ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের আবহে ‘অপারেশন সিন্ধু’ শুরু করল ভারত
ভারত সরকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইরানে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে থাকার জন্য গত কয়েক দিন ধরে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ইরানে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের তেহরানে ভারতীয় দূতাবাস এবং নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যারা এখনও আছেন তাদের সাহায্য ও নির্দেশনা প্রদানের জন্য জরুরি হেল্পলাইনগুলো চালু রয়েছে। সরকার ইরানি এবং আর্মেনিয়ান কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে। ১৫ জুনই, ইরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস সেখানে থাকা সকল ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে এবং গুরুত্বপূর্ণ আপডেট সংগ্রহের জন্য দূতাবাসের সোশ্যাল মিডিয়া অনুসরণ করতে বলে।
জম্মু ও কাশ্মীর সরকার দিল্লি থেকে তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য যে বাসের ব্যবস্থা করেছিল তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইরান থেকে ফিরে আসা কিছু ভারতীয় শিক্ষার্থী। কাশ্মীরের বাসিন্দা শেখ আফসা এনডিটিভিকে বলেন যে, বাসগুলোর অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে আরও ভালো পরিবহনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ ‘বিবেচনা করেছে’ এবং যথাযথ ডিলাক্স বাসের ব্যবস্থা করার জন্য জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করছে।
২০২২ সালে যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ভারত সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, অপারেশন গঙ্গার অধীনে ২২,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী এবং নাগরিককে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ১৪টি সহ ৯০টিরও বেশি ফ্লাইট পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়ার মতো পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে উড্ডয়ন করেছিল।
২০২৫ সালে, বিশ্ব আরেকটি সংকটের মুখোমুখি। এবার ঘটনাস্থল ইরান। ইসরাইলি বিমান হামলা এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা হাজার হাজার ভারতীয়কে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু ইউক্রেনের মতো এখানে একই স্থানান্তর পরিকল্পনা অনুসরণ করা অত্যন্ত কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। এর একটা কারণ হলো ভৌগোলিক অবস্থান। ইউক্রেনের সাথে বেশ কয়েকটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সীমান্ত রয়েছে এবং যুদ্ধের প্রথম দিকে এর পশ্চিম অংশগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ ছিল। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বাস বা ট্রেনে কাছাকাছি সীমান্তে যাতায়াত করা সহজ ছিল। সেখান থেকে কর্মকর্তারা তাদের নিরাপদ স্থানে যেতে সাহায্য করেছিলেন। ইরান থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সাথে পূর্ব সীমান্ত ভাগ করে নেয় ইরান, যার কোনওটিই ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সহজ রুট নয়। অপারেশন সিন্দুরের পর থেকে পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে এবং আফগানিস্তানে নিরাপদে প্রবেশ করা এখনও কঠিন। আরেকটি বিকল্প, আজারবাইজান, আন্তর্জাতিক ফোরামে খোলাখুলিভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, যার ফলে ভারতের বিকল্পগুলো আরও সীমিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে কেবল আর্মেনিয়া এবং তুর্কমেনিস্তানই সম্ভাব্য রুট হিসেবে রয়ে গেছে।
তবে, এই রুটেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সড়কপথে ভ্রমণ করতে হয়, তারপরই বিমানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। ১৯৯০ সালে, যখন ইরাক কুয়েত আক্রমণ করে, তখন ভারত সরকার সবচেয়ে বড় স্থানান্তরের কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেই বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে, প্রায় ১.৭৫ লক্ষ ভারতীয়কে বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এই প্রচেষ্টা এতটাই ব্যাপক ছিল যে, বেসামরিক বিমান সংস্থা কর্তৃক সর্বাধিক সংখ্যক লোককে স্থানান্তরিত করার জন্য এয়ার ইন্ডিয়া গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়।
সম্প্রতি, ২০২৩ সালে হামাসের সাথে সংঘর্ষের সময় ইসরাইল থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য অপারেশন অজয় শুরু করে ভারত। ২০২২ সালে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য অপারেশন গঙ্গা শুরু করা হয়েছিল। এই প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধনের জন্য সিনিয়র মন্ত্রীদের চারটি প্রতিবেশী দেশে পাঠানো হয়েছিল। এই অভিযানের মাধ্যমে ১৮,২৮২ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।
২০১৫ সালে, ইয়েমেনের সংঘাতের সময়, অপারেশন রাহাত চালু করা হয়েছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ৬,৭১০ জনকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেছিল, যার মধ্যে ৪,৭৪৮ জন ভারতীয় এবং ১,৯৬২ জন বিদেশী ছিল।
এর আগে, ২০১১ সালে, লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য অপারেশন সেফ হোমকামিং পরিচালিত হয়েছিল। এতে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং এয়ার ইন্ডিয়া উভয়ই জড়িত ছিল। বিমান ও সমুদ্র পথ ব্যবহার করে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। ১৫,০০০ এরও বেশি ভারতীয় নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার পর, অভিযানটি শেষ হয়।
সূত্র : ফার্স্টপোস্ট
No comments