জাতিসংঘে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুললো কাতার

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের মাথাব্যথার শেষ নেই। অথচ ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচি, তাদের হাতে কী পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে- সে বিষয়ে বিশ্ব মুখে কুলুপ এঁটেছে। যেমন গাজার নিরীহ মানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়ে গাজাকে ‘নির্জন দ্বীপ’ বানিয়ে ফেললেও তাতে ইসরাইলিদেরই আত্মরক্ষার অধিকার দেখে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। এমনই এক পরিস্থিতির মুখে ইসরাইলের সব পারমাণবিক স্থাপনার বিষয়ে আঙ্গুল তুলেছে মুসলিম দেশ কাতার। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কড়া বার্তা দিয়েছে। বলেছে, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর অধীনে ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে। একই সঙ্গে ইসরাইলকে যুক্ত হতে হবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক চুক্তিতে। ভিয়েনায় জাতিসংঘের অফিস ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে কাতারের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি জসিম ইয়াকুব আল হাম্মাদি দৃঢ়তার সঙ্গে তার বিবৃতিতে এসব দাবি তুলে ধরেছেন। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দখলীকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের পরিস্থিতি এবং ইসরাইলের পারমাণবিক সক্ষমতার বিষয়ে ভিয়েনাতে আমলে নেয় আইএইএ বোর্ড অব গভর্নরস। সেখানে অধিবেশনে কাতারের অবস্থান তুলে ধরেন জসিম ইয়াকুব। তিনি বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, আইএইএ এবং ১৯৯৫ সালের নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির রিভিউ কনফারেন্স-এর অধীনে নিজেদের প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন। এসব পরিষদ বা সনদের অধীনে ইসরাইলকে আইএইএ’র নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে আহ্বান জানায়। তিনি আরও বলেন, এসব রেজ্যুলুশনের ইসরাইলকে এনপিটি’তে যুক্ত হতে আহ্বান জানায়।  

তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ব্যতীত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এনপিটি’র অংশীদার। তারা সবাই আইএইএ’র নিরাপত্তা চুক্তি কার্যকরভাবে মেনে চলে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইল তার আগ্রাসী নীতি অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে আছে শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনের বাস্তুচ্যুত করার আহ্বান। বিভিন্ন শহরে এবং পশ্চিমতীরে শরণার্থী শিবিরে তীব্র সামরিক অভিযান। গাজায় মানবিক সহায়তা আটকে দেয়া। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ। হাম্মাদি আরও বলেন, গত সপ্তাহে ২০২৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলুশনের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে কাতার। এতে জাতিসংঘ, অন্য আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে ইসরাইলের অবস্থান পরিষ্কার করে জানতে চাওয়া। 

গাজায় বিদ্যুৎ বন্ধ

গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে ক্রমাগত চাপ দিতে শুরু করেছে ইসরাইল। এ লক্ষ্যে রোববার থেকে উপত্যকাটির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ২০ লাখের বেশি জনসংখ্যার উপত্যকাটিতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দেয়ার এক সপ্তাহ পর বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিলেন ইসরাইলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন।
এক ভিডিও বিবৃতিতে কোহেন বলেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এবং যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে গাজা থেকে হামাসকে হটাতে আমরা সকল উপায় অবলম্বন করবো। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্তটি মূলত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা, বিদ্যুৎ না থাকলে মাটির গভীর থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। ইসরাইলের সরকার বলছে, তারা পানি সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়নি।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই গাজার অনেকাংশে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। এরপর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর ও সৌর প্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসরাইল গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে কাতারের দোহায় গিয়েছে ইসরাইলের একটি প্রতিনিধিদল। তেল আবিব চাচ্ছে হামাস যেন যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাড়ানোর জন্য সম্মত হয়। কিন্তু হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় আগ্রহী। আলোচনায় অবশিষ্ট জিম্মি এবং বন্দিদের মুক্তি, ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.