোট টিলা ও অসংখ্য গাছগাছালিতে ঘেরা কলেজের সৌন্দর্য অপরূপ। কলেজের অদূরে টিলাঘেরা প্রায় ৭ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসটির স্থাপত্যশৈলী সবারই দৃষ্টি কাড়ত। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেল একদল যুবক রাতে আগুন ধরিয়ে দিলে ছাত্রাবাসের পাঁচটি ব্লকের তিনটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সঙ্গে পুড়েছে ছাত্রদের বইখাতা, কম্পিউটারসহ ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র। পুড়ে যাওয়া তিনটি ব্লকের বেশিরভাগ কক্ষে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা থাকত।
গোটা ঘটনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সমকালীন ছাত্ররাজনীতির একটি বিশৃঙ্খল ও হতাশাব্যঞ্জক অবস্থাই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।
ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হল কেন? গৌরবময় ঐতিহ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব ছাত্রদেরই। অথচ তারা আজ ধ্বংসের খেলায় মত্ত হয়েছে। এরা কি আসলেই ছাত্র? নাকি এরা ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী? কিছুদিন ধরে টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে নানা ছাত্র গ্রুপের মধ্যে বহুবার সংঘাত হয়েছে। এর ফলে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা গৌরবময় আদর্শে বিশ্বাসী নয়। এতে লাভ হয়েছে কার?
এই ঘটনার তদন্ত প্রয়োজন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ছাত্রাবাসের পাঁচটি ব্লকের মধ্যে যে তিনটি পুড়ে গেছে তা পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। আর যেন পুড়ে ছাই না হয় শতবর্ষের এমন ঐতিহ্য।

No comments

Powered by Blogger.