যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল গার্ড’ কী, কখন এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটির লস অ্যাঞ্জেলেস শহর ও আশপাশের এলাকা। গত শুক্রবার থেকে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯২ সালের পর থেকে এই প্রথম ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করলেন দেশটির কোনো প্রেসিডেন্ট। সে বছর লস অ্যাঞ্জেলেসে শুরু হওয়া দাঙ্গা মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল। রডনি কিং নামের একজন কৃষ্ণাঙ্গ গাড়িচালককে মারধরের অভিযোগ থেকে চার শেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে খালাস দেওয়ার পর ওই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল।

ন্যাশনাল গার্ড কী

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একটি অংশ ন্যাশনাল গার্ড। কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও প্রেসিডেন্ট—দুজনের অধীনেই কাজ করে এই বাহিনী। ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা মার্কিন সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর রিজার্ভ (সংরক্ষিত) সেনাদের অংশ। খণ্ডকালীন ভিত্তিতে কাজ করেন তাঁরা। যুদ্ধ বা সহায়তা অভিযানের জন্য তাঁদের বিদেশে মোতায়েন করা হতে পারে। তবে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে ন্যাশনাল গার্ড।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলের (ওয়াশিংটন ডিসিসহ) নিজস্ব ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী রয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিতে পারেন। এই বৈশিষ্ট্যটি মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যান্য শাখা থেকে ন্যাশনাল গার্ডকে আলাদা করে তুলেছে।

আগে যেসব অঙ্গরাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিকবার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। করোনা মহামারির সময় কিছু অঙ্গরাজ্যে মাস্ক তৈরি করা, বিভিন্ন স্থাপনা জীবাণুমুক্ত করা এবং করোনা টেস্ট কিট তৈরিসহ নানা কাজে সহায়তা করেছিলেন এই বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার পর নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের পাঠিয়েছিল কয়েকটি অঙ্গরাজ্য।

কেন্দ্রীয়ভাবে মোতায়েনের ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের অনুরোধ ছাড়া প্রেসিডেন্টের নির্দেশে সরাসরি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘটনা বিরল। গতকাল রোববার ট্রাম্প ঠিক এই কাজটিই করেছেন।

১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি অঙ্গরাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি আলাদা সরকার গঠন করে। তখন ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সেনা মোতায়েন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তবে বিংশ শতাব্দীর আগপর্যন্ত বর্তমান রূপ পায়নি ন্যাশনাল গার্ড।

লিংকনের পর ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেননি। সে বছর আরকানস অঙ্গরাজ্যে একটি স্কুলে বর্ণবৈষম্য অবসানের সময় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল।

ন্যাশনাল গার্ডের তথ্যানুসারে, ১৯৬৭ সালে ডেট্রয়েট দাঙ্গার সময় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাহিনীটির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৬৮ সালে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যার পর এবং ১৯৭০ সালে নিউইয়র্কে ডাক পরিষেবা ধর্মঘটের সময় ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছিল।

ন্যাশনাল গার্ড না দিলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন অনেকে। তবে নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি বেশ আস্থা রয়েছে ট্রাম্পের। তিনি বলেছেন, এমনটা না করা হলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত।

লস অ্যাঞ্জেলেস ও এর আশপাশে এলাকায় এই বিক্ষোভ শুরু হয় গত শুক্রবার। গতকাল রোববার তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। এদিন রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। সড়ক অবরোধসহ গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সদস্যকে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের অনুরোধ সাপেক্ষে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট। তবে এবার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসমের অনুরোধ ছাড়াই বাহিনীটি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর এমন পদক্ষেপের বিরোধিতাও করেছেন নিউসম। তবে তা কানে তোলেননি ট্রাম্প।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ায় সহিংস, উসকানিমূলক দাঙ্গা মোকাবিলার জন্য ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর সিদ্ধান্তটি চমৎকার ছিল। আমরা যদি এমনটা না করতাম, তা হলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত।’

গভর্নর গাভিন নিউসম ও লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাসের সমালোচনা করে ট্রাম্প লেখেন, ‘চরম অযোগ্য গভর্নর গাভিন নিউসম ও মেয়র কারেন বাসের বলা উচিত ছিল, “ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আপনি খুবই অসাধারণ। আপনি ছাড়া আমরা কিছু করতে পারতাম না।” তবে তাঁরা আমেরিকা ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলাকে বেছে নিয়েছেন।”

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ দমনে গতকাল রোববার মোতায়েন করা হয় ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ দমনে গতকাল রোববার মোতায়েন করা হয় ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের। ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.