‘আমাগো কপালে ভালো খাবার দিয়ে ইফতারি করার ভাগ্য নেই’ by রিপন আনসারী

‘আমাগো মতন গরিব মানুষের কপালে ভালো খাবার দিয়ে ইফতারি করার ভাগ্য হয় না। ভাত আর বেগুন ভর্তা দিয়ে সেহরি খাইছি। ইফতারের কোনো আয়োজনই নেই। এক গ্লাস পানি এরপর শাক-ভাত দিয়েই রোজা ভাঙবো।’ ইফতারির আগ মুহূর্তে এমন কথা বলেন, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী-বাঠুইমুড়ি বেড়িবাঁধের বাসিন্দা বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম।

সরজমিন বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, কোনো বাড়িতেই ইফতারির বাড়তি কোনো আয়োজন নেই। বাঁধের দু’ধারে ৩ শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করে আসছে। তাদের বেশির ভাগ পরিবারই দিনমজুর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে রমজান মাসে ভালো-মন্দ ইফতার তাদের ভাগ্যে জোটে না। দীর্ঘদিন ধরেই রোগে-শোকে জর্জরিত আফজাল ফকিরের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল রমজানের প্রথম রোজার ইফতারির ন্যূনতম কোনো আয়োজন নেই। এ বিষয়ে ফাতেমা বেগম জানান, কয়েক বছর ধরে ভালো কোনো খাবার দিয়ে ইফতারি করার সৌভাগ্য হচ্ছে না তার। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় মেয়েকে নিয়ে দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চালান। সংসারে চাল ডাল লবণ কিনতেই হিমশিম খেতে হয়।
পাশের বাড়ির বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম বলেন, ইফতারি কি জিনিস স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সেটা বুঝি না। ডাল ভাত খেয়ে রোজা রেখেছি এবং পানি আর ভাত দিয়ে ইফতার করবো। একটা খেজুর কেনার মতো সামর্থ্য নেই। কষ্টের কথা কাউকে বুঝাতে পারবো না। রিকশা চালক সুমন বলেন, পরিবারে বৃদ্ধ মা, বোন ও স্ত্রী রোজা রেখেছে। সকাল থেকে সারাদিন রিকশা চালাতে পারি নাই। হাতে কোনো টাকা-পয়সাও নেই। তাই ইফতারি কেনার মতো সামর্থ্য না থাকায় নিয়মিত রান্না করা খাবার দিয়েই রোজা ভাঙতে হবে। তার বৃদ্ধা মা বেদেনা বেগম বলেন, অভাবের সংসারে কখনোই ভালো কোনো খাবার দিয়ে ইফতার করতে পারি না। প্রথম রোজায় অনেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু ভালো মন্দ খাবার দিয়ে ইফতার করে। কিন্তু আমার কপালে তা নেই। মেয়ে এবং নাতনি নিয়ে কোনোরকমে ডাল ভাত খেয়েই রোজা ভাঙবো।
কাজলী বেগম বলেন, ছয় ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে বড় সংসার আমার। স্বামী মারা গেছে চার বছর আগে। পরিবারের কয়েকজনই রোজা। ব্রয়লার মুরগির দোকান থেকে পা, গিলা, মাইটা কিনে এনে তা রান্না করে রাতে সেহরি খাই, সেহরি খেয়েছি। ইফতারের খাবার বলতে যা বোঝায় তার কোনো কিছুই কেনার মতো সামর্থ্য নেই। দু’বেলা খাবার জোগাড় করাই যখন কঠিন তখন রমজান মাসে ইফতার নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখি- সেটাই বড় কথা। আজ মাছ মাংস কেনার অর্থ নেই তাই ইফতারির জন্য শুধু খিচুড়ি রান্না করেছি। নুরুল্লাহ বলেন, বাড়িতে ছোট-বড় সবাই রোজা রেখেছি। ইফতারির জন্য বাড়তি কোনো খাবার কেনার মতো সামর্থ্য নেই। সাধারণ যে খাবার প্রতিদিন খেয়ে থাকি সেটা দিয়েই ইফতার করবো।
এদের মতো প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারই অসহায়। প্রথম রমজানে ইফতারের বাড়তি কোনো আয়োজন কোনো পরিবারের মাঝেই দেখা যায়নি। প্রতিনিয়ত তারা তিন বেলা যা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে তা দিয়েই ইফতার ও সেহরি করছেন। এলাকার অনেকেই জানান, বেশির ভাগ পরিবারই ভালো নেই। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি অর্থকষ্টে জীবনযাপন করছেন। পকেটে টাকা না থাকলেও কারও কাছে লোকলজ্জায় হাত পাততে পারছেন না। তাদের এই কষ্টের কথা শুধুমাত্র ঘরের লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.