গাজায় ইসরাইলের ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, চুক্তি রক্ষায় তৎপরতা জোরদার যুক্তরাষ্ট্রের

যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও তা ক্রমাগত লঙ্ঘন করছে ইসরাইল। উপত্যকাটিতে এখনও বিক্ষিপ্তভাবে বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে দেশটি। এতে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর ভঙ্গুর এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে চুক্তি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে গাজা শহরের তুফাহ এলাকার পূর্বে আল-শাফ অঞ্চলে নিজ বাড়ির অবস্থা দেখতে গিয়ে ইসরাইলি গুলিতে নিহত হয়েছেন চার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, শুজাইয়া এলাকায় হামাস যোদ্ধারা যুদ্ধবিরতির নির্ধারিত ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে ইসরাইলি সেনাদের দিকে অগ্রসর হওয়ায় তারা হামলা চালায়। যদিও ওই এলাকায় বসবাসরত অনেকেই জানিয়েছেন, ‘হলুদ রেখা’ ঠিক কোথায় তা বোঝা যাচ্ছে না, কারণ দৃশ্যমান কোনো সীমানা নেই।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর শুরু হওয়া এই যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কেবলমাত্র রোববারই ইসরাইলি বিমান হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ইসরাইল দাবি করেছে, হামাস দুই সেনাকে গুলি করে হত্যা করায় তারা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: হামাস বলেছে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রিত রাফাহ অংশে তাদের কোনো ইউনিট সক্রিয় নেই এবং সেখানকার কোনো ঘটনার দায় তারা নেয় না। বরং তারা অভিযোগ করেছে ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অজুহাত তৈরি করছে। হামাস জানিয়েছে, তারা এখনও কিছু ইসরাইলি বন্দির মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ব্যাপক ধ্বংসস্তূপের কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৩তম মৃতদেহটি রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মানবিক সহায়তা ও অবরোধ: ইসরাইল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিলেও পরে আবার তা চালু করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানান, ইসরাইল এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। খান ইউনিসের পূর্বে সোমবার নতুন করে বিমান হামলা হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার সোমবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মঙ্গলবার ইসরাইল সফরে আসার কথা রয়েছে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ও তার স্ত্রী উষা ভান্সের।

চুক্তির পরবর্তী ধাপে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, ইসরাইলি সেনাদের উপত্যকা থেকে প্রত্যাহার এবং গাজার শাসনব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ‘শান্তি বোর্ড’ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে হামাস ও তাদের মিত্র গোষ্ঠীগুলো গাজার ওপর কোনো বিদেশি শাসন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অস্ত্র সমর্পণেও অনীহা প্রকাশ করেছে। যা চুক্তি বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, হামাসের অভ্যন্তরে ‘বিদ্রোহ’ চলছে এবং নেতৃবৃন্দকে তা সামাল দিতে হবে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, তারা ভালো না হলে নির্মূল হবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এর জন্য মার্কিন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হবে না। এই সময়ে হামাস গাজার রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, এমনকি কিছু অপরাধী গ্যাং-কে হত্যা করেছে বলেও জানা গেছে। ট্রাম্প বলেন, তাদের কয়েকটা গ্যাংকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। আর আমি এতে খুব একটা বিচলিত নই। ওটা ঠিকই হয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.