নাগরিক অধিকার নিয়ে কথা বলা গণতান্ত্রিক অধিকার-নারায়ণগঞ্জে পুলিশি নিপীড়ন

নারায়ণগঞ্জে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের জমায়েতে লাঠিপেটা করে পুলিশ কি এই সংকেত দিল যে, কোনো রকম বাদ-প্রতিবাদ মানেই নির্যাতন? গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম বাসভাড়া কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে স্থানীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হলে পুলিশ সেখানে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনে এই দমন-পীড়ন তারা করেছে কার স্বার্থে?


গত বছরের জুন মাসে বেআইনিভাবে বাসভাড়া বাড়ানো এবং পরিবহনমালিকদের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে নাগরিক আন্দোলন দানা বাঁধে। সে সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান বাসমালিকদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। এমনকি জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমঝোতা সভায় আন্দোলনের প্রতিনিধিদের হুমকি-ধমকি দেন। অবশেষে আন্দোলনকারী ও পরিবহনমালিকদের মধ্যে একটি সমঝোতা হলেও পরিবহনমালিকেরা সেই সমঝোতা ভঙ্গ করেন বলে অভিযোগ তুলেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। সেই ধারাবাহিকতাতেই নতুন করে তাঁদের আন্দোলনের সূচনা। গত বুধবার ফোরামের ব্যানারে জেলা প্রশাসক বরাবর মিছিল করে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। সে লক্ষ্যেই তাঁরা স্থানীয় চাষাঢ়া মোড়ের শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন। এ রকম একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কী কারণে পুলিশ হামলে পড়ল, তা বোধগম্য নয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওপরের সিদ্ধান্ত ছিল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা যাবে না।’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘কোনো পুলিশ কর্মকর্তার অতি উৎসাহী আচরণের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, খতিয়ে দেখছি।’ ওপর থেকে কারা সিদ্ধান্ত দেন এবং কাদের অতি উৎসাহে এ রকম নিপীড়ন ঘটে, তা সত্যিই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তবে সেই অনুসন্ধান পুলিশের মাধ্যমে হওয়ার নয়।
নাগরিক ফোরামের দাবিগুলো যৌক্তিক। তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস চলাচল সহজ ও সুলভ রাখার পাশাপাশি এই রুটে ট্রেন চলাচল বাড়ানোর যে দাবি করেছে, তা জনকল্যাণকর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, পরিবহনমালিকদের স্বার্থ নয়, সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থে দাবিগুলো বিবেচনা করা।

No comments

Powered by Blogger.