ঈদের দিন গাজায় ৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত: খাবার বিতরণে ইসরায়েলি বাগড়া, নিহত বেড়ে ৪২

ফিলিস্তিনের গাজায় একটি ভবনে বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সৈনিক নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। দখলদারদের সামরিক বাহিনী বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাতে দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যে শুক্রবার সকালে দক্ষিণের খান ইউনিসে ওই ঘটনা ঘটে। এ দিন গাজায় ঈদুল আজহা পালিত হয়।

নিহত দুই সৈনিকের নাম হলো- মাগলান কমান্ডো ইউনিটের সার্জেন্ট মেজর (রিজার্ভ) চেন গ্রস ও স্টাফ সার্জেন্ট ইয়োভ রাভার। তিনি ইয়াহালোম কম্ব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের সদস্য।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অন্য দুই সৈনিকের নাম পরে প্রকাশ করা হবে।

আইডিএফ-এর প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, সৈনিকরা সম্ভাব্য সন্ত্রাসী অবকাঠামো যেমন সুড়ঙ্গ খুঁজতে ভবনটিতে প্রবেশ করেছিল। ভবনটি বোমা দিয়ে ফাঁদ পাতা ছিল এবং বিস্ফোরণের ফলে সৈনিকদের উপর কংক্রিট ধসে পড়ে। যার ফলে সৈনিকরা নিহত এবং অন্যরা আহত হয়। যার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।

ঘটনাটি ঘটেছে খান ইউনিসের বানি সুহেইলা উপশহরে সকাল ৬টার কিছু পরে। ওই সময় আরও কয়েকটি স্থানে অভিযান চলছিল।

পৃথক ঘটনায় গাজা সিটির শেজাইয়া পাড়ায় মর্টার আঘাতে ৬৪৬তম প্যারাট্রুপার ব্রিগেডের একজন রিজার্ভিস্ট মাঝারি মাত্রায় আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

চার সৈনিকের মৃত্যুর পর আইডিএফ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন বলেছেন, কখনও কখনও গাজায় সম্ভাব্য সুড়ঙ্গ খুঁজতে ভবনগুলোতে প্রবেশ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এটি করতে গিয়ে বিস্ফোরক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করি। আমরা এই ঘটনার তদন্ত করব। 

ঈদের দিনের খাবার বিতরণে ইসরায়েলি বাগড়া, নিহত বেড়ে ৪২

ফিলিস্তিনের গাজায় ঈদুল আজহার দিনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছেন। গাজার চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাহায্য বিতরণের দায়িত্বে থাকা মার্কিন-সমর্থিত গ্রুপ ঈদের দিনের খাবার বিতরণ করতে পারেনি। তারা জানিয়েছে, তাদের সব কেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় নাসের হাসপাতালে ১৬টি মৃতদেহ পৌঁছে। উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে আরও ১৬টি, গাজা শহরের আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ৫টি এবং দেইর আল-বালাহ’র আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতালে আরও ৫টি মৃতদেহ পৌঁছেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু-আজৌম দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, গাজায় ঈদ এভাবেই হচ্ছে। সাধারণত আনন্দের সঙ্গে পালিত এই মুসলিম উৎসব এ বছর তাদের হারানোর বেদনা এবং অকল্পনীয় পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার একটি মর্মান্তিক স্মারক হয়ে উঠেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আহত একজন সাংবাদিক শুক্রবার মারা গেছেন। এর ফলে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ২২৬-এ পৌঁছেছে বলে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে।

শুক্রবার ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে গাজায় সাহায্য বিতরণের দায়িত্বে থাকা মার্কিন-সমর্থিত গ্রুপটি জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান খাদ্যের জন্য হাহাকার সত্ত্বেও তাদের কেন্দ্রগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় গাজার সব বাসিন্দা এখন দুর্ভিক্ষের হুমকির মুখে রয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত মাসে ইসরায়েল গাজায় কিছু সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিলেও তা পরিমাণে অপ্রতুল।

গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গত সপ্তাহে সেখানে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করে। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, মানুষের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর বোমা ফেলছে। এ কারণে তারা ঈদের দিন খাদ্য বিতরণ করতে পারেনি। সংস্থাটি দ্রুত খাদ্য বিতরণ করতে আগ্রহী। কিন্তু পুনরায় সাহায্যকেন্দ্র খোলার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি। তারা বলেছে, পরবর্তী বিতরণের বিষয়ে বিস্তারিত পরে ঘোষণা করা হবে। 

ইসরায়েলি সেনা। পুরোনো ছবি
ইসরায়েলি সেনা। পুরোনো ছবি

No comments

Powered by Blogger.