সংস্কার: সফল বাস্তবায়ন আদৌ কি সম্ভব? by নুসরাতে আজিজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত ছয়টি কমিশনের মধ্যে পাঁচটির ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবকে মূল সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এই মূল প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের ৭০টি, নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের ২৭টি, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের ২৩টি, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০টি প্রস্তাব।

উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বর্তমান সংবিধানের ধারা ৭০ (সংসদ সদস্যদের ভোটের ক্ষেত্রে ফ্লোর ক্রসিং) সংশোধন, সংসদীয় কমিটির গঠনপদ্ধতি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই মেয়াদের বেশি না হওয়া, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন, সংস্কার বাস্তবায়নে এনসিসির তদারকি ও পদ্ধতিগত চেক, নারী আসন ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনর্বহাল।

তা ছাড়া সংস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠন, জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪-এর ঘটনাবলির (গণহত্যা/ নির্বাচনী জালিয়াতি/ দুর্নীতি) জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠা, বৃহত্তর সিভিল সার্ভিস সংস্কার—আমলাতন্ত্রকে সুবিন্যস্তকরণ, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সাংবিধানিক সংশোধনী এবং সম্পদের প্রকৃত মালিকানার উৎস উন্মোচন করা, যাতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মতো কেউ বিদেশে ২৯৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪৮২টি সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য টাকা পাচার করতে না পারেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে পুলিশ কমিশনের প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব—একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা—উল্লেখ করা হলেও, তা কেন যেন মূল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর তালিকায় স্থান পায়নি।

তা ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, যা মূল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আসেনি, তা হলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগের স্বাধীনতার বিষয়।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? একটি উদাহরণ দিলেই এর গুরুত্ব সহজে অনুধাবন করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান মানসুর বলেছেন, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগে ১৫ বছরে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছিল।

এটি কারও অজানা নয় যে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির ক্ষমতা তৎকালীন সরকার দ্বারা খর্ব হওয়ায় এস আলম গ্রুপ এই অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করতে পেরেছে।

দুদকের দাখিলকৃত নথি অনুসারে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে বেনামি ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং দেশে ও বিদেশে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির ক্ষমতা সরকার দ্বারা খর্ব হওয়ায় এস আলম গ্রুপ এই অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করতে পেরেছে। তা ছাড়া শেখ হাসিনা প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় জোরপূর্বক ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে রয়েছে।

অথচ বাংলাদেশ ব্যাংককে যদি স্বাধীনভাবে ব্যাংকিং সিস্টেম তদারক করতে দেওয়া হতো, তবে অতি সহজেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুর্নীতিকে ধরতে পারত এবং এতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করত। আর এত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হতো না।

এখানে বলে রাখা ভালো যে যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার–১৯৭২-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি কর্তৃত্ব রয়েছে এবং এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, প্রকৃতপক্ষে এটি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সরকার দ্বারা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান।

জুলাইয়ের গণবিপ্লব শুরু হয়েছিল মূলত ‘কোটা নয়, মেধা’ আন্দোলনকে ভিত্তি করে। মেধার সঠিক মূল্যায়নে একটি দলনিরপেক্ষ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আসেনি। কারোরই ভুলে যাওয়ার কথা নয় যে দেড় দশক ধরে কীভাবে দলীয়ভাবে সরকারি নিয়োগ হয়েছে।

তাই বাংলাদেশের জন্য একটি স্বাধীন পাবলিক সার্ভিস কমিশন অতি প্রয়োজন, যেখানে কমিশনের চেয়ার ও মেম্বাররা দলনিরপেক্ষ হবেন।

পিএসসির চেয়ার ও মেম্বার হিসেবে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া জরুরি, যাঁরা কোনো দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। শুধু তাঁদের মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তবেই তাঁরা মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু পিএসসির সদস্যরা যদি কোনো দলীয় লোক হন আর আমরা তাঁদের মাধ্যমে মেধাবীদের নিয়োগের আশা করি, তবে সেটি হবে আমগাছ থেকে কাঁঠাল আশা করার মতো, যা কখনো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনত একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা, কিন্তু বাস্তবে এর স্বাধীনতা গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, কোনো দল ক্ষমতা ছাড়লে দুদককে খুব সক্রিয় হতে দেখা যায়। যে দল ক্ষমতায় থাকে, দুদক সে দলের কোনো দুর্নীতি দেখতে পায় না।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবে, দুদক সংস্কার কমিশন প্রকৃতপক্ষে দুদককে আরও কার্যকর, স্বায়ত্তশাসিত এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে অনেকগুলো সুপারিশ পেশ করেছে।

এই কাঠামোগত, আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং পরিচালনাগত সংস্কারগুলো কার্যকর করা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করা দুর্নীতি মুক্তির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য প্রাথমিক পদক্ষেপ।

এ ক্ষেত্রে দ্বিমত করা কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য ভালো হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে কোন কোন দল ঐকমত্য পোষণ করেছে, তা জাতির উদ্দেশে প্রকাশ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের গঠনপ্রণালি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি বড় ধরনের মতানৈক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ উভয় কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) চাচ্ছে, কেউ শুধু উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চাচ্ছে, আবার কেউ কোনো কক্ষেই পিআর পদ্ধতি চাচ্ছে না—তারা চাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব।

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা। ক্ষমতার ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ নিশ্চিত করার জন্য এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

যদি দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের প্রতিনিধিত্ব হয়, তবে তা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের মূল উদ্দেশ্যকে (ক্ষমতার চেক অ্যান্ড ব্যালান্স) ব্যাহত করবে।

কারণ, দুই কক্ষেই ক্ষমতাসীন দলই শক্তিশালী থাকবে এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে না। আবার দুই কক্ষে পিআর থাকলেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।

কারণ, দুই কক্ষেই একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তা ছাড়া নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের প্রতিনিধিত্ব একটি নির্বাচিত দলকে তার কার্যক্রম, দলীয় মেনিফেস্টো অনুসারে পরিচালনার সুযোগ করে দেবে। তাতে জনগণ ওই দলকে ভালোভাবে যাচাই করার সুযোগ পাবে।

বাস্তবে দুটি পদ্ধতির কিছু ভালো ও কিছু মন্দ দিক পাওয়া যায়। তাই দুই কক্ষে একই পদ্ধতির ব্যবহার বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

দুই কক্ষেই পিআর পদ্ধতির ব্যবহার একধরনের ‘একলাফে গাছের চূড়ায় ওঠার মতো’ হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশে এখনো অপরিণত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশের অনেক ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন না। তাঁরা তাঁদের নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্বের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন।

আমার এই আলোচনার প্রধান লক্ষ্য শুধু এটি নয় যে কোন কোন সংস্কার বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বরং তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে সংস্কারগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (এনসিসি) গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব হবে কি না।

আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলো অনেকগুলো সংস্কারের পক্ষে ঐকমত্য পোষণ করেছে, আবার কোনো কোনো সংস্কারে তাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। কিন্তু ঐকমত্য হলেও অনেকগুলো সম্মত সংস্কারের (যেমন ধারা ৭০, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত, নতুন তত্ত্বাবধান সংস্থা এনসিসির কার্যক্রম অব্যাহত থাকা) জন্য সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন।

বর্তমান সংবিধান অনুসারে, সংশোধনের জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, যা একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অসম্ভব। এর মানে, এই মূল সংস্কারগুলোর জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন হবে।

রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে এই সংস্কারগুলো আইনে পরিণত করা সম্ভব। জাতীয় নির্বাচনে কোনো একটি দল যদি দু-তৃতীয়াংশ সংসদীয় সিটে নির্বাচিত হয়, তবে তারা চাইলেও এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।

আবার দুই-তৃতীয়াংশ সংসদীয় সিট পাওয়া দল ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইলে সংস্কারগুলো পাস না করে সেগুলো এড়িয়ে যেতে পারে, যেমনটা হয়েছিল ২০১১ সালে।

সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে গঠিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’র অধীনে ২০০৯ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে, দুই-তৃতীয়াংশ সিটের ক্ষমতাবলে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংবিধানের মাধ্যমে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে প্রায় দেড় যুগ ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছিল।

তাই এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে অথবা ঐকমত্যের সনদ নিশ্চিত করতে হবে। তাতেও পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকারগুলোর কাছ থেকে এগুলো আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালিত হয় অনেকটা ‘অর্থ ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার’ উপায় হিসেবে। অল্প কিছু ভালো রাজনীতিবিদকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনীতিবিদেরা দেশের উন্নয়নের কথা বলেন শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা ক্ষমতায় থাকার জন্য।

দেশের উন্নয়ন বা নাগরিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি তাঁদের আসল উদ্দেশ্য থাকে না। তাই যে দলই ক্ষমতায় গেছে বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাবে, সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না যে তাদের হাতে এই সংস্কারগুলো বাস্তবে রূপ নেবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অরাজনৈতিক সরকার। অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসেছে মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে—গণহত্যার বিচার, কলুষিত রাজনীতির সংস্কার এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে। এই সরকার ক্ষমতায় এসেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।

কমিশনগুলো কয়েক মাস সময় নিয়েছে কোন কোন সংস্কার দেশের জন্য জরুরি, তা খুঁজে বের করতে। এখন জাতির কাছে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দৃশ্যমান। প্রতিটি দলীয় সরকারই তাদের দলীয় স্বার্থে অনেকগুলো সংস্কার কার্যকর করতে চাইবে না, সেটি মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মৌলিক সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সংসদীয় কমিটির’ কোনো কোনোটিতে বিরোধী দলের এমপি সভাপতিত্ব করবেন। কোনো মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব দেখা দিলে বা কোনো দুর্নীতি ধরা পড়লে, সরকারদলীয় সদস্যরা সেই মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন (আর্টিকেল ৭০ সংস্কার)।

প্রশ্ন হলো, কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে সরকার গঠন করলে তারা কি এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাইবে? বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলে, তারা এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাইবে না। একই রকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এনসিসি প্রস্তাব করেছে, যা বাস্তবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার বাস্তবায়ন করতে চাইবে না।

তাই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’–এর বাস্তবায়ন হলো এনসিসি সংস্কার প্রক্রিয়ার একটি কার্যকর ফলাফল। সে জন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বা (মূল রাজনৈতিক দলগুলোর) ঐকমত্য সনদ (জুলাই সনদ) প্রকাশের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করতে হবে—যা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এত দিনের প্রচেষ্টার একটি প্রতিফলন।

অন্যথায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত এতগুলো কমিশনের এত দিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

এটি অনস্বীকার্য যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অর্জন হলো অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত করা। যেকোনো কারণেই হোক, এই সরকার এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি; বরং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের তুলনায় সরকারের অর্জন অনেক কম।

গণহত্যার বিচারেও দৃশ্যমান কোনো অর্জন এখনো নেই। মানুষ জানে, জুলাইয়ের গণহত্যার বিচার একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। অবশ্য সে ক্ষেত্রে সরকার অন্তত একটি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে।

যদিও অনেকেই মনে করেন এ ক্ষেত্রে আরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারত। সর্বোপরি এই মুহূর্তে সংস্কার এবং নির্ভরযোগ্য নির্বাচনই হতে পারে এই সরকারের অন্যতম অর্জন—যদি সরকার এ দুটি কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয়।

* ড. নুসরাতে আজীজ, গবেষক ও একাডেমিক

https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-09-07%2Ffqzfvyzt%2FScreenshot-2025-09-07-184404.jpg?rect=0%2C15%2C913%2C609&w=622&auto=format%2Ccompress&fmt=avif

No comments

Powered by Blogger.