শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, তবে তার ত্যাগ স্বীকার করি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা নন, তবে আমরা স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা এবং ত্যাগ স্বীকার করি। তিনি বলেন, তার শাসনামলের জাতীয় ট্র্যাজেডিকেও স্মরণ করি। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

পোস্টে নাহিদ লেখেন, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের একটি ঔপনিবেশ রাজ্যে পরিণত হয়। তার সময়েই ১৯৭২ সালে গণবিরোধী সংবিধান আরোপিত হয় এবং লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা ও একদলীয় বাকশাল একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির অন্তরালে মুজিব পূজা ও মুক্তিযুদ্ধ পূজা একটি রাজনৈতিক ভক্তি হিসেবে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। অত্যাচার, লুটপাট করার পাশাপাশি নাগরিককে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এটি গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে আধুনিক জমিদারি ছাড়া কম কিছুই ছিল না। তবুও মুক্তিযুদ্ধ ছিল সমগ্র জাতির সংগ্রাম। কয়েক দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে তার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে জবাবদিহিতাহীন শাসন এবং মুজিবীয় নামের আড়ালে দুর্নীতি ও দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দিয়েছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের জনগণের বিদ্রোহ এই জমিদারিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কোনো ব্যক্তি, পরিবার, মতাদর্শকে আর কখনো নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে বা বাংলাদেশের ওপর ফ্যাসিবাদ আরোপ করতে দেয়া হবে না। জাতির পিতা অভিধাটি ইতিহাসের কোনো অংশ নয়, বরং রাষ্ট্রকে সংকুচিত করে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর হাতিয়ার। বাংলাদেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান, আর কোনো একক ব্যক্তি এটির মালিকানা দাবি করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধ নামে মুজিববাদ একটি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ। আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, ফ্যাসিস্ট আদর্শের বিরুদ্ধে। মুজিববাদ ফ্যাসিবাদ ও বিভাজনের একটি আদর্শ। এর মানে হলো জোরপূর্বক গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করা। মুজিববাদ মানে- ইসলামোফোবিয়া, সাম্প্রদায়িকতা এবং সংখ্যালঘুদের ভূমি দখল। এর মানে- বিদেশি শক্তির কাছে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিক্রি করা। ষোলো বছর মুজিবকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল অস্ত্র হিসেবে। আর এই মতবাদের আড়ালে ছড়িয়েছিল গুম, খুন, লুটপাট ও গণহত্যা।

মুজিববাদ একটি আস্ত বিপদের নাম উল্লেখ করে এনসিপি’র এই নেতা বলেন, এটিকে পরাজিত করার জন্য রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকল নাগরিকদের জন্য আমাদের সংগ্রাম হলো একটি প্রজাতন্ত্র, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যেখানে কোনো দল, বংশ, নেতা জনগণের ওপরে দাঁড়াবে না। বাংলাদেশ কারও সম্পত্তি নয়, এটা গণপ্রজাতন্ত্র।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.