তুমুল যুদ্ধ, ইসরাইলে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৮, ইরানে জ্বলছে তেলের ডিপো

ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। গত রাতে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এর মধ্যে হাইফা ও তেল আবিব শহর অন্যতম। এর ফলে ইসরাইলে কমপক্ষে ৮ জন নিহত হয়েছে। ইসরাইলে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া। সেখান থেকে প্রকৃত চিত্র পাওয়া খুব দুরূহ। এমনিতেই যুদ্ধকালীন কোনো প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও তা নিরপেক্ষ সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও কিছু মিডিয়া যে খবর দিচ্ছে, তাতে ইরানের পাশাপাশি ইসরাইলেরও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিবিসি সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের অনেক ভবনের ছবি প্রকাশ হয়েছে। সেসব মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ভয়াবহতার মাত্রা কী পরিমাণ তা ওইসব ছবিই স্পষ্ট করে বলে দেয়। তেল আবিব মেট্রোপলিটন এলাকায় বাট ইয়াম শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র একটি ভববে আঘাত করেছে। সরাসরি আঘাতে ওই ভবনটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

ইসরাইলের ইমার্জেন্সি সার্ভিস এমডিএ নিশ্চিত করেছে সেখানে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১০০ মানুষ। পক্ষান্তরে ইরানের বেসামরিক লোকজন, তেলক্ষেত্র ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর ফলে রাজধানী তেহরানে শাহরান তেলের ডিপোতে আগুন ধরে যায়। সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক প্রকল্পগুলোকে টার্গেট করেছে। এতে এখন পর্যন্ত ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, সেনাপ্রধান সহ শীর্ষ কমান্ডাররা নিহত হয়েছেন। গত দু’দিনে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৮০। আহত হয়েছেন ৮০০ মানুষ। এর মধ্যে আছে ২০টি শিশু।

এমন এক জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়ে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধের মীমাংসা করতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এবং পুতিন একমত হয়েছেন যে, এই যুদ্ধের ইতি ঘটতেই হবে।

ওদিকে আজ রোববার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইরান তা বাতিল করে দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইসরাইলের অব্যাহত হামলার মধ্যে কোনো সমঝোতার যৌক্তিকতা নেই। 

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তরে ইসরাইলের হামলা

ইসরাইল নিশ্চিত করেছে তারা ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে। এর আগে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই হামলার খবর দেয়। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তেহরানের একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

আইডিএফ বিবৃতিতে বলেছে, লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল ইরানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর, এসপিএনডি পারমাণবিক প্রকল্পের প্রধান কার্যালয় এবং আরও কিছু স্থান, যেখানে ইরানি সরকার তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গোপনে পারমাণবিক আর্কাইভ লুকিয়ে রেখেছিল।

উল্লেখ্য, ইরান যদিও তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে, তবুও তারা বারবার দাবি করে এসেছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।

ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, হামলায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রশাসনিক ভবনে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। ওই একই এলাকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ডিফেন্স ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্সের একটি দপ্তরেও আরেকটি হামলা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং সিএনএনের জিওলোকেট করা কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলার পরপরই ওইসব এলাকা থেকে ধোঁয়া উড়ছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.