ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি: আইএইএ

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলেছে, ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর পরও ‘আশপাশের এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির’ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। খবর বিবিসির।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আজ রোববার এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। এতে আরও বলা হয়, ‘ইরানের পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইএইএ তার পরবর্তী মূল্যায়ন জানাবে।’

গতকাল শনিবার রাতে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পরে ইরানও তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার বিষয় নিশ্চিত করে। তেহরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ‘অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশন অব ইরান’ (এইওআই) বলেছে, এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) লঙ্ঘন।

যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আদতে সেখানে তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করার মতো কোনো পদার্থ নেই।

ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ১২টি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের যে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় গতকাল শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমানগুলো হামলা চালিয়েছে, তার একটি ফোরদো। সেখানে ছয়টি বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান উড়ে গিয়ে মোট ১২টি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে ৩০ ‘টিএলএএম’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করা হয়েছে ইরানের নাতাঞ্জ আর ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায়। সেই সঙ্গে একটি বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান নাতাঞ্জে উড়ে গিয়ে দুটি বাংকার বাস্টার বোমা ফেলেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

গতকাল রাতে ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ইরানে হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পরে ইরানও তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার বিষয় নিশ্চিত করে। তেহরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ‘অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশন অব ইরান’ (এইওআই) বলেছে, এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) লঙ্ঘন।

যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আদতে সেখানে তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করার মতো কোনো পদার্থ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা বহনে সক্ষম। এ বোমা ‘বাংকার বাস্টার’ নামে পরিচিত। বি–২ বিমান থেকে এ বোমা ফেলে ইরানের ফর্দো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হতে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায়। এরপর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এর মধ্যে গতকাল চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে জড়িয়ে পড়ল তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রয়েছে  : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর প্রকাশ্যে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে আব্বাস আরাগচি জানান, ‘ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও এনপিটির গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।’

আব্বাস আরাগচি আরও জানান, নিজেদের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ ও জনগণকে রক্ষা করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রয়েছে ইরানের। 

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) লোগোসংবলিত একটি পতাকা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে উড়ছে
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) লোগোসংবলিত একটি পতাকা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে উড়ছে। ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.