গাজায় সংঘাত বন্ধে ‘প্রধান বাধা’ নেতানিয়াহু, অভিযোগ ইসরায়েলি নাগরিক সংগঠনের
সংগঠনটির নাম হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম। গতকাল শনিবার তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাতারকে লক্ষ্যবস্তু করে যে হামলা চালানো হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না এবং এটাই প্রমাণিত হয় যে জিম্মিদের ফেরানো ও সংঘাত বন্ধে একটিই বাধা রয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যখনই (যুদ্ধবিরতির) চুক্তি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছায়, নেতানিয়াহু তা নস্যাৎ করে দেন।’
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট করেছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাতে এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা নস্যাৎ হওয়ার জন্য হামাসকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, কাতারে অবস্থান করা হামাস নেতাদের হত্যা করা গেলে সংঘাত বন্ধ হবে। গাজার বাসিন্দাদের নিয়ে হামাসের ওই নেতাদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নেতানিয়াহুর এই অভিযোগকে একটি ‘অজুহাত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিম্মিদের মুক্তি করতে ব্যর্থ হয়ে এখন এসব অভিযোগ তুলছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর উদ্দেশ্য, সংঘাত থামাতে আরও সময়ক্ষেপণ করা এবং ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা। এই সময়ক্ষেপণের ফলে গাজায় বন্দী জিম্মিদের জীবন আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় প্রায় আড়াই শ জনকে। তাঁদের মধ্যে এখনো ৫০ জন গাজায় রয়েছেন। ওই হামলার পর ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই সময়ে উপত্যকাটিতে প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই জিম্মিদের মুক্ত করতে ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায়ও তেল আবিবে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার ইসরায়েলি। সেখানে সংঘাত বন্ধ এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি গত মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানানো হয়।
সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েলে রুবিও
গাজায় ২৩ মাসের বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। গত মাস থেকে আবার গাজা নগরী দখলে তীব্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে আজ রোববার ইসরায়েলে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। দোহায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করার পর এই সফর করলেন রুবিও।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ কাতার। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সঙ্গেও জড়িত রয়েছে দেশটি। শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের রুবিও বলেন, কাতারে হামলা নিয়ে ‘খুশি’ নন ট্রাম্প। তবে এ হামলার জন্য ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসবে না। গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার প্রভাব নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করবে।
ইসরায়েলের গিয়ে আজ নেতানিয়াহুর সঙ্গে জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়াল ভ্রমণের কথা রুবিওর। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের গবেষক ব্রিয়ান কাটিউলিস বলেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলকে রুবিও চাপ দেবেন বলে মনে হয় না।
গাজার দিকে ‘ফ্লোটিলা’
ইসরায়েলের হামলা ও অবরোধের কারণে গাজায় ত্রাণের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবরোধের বিরুদ্ধে এবং উপত্যকাটিতে ত্রাণ সরবরাহ করতে শনিবার তিউনিসিয়া থেকে নৌযানের বহর নিয়ে রওনা দিয়েছেন ৪০ দেশের অধিকারকর্মীরা। এই বহরকে বলা হচ্ছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বা জিএসএফ। এই বহরে ৪০টির বেশি নৌযান ও ৫০০ থেকে ৭০০ জনের মতো অধিকারকর্মী রয়েছেন।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, ওই অধিকারকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য রিমা হাসান। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তার জন্য আমাদের সরকারগুলো দায়ী।’ জলবায়ু নিয়ে কাজ করা সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও জিএসএফকে সমর্থন জানাচ্ছেন।
এ আগে গত সপ্তাহে ফ্লোটিলার দুটি নৌযান তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে নোঙর করা অবস্থায় হামলার শিকার হয়। নৌযান দুটি হলো ‘ফ্যামিলি’ ও ‘আলমা’। অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, ওই নৌযানগুলোর একটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এই হামলার সঙ্গে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
![]() |
| ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি |

No comments