চলে গেলেন শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়া
জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। এর মধ্যে জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯টি বছর তিনি নিরবছিন্নভাবে কবর খননের কাজ করেছেন। মানুষের শেষ বিদায়ে হয়ে উঠেছেন ভরসার প্রতীক। শেষ ঠিকানার একজন নিপুণ কারিগর ছিলেন তিনি। কারও মৃত্যু সংবাদ কানে আসামাত্রই খুন্তি, কোদাল, ছুরি, করাত, দা, ছেনাসহ সহায়ক সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে যেতেন কবরস্থানে। মানুষের অন্তিম যাত্রায় একান্ত সহযাত্রীর মতো তিনি বাড়িয়ে দিতেন তার আন্তরিক দু’হাত। নিখুঁত সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম রয়েছে দুর্গম হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে। দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানিজমি বিক্রি করে বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছিলেন ঘোড়াটিকে। আদর করে নাম দিয়েছিলেন, ‘বাহাদুর’। এই ঘোড়ার পিঠে তিনি তুলে নিতেন তার যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই শেষ ঠিকানা সাজাতে মনু মিয়া ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রামে। ঘোড়াটিই যেন তার বয়সের বাধা অতিক্রম করে দিয়ে তাকে সচল রেখে চলেছিল। নানা জটিল রোগে কাবু হয়ে সমপ্রতি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। এ রকম পরিস্থিতিতে গত ১৪ই মে তাকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলার সময়ে নিঃসন্তান মনু মিয়ার সন্তানসম ঘোড়াটি বর্বরতার বলি হয়। তার প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যার ঘটনা মানবজমিন-এ ছাপা হলে দেশ জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। সমপ্রতি চিকিৎসা শেষে স্ত্রী রহিমা বেগমকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেও প্রিয় ঘোড়াটির শূন্যতা সব সময় অনুভব করছিলেন তিনি।

No comments