‘তারা কেবল হাড্ডিসার’

গাজার চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, শিশুখাদ্যের তীব্র সংকটের কারণে শত শত শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরাইল যেহেতু অবরুদ্ধ উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, তাই এই সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আহমাদ আল-ফাররা জানান, তাদের ওয়ার্ডে এক সপ্তাহের মতো শিশুদের দুধ মজুত আছে। নবজাতকদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ ফর্মুলা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে তিনি সাধারণ ফর্মুলা রেশনিং করে শিশুদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। ডা. আহমাদ আল-ফাররা বলেন, পরিস্থিতি বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই। এখন যা মজুত আছে, তা এক সপ্তাহ চলবে। অথচ হাসপাতালের বাইরেও অনেক শিশু আছে যাদের জন্য কোনো দুধ নেই। এটি একেবারে ধ্বংসাত্মক। ইসরাইল গাজায় খুব সীমিত সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে। বিতর্কিত মার্কিন-ইসরাইল সমর্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে যে খাদ্য সহায়তা আসে, তাতে শিশুখাদ্য থাকে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ২৭ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের মা হানাআ আল-তাওয়িল বলেন, তিনি নিজেই খাবার খেতে না পেয়ে বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে। ১৩ মাস বয়সী সন্তানের জন্য শিশুখাদ্য জোগাড় করাও তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, শিশু জন্মের পর থেকেই দুধ জোগাড়ের সমস্যা চলছে। অপুষ্টির কারণে এবং নিজের দুর্বলতার জন্য আমি বুকের দুধ দিতে পারিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হানাআর শিশুটি অপুষ্টিজনিত কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। তার আগের সন্তানরা এই বয়সে হাঁটতে ও কথা বলতে শুরু করেছিল, কিন্তু এই শিশু তেমন কিছু করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, ঘুমানোর সময় পাশে একটু রুটি রাখি। কারণ সে প্রায়ই ক্ষুধায় কেঁদে ওঠে। আমি দুঃখ আর ভয়ে থাকি- আমার সন্তানরা না জানি কখন না খেয়ে, না খেতে পেয়ে বা রোগে মারা যায়। গাজায় চলমান যুদ্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ৬৬ জন ফিলিস্তিনি শিশু অনাহারে মারা গেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার অভিযোগ এনেছে, যা তারা ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ইসরাইলের মানবিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ক সংস্থা দাবি করেছে, তারা শিশুখাদ্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহে ১৪০০ টনের বেশি শিশুখাদ্য গাজায় পাঠানো হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা নিজেরা শিশুখাদ্য নিজেদের লাগেজে করে গাজায় নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। একবার, এক মার্কিন চিকিৎসকের লাগেজ থেকে ১০টি শিশুখাদ্যের কৌটা ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জব্দ করে নেন। ডা. ডায়ানা নাজ্জাল একজন ফিলিস্তিনি-জার্মান চক্ষু চিকিৎসক। তিনি ওই চিকিৎসকের ব্যাগ গুছিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেন, ওই দুধগুলো ছিল অপরিণত শিশুদের জন্য। একজন অপরিণত শিশুর দুধের কৌটা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য কী ধরনের হুমকি হতে পারে? তিনি আরও জানান, গাজায় ঢোকা অনেক চিকিৎসক তাদের লাগেজে চিকিৎসা সরঞ্জামের পরিবর্তে উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার যেমন প্রোটিন বার ও বাদাম নিয়ে আসছেন। গাজায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। বাকি জনসংখ্যা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মা যদি অপুষ্টিতে ভোগে বা বেঁচে না থাকেন, তবে শিশুরা বুকের দুধ পায় না, যার ফলে ফর্মুলা দুধের চাহিদা আরও বেড়ে যায়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.