গাজার মানবিক সহায়তা বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই মাস। যার ফলে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে উপত্যকাটির লাখ লাখ মানুষ। মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ গাজাবাসীর ওপর নির্মম হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে ২০ লাখের বেশি গাজাবাসী চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। দিন দিন খাদ্য সংকট আরও তীব্র হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘসহ গাজায় কাজ করা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অমানবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া গাজার নারী ও শিশুরা। এ খবর দিয়ে অনলাইন সিএনএন বলছে, গত ১৮ মাস ধরে গাজাবাসীর ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে মার্চে তা আরও তীব্র হয়েছে। এক মাস ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির পর পুনরায় বর্বরতা শুরু করার ফলে গাজাবাসীর ওপর ইসরাইলের বর্বরতা বেড়েছে কয়েক গুণ। গত মাসে হামলার আগে গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার আদেশ দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন নতুন শর্ত আরোপ করেন তিনি। এর দায় দিয়েছে হামাসের ওপর। তেল আবিব বলেছে, হামাস মানবিক সহায়তার চালান আটকে দিয়ে তা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। তবে হামাসের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত দুই সপ্তাহে গাজার দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যাদের গাজা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। গাজা সিটির মুখপাত্র আসেম আল নাবীহ সিএনএনকে বলেন, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি উচ্ছেদ আদেশের পর গাজাবাসীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। তাদেরকে প্রধান সড়ক, পাবলিক পার্কেও থাকতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ময়লার স্তূপের কাছেও ঘেঁষতে দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ উচ্ছেদ আদেশের আগে গাজায় মাত্র ৪০ শতাংশ বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ছিল। যার পরিমাণ এখন আরও কমেছে। বর্তমানে পুরো গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে
গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় এক লাখ ৭৫ হাজার টন বর্জ্য জমেছে বলে অনুমান করেছেন আল নাবীহ। ইসরাইলের দ্বিতীয় ধাপের হামলা সীমাহীন যুদ্ধে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিন অংশের সমন্বয়ক জনাথন হোয়াইটঅল। বলেছেন, ক্ষুধা ও অপুষ্টির নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে গাজার মানুষ। কেননা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আর এটা গত দুই মাস যাবৎ চলছে। আটা বিতরণও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে, রান্নার গ্যাস ও আটার অভাবে গাজা জুড়ে ২৫টির মতো ভর্তুকি বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খাদ্য সংকট তীব্র হয়েছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশের জন্য প্রায় ৮৯ হাজার টন খাবার অপেক্ষা করছে। এদিকে গাজার অভ্যন্তরে তীব্র সংকটের ফলে খাদ্য মূল্য নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের তুলনায় এক ব্যাগ গমের আটার দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫০ শতাংশ। জাতিসংঘের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানির ক্ষেত্রে এখনো গুরুতর সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছে গাজার মানুষ। উপত্যকাটির দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার প্রতিদিন ছয় লিটার পানিও পাচ্ছে না। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির পর পানি সরবরাহে কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমানে তা পুনরায় ধসে পড়েছে। একদিকে বোমার শেল আরেকদিকে সীমান্তে খাদ্য সহায়তা আটকে দিয়ে গাজাবাসীকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে ইসরাইল। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বহু মানবাধিকার সংস্থা।

No comments