ইসরায়েলের ‘সাঁজোয়া বিস্ফোরক যানের’ ওপরই তাঁবু টানাল ফিলিস্তিনি পরিবার
১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর অনেক পরিবার গাজার দক্ষিণে নিজ শহর খান ইউনিসে ফিরতে শুরু করেছে। অনেকেই ফিরে এসে দেখছেন, আগে যেখানে পাড়া-মহল্লা ও বাড়িঘর ছিল, সেখানে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ আর লোহার জঞ্জাল। এমনকি কোথাও কোথাও বিপজ্জনক অস্ত্রশস্ত্র পড়ে আছে।
গাজার বড় একটি অংশ এখনো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখলে। কোথাও স্থায়ীভাবে থাকার কোনো জায়গা নেই। এ অবস্থায় আয়মান কাদোরাহ ওই বিশাল সামরিক যন্ত্রের ওপরেই পরিবারের জন্য তাঁবু ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা এমন যন্ত্রকে ‘বিস্ফোরক রোবট’ বলেন। এসব বিস্ফোরক যান পুরো একটি আবাসিক এলাকা গুঁড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত শক্তিশালী বোমা বহন করত।
গাজার বিভিন্ন শহরে রিমোট–নিয়ন্ত্রিত এসব ‘বিস্ফোরক রোবট’ মোতায়েন করেছিল ইসরায়েল। এগুলোর সাহায্যে বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা ব্যাপকভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা।
আয়মান কাদোরাহ এক মাস আগে খান ইউনিসে নিজের বাড়িতে ফেরেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রতিবেশীর বাড়িতেও একটি বিস্ফোরকভর্তি যন্ত্র পাওয়া গেছে। একটি এফ-১৬ ক্ষেপণাস্ত্র দুই বাড়ির মাঝখানে তিন মিটার গভীর গর্ত তৈরি করেছে। আরও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁর বাড়ির পেছনে আঘাত হেনেছে।
আয়মান আল-জাজিরাকে বলেন, এমন অবিস্ফোরিত যন্ত্রগুলো ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে কোনো দাহ্য তরল এটির সংস্পর্শে এলে ভয়ানক ও আকাশচুম্বী অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।
আয়মানের দুশ্চিন্তা হয়, যন্ত্রগুলোর যেকোনোটি বিস্ফোরিত হলে পুরো পাড়া নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। ঝুঁকি কমাতে তিনি নিয়মিতভাবে এসব যন্ত্রের ওপর বালু ঢালেন।
গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, আগস্টের শেষ তিন সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় শতাধিক বিস্ফোরক রোবটের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
জাতিসংঘের স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ কেন্দ্র ইউএনওএসএটি জানায়, খান ইউনিস প্রশাসনিক অঞ্চলে ইসরায়েলি বোমায় ৪২ হাজারের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু খান ইউনিস শহরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৯ হাজার।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, পুরো গাজায় ২ লাখ ২৭ হাজারের বেশি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু জীবন থেকে ফেরা বা বসবাস করার মতো কোনো জায়গা পাচ্ছেন না।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিসের প্রধান লুক ডেভিড আরভিং এসব বিস্ফোরক অস্ত্রের ঝুঁকিকে ‘অত্যন্ত উচ্চমাত্রার’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের সংস্থা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অন্তত ৫৬০টি যন্ত্র শনাক্ত করেছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা অজানা।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অবিস্ফোরিত অস্ত্রে ৩২৮ জন নিহত বা আহত হয়েছেন। তবে বাস্তব সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আয়মানের সন্তানেরা এখন এমন পোশাক পরে, যেগুলো তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করেছেন। এসব পোশাকের কারণে তাদের ত্বকে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর পরও আমরা এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ, এ ছাড়া আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।’
![]() |
| ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স |

No comments