শতাধিক এনজিওর চিঠি: গাজায় মানবিক সহায়তাকে ‘অস্ত্রে’ পরিণত করছে ইসরাইল
এই চিঠিতে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, সেভ দ্য চিলড্রেন-সহ অন্য সংস্থাও স্বাক্ষর করেছে। ওদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, গাজায় পর্যাপ্ত সহায়তা না পৌঁছানোর জন্য দায়ী জাতিসংঘ ও অন্য ত্রাণ সংস্থার অব্যবস্থাপনা। কিন্তু অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল খাদ্য ও সহায়তা পৌঁছানোর প্রতিটি ধাপে অসংখ্য ব্যুরোক্রেটিক ও বাস্তব বাধা সৃষ্টি করেছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্ধমান পণ্য জট কমানোর পরিবর্তে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ডজন ডজন এনজিওর জীবনরক্ষাকারী পণ্য আনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটা করেছে এই বলে যে তারা ‘সহায়তা পৌঁছানোর অনুমোদিত সংস্থা নয়’। শুধু জুলাই মাসেই এভাবে ৬০টির বেশি আবেদন নাকচ হয়েছে।’ ইসরাইলের প্রবাস ও ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, অনুমোদনের জন্য আবেদন করা ১০টি এনজিওর কাজের অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা যখন অনাহারের মুখে, তখন এই বাধাগুলো জর্ডান ও মিশরের গুদামে কোটি কোটি ডলারের খাদ্য, ওষুধ, পানি ও আশ্রয়সামগ্রী আটকে রেখেছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অনেক সংস্থা কয়েক দশক ধরে গাজায় কাজ করছে। কিন্তু মার্চে কার্যকর হওয়া নতুন এনজিও নিবন্ধন নীতির কারণে তারা সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রবাস মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন আন্তঃমন্ত্রণালয় দল গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে কার্যরত আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নিবন্ধন দিতে অস্বীকার করতে পারে, যদি তারা বা তাদের সদস্যরা গত সাত বছরে ইসরাইল বয়কটের আহ্বান জানিয়ে থাকে; অথবা যৌক্তিকভাবে অনুমান করা যায় যে তারা ইসরাইলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মেনে না নেয়; বর্ণবাদে উসকানি দেয়; ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম সমর্থন করে; বা ইসরাইল রাষ্ট্রকে অগ্রহণযোগ্য করার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে হলোকাস্ট অস্বীকার বা ৭ অক্টোবরের হামলার নৃশংসতা অস্বীকার করাও বাদ দেয়ার কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোকে তাদের ব্যক্তিগত দাতা ও ফিলিস্তিনি কর্মীদের সংবেদনশীল তথ্য জমা দিতে হবে- যা অনেক দেশের আইনে বেআইনি।
হারেৎজকে সূত্র জানিয়েছে, অনেক স্বাক্ষরকারী সংস্থা অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে, কেবল সহায়তামুলক বিতরণ ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনও বৃহত্তর ইসরাইলি কৌশলের অংশ। এর লক্ষ্য ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেয়া। ফাউন্ডেশন ও ইসরাইলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ সহায়তাকে বাধাগ্রস্ত করা, ফিলিস্তিনি অংশীদারদের বাদ দেয়া এবং বিশ্বাসযোগ্য মানবিক সংস্থাগুলোর পরিবর্তে রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য পূরণের কাঠামো তৈরি করছে। স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলো রাষ্ট্র ও দাতাদের আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা ইসরায়েলকে বাধা, বিশেষ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া, তুলে নিতে চাপ দেয়। এনজিওগুলোকে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে বা কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে বাধ্য না করে সহায়তা পৌঁছাতে দেয় এবং স্থলপথে সাহায্য সরবরাহের জন্য অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে সীমান্ত উন্মুক্ত করে।
জার্মানির এক মানবিক সংস্থার পরিচালক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেন, এই চিঠি এসেছে হতাশা থেকে। তিনি জানান, মার্চ থেকে এই সংস্থাগুলো পর্দার আড়ালে কূটনীতি চালিয়ে আসছে নতুন বিধিনিষেধে সৃষ্ট সংকট সমাধানের জন্য। তিনি বলেন, এখন আমরা দেখছি এক ডজনের মতো ইউরোপীয় দেশ এ বিষয়ে কথা বলেছে। আর এতে একটি গতি তৈরি হয়েছে।

No comments