রড ও সিমেন্টের দাম কমায় শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা by আরিফুল ইসলাম
গ্রীন রোডে আমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক স্বপন বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রড-সিমেন্টের বাজারে প্রভাব পড়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বেশির ভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন। রড-সিমেন্টেরও বড় একটা অংশ সরকারি প্রকল্পের কাজেই ব্যবহার হয়। এজন্য আগের থেকে বিক্রি এখন অনেক কম। জননী এন্টারপ্রাইজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, স্থায়ী কোনো সরকার না আসা পর্যন্ত স্থিতিশীলতা বা পরিবর্তন হবে না। আগের থেকে বিক্রি কমেছে। নতুন কোনো নির্বাচিত সরকার এলে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, সিমেন্ট খাতের উৎপাদন সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দেশের বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। যেসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে সেগুলো গত ৫ই আগস্টের পর বন্ধ রয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সিমেন্ট খাতে। এ ছাড়া রডের দাম টনপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা কমেছে। রডের পাশাপাশি সিমেন্টের দামও বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। চাহিদা না বাড়লে রড-সিমেন্টের দাম আরও কমবে বলে আশঙ্কা মিলমালিকদের। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অবকাঠামো খাত সবচেয়ে নাজুক সময় পার করছে। চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতির পাশাপাশি বিগত ছয় মাসে নতুন কোনো মেগা প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি। আগের প্রকল্পগুলোয় বিক্রি করা পণ্যের দামও মেটাতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলছে না। আবার সরকারি প্রকল্পের বিল আটকে থাকায় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে। এদিকে গত এক বছর ডলারের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বাড়তি দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অথচ দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদকরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত ইস্পাত শিল্পকে নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া না হলে এর সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই মাসে কোম্পানি ভেদে ইস্পাতের বিক্রি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি সিমেন্টের বিক্রি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করছেন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ থাকাকে। কারণ, দেশের মোট ১ লাখ ২০ হাজার টন উৎপাদিত ইস্পাতের প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় সরকারি প্রকল্পে। সামপ্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় সিমেন্টের চাহিদা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। সিমেন্ট খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা কম থাকায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দাম আরও নিম্নমুখী হতে পারে। সিমেন্ট ও ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সরকারের বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন শিল্পেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশের কোম্পানিগুলোর রড উৎপাদনে সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ টন। বছরে সর্বোচ্চ চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই ব্যবহার হয় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে। বাকি ৪০ শতাংশ বেসরকারি ও ব্যক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার হয়। বর্তমানে চাহিদা কমে ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা কমেছে সরকারি প্রকল্পে। এখানে রডের চাহিদা ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসায় দামও ধারাবাহিকভাবে কমছে।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. শামসুল আলম খান বলেন, আমাদের স্টিল শিল্পের ভৌত অবকাঠামোকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের উপর বড় ধরনের চাহিদা থাকে রড শিল্পে। প্রকল্পগুলোর কাজের মন্থরগতি ও স্থবিরতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আগের তুলনায় ব্যবসা- বাণিজ্য অনেকটা কমেছে।

No comments