এরদোগান গণবিক্ষোভ সামাল দেবেন কীভাবে?

তুরস্কে ২০১৬ সালে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টা সফলতার সঙ্গে ব্যর্থ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। কিন্তু ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে যে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তাকে কি তিনি দমিয়ে রাখতে পারবেন! এ নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন বিদেশি মিডিয়া মন্তব্য করা শুরু করেছে। ইকোনমিস্ট তো জানিয়ে দিয়েছে, তুরস্কের গণতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে। সেখানে গণতান্ত্রিক ধারা নেই। প্রেসিডেন্ট এরদোগান যা বলছেন, তাই যেন নিয়ম। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় অন্যচোখে দেখা যেতে পারে। তা হলো, গাজা সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার তিনি। বলা যায়, মুসলিমদের সাহস হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু নিজের দেশের ভেতরে যে পরিস্থিতি তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করার পর মঙ্গলবার সপ্তম রাতের মতো প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে নেমে আসেন রাজপথে। বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। তারপরও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। কিন্তু তাদেরকে মঙ্গলবার সতর্ক করেছেন এরদোগান। তিনি বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভের সূচনা হয় গত সপ্তাহের বুধবার। ওই দিন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলে তার সমর্থকরা রাজপথে আন্দোলন শুরু করেন। 

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দমনে পুলিশের শক্তি প্রয়োগ ও ব্যাপক ধড়পাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে। একরেম ইমামোগলু দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। এরদোগান বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের  কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন। মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে মিছিলে শামিল হন। তারা সরকার পতনের দাবিতে  স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের হাতে থাকা ব্যানার ও পতাকায় এরদোগান সরকারের পতনসংক্রান্ত দাবির কথা লেখা ছিল।

 শিক্ষার্থীদের মিছিল যাতে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে না ওঠে, সে জন্য ইস্তাম্বুলে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে যেকোনো বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। মূলত উস্কানি প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে বিক্ষোভ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় বেশ কিছু সড়ক। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে পরিচয় আড়াল রাখতে মুখে মাস্ক পরে বহু শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন। প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে সিটি হলের সামনে বিক্ষোভ করেছে। আগামী শনিবার শহরে বড়সড় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। সপ্তাহ জুড়ে রাজধানী আঙ্কারা, বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে জানান, গত বুধবারের পর থেকে ‘বেআইনি’ বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ১ হাজার ৪১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা রাজপথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করবেন, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের জাতীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানা যাবে না। পুলিশ সদস্যদের ওপরও আঘাত মেনে নেয়া হবে না। ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একরেম ইমামোগলু ইতিমধ্যে  প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজ দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকের সমর্থন আদায় করেছেন। মুক্ত হলে তিনি যে এরদোগানের বিপক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.