নাগরিক সমাজের হুঁশিয়ারি

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কসহ ডিবিতে আটক অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। মঙ্গলবার দুপুরে ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’- শীর্ষক এক আলোচনায় এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, এ দেশকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। আমি নিজে বিব্রতবোধ করছি। স্বাধীনতার পর ৭১’র মতো সহিংসতা আর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হবে- এটা ভাবনায় ছিল না। যেটা এখন হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। অথচ স্বাধীনতার চেতনাই হচ্ছে- বৈষম্যহীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এটা করতে না পারার দায় আমাদের নিতে হবে।

আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশ-এর (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, ইতিহাসের ১৯৫২, ১৯৬৯, ৭১ ও স্বাধীনতা পরবর্তীতে তরুণ প্রজন্মরাই এগিয়েছিল। আজকে কোটা বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরাই এগিয়ে এসেছে। ইতিহাসই বলে দেয়, তরুণ-শিক্ষার্থীরা হচ্ছে- অজেয় শক্তি। আমরা আশা করেছিলাম সেটি সরকার বিবেচনায় নেবে। কিন্তু তরুণদের ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখা হয়েছে। আন্দোলন ঘিরে সবকিছুর দায় সরকারকে নিতে হবে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা ডিবি কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাদের আটক করে আনা হয়েছে, ধরে নেয়া হয়েছে, সেটা বন্ধ করা ও তাদের যদি নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হয়, তাহলে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে আরও কঠোর আন্দোলনে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো।  তিনি বলেন, আজই ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই কর্মসূচি স্থগিত করে সভা থেকে এই আল্টিমেটাম দেয়া হলো। অনুষ্ঠানে ডিবি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেন, এমন ধারণা থেকে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিবি প্রতিনিধি যারা আছেন, আপনারা আপনাদের অফিসকে আমাদের এই বক্তব্য জানাবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি ঘুমাতে পারি না। কালকে ফোন এসেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে গেছে ভাটারা থানা পুলিশ। অত্যাচার করা হয়েছে। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটা জায়গায় ব্লক রেইড করা হয়েছে। কারফিউ দিয়ে হেলিকপ্টারের আলো ফেলে চারদিকে ঘিরে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থী, তরুণ-কিশোরদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে কি না। তিনি বলেন, আমি ঘুমাতে পারি না, কারণ যখন আমি শহীদ মুগ্ধের গল্প পড়ি। যে ছেলেটি আন্দোলনে গিয়েছিল বিস্কুট আর পানি দেয়ার জন্য। সবাইকে বলছিল কারও পানি লাগবে কি না। এ রকম একটা ছেলেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি ঘুমাতে পারি না, যখন দেখি টিয়ারগ্যাস বাসায় ঢুকছে সেটি বন্ধ করতে গিয়ে তখন ১১ বছরের ছেলেটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ছয় বছরের শিশু মারা গেছে। চার বছরের শিশু বারান্দায় মারা গেছে। শিশু-কিশোরদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটা বর্ণনাও বাড়িয়ে বলছি না, ২৬৭ জন মারা গেছে। কালকে একটা দোকানে জিনিস কিনতে গিয়ে শুনছিলাম, স্যার হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, আমরা বিশ্বাস করি, কিন্তু আমরা এই সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছি না।

ঢাবি’র এই অধ্যাপক বলেন, আজকে যখন এইরকম হত্যাকাণ্ডের ক্ষত আমাদের বুকে, তখন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, তখন আমাদের মনে প্রশ্ন উঠছে, এই সরকার কি তরুণ-ছাত্র-যুবকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে? এটা কি কোনো অধিকৃত ভূমি, এটা কি গাজা স্ট্রিট? এটা কি কাশ্মীর? এই দেশে যাদের গায়ে পুলিশের পোশাক দেখছি, তারা কি ভিন্ন দেশি বাহিনী? এরা কি আমাদের ট্যাক্সের বিনিময়ে চলে না? এরা কি আমাদের অর্থে লালিত না, এই অস্ত্র কি আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেনা না?

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা নাকি আপনি বোঝেন! দুঃখিত, আমার কাছে মনে হয় স্বজন হারানোর বেদনা আপনি বোঝেন, তবে সেটি নিজেরটা। নইলে এই শত শত মানুষকে যারা হত্যা করেছে, ৭০/৮০ জন শিশু-কিশোর-ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে তাদের বিচার করা হয়নি, ধরেননি।

আসিফ নজরুল বলেন, আজকে ছয়টা শিশুর ছবি যখন বের হয়, ফেসবুকে দেয়া হয়, বর্তমান সরকারে যারা আছেন, তাদের কারও নাম নিচ্ছি না। আপনাদের বুকে তো কোনো ক্রন্দন দেখি না, কষ্ট দেখি না। সারাক্ষণ স্থাপনা স্থাপনা স্থাপনা কষ্ট। এই সব স্থাপনা তো আমাদের টাকায় করা। আমরা কষ্ট পাবো, যন্ত্রণায় ভুগবো। আপনারা তো মেট্রোরেলে চড়েন না। আপনারা তো রাস্তায় যাবার সময় মানুষকে বেআইনিভাবে আটকে রাখেন। আজকে এই ছয়টা ফুল যে ঝরে গেছে, ১৯ অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ মারা গেছে, বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। একটা মাকে দেখলাম কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় আছড়ে পড়ছে, আমার ছেলেটা তো কোনো আন্দোলনে ছিল না। কিন্তু বাজার করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। এই সরকার কি সমস্ত তরুণকে গ্রেপ্তার করবে?

আসিফ নজরুল বলেন, আজকে ৭০-৮০ বছরের মন্ত্রীরা, ছাত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। আমাদের তরুণ সমাজের একটা অংশকে ক্রীতদাস, আরেকটা অংশকে খুনি বানানো হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াতে যারা সরাসরি জড়িত শিক্ষার্থীরা তাদের বিচার চেয়েছে। শিক্ষার্থীরা তো সরকার পতনের ডাক দেয়নি, চায়নি নতুন নির্বাচন। তাহলে মানছেন না কেন? নিজে যদি খুনি না হন তাহলে খুনিদের বিচার কেন করছেন না? সমস্যা কি? তিনি বলেন, আজকে আবু সাঈদের বুকে গুলি করে হত্যা করার পর এজহারে লেখা হয়েছে আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেলে মারা গেছে। ফাজলামি করেন আপনারা? আমাদের কিশোর ছাত্ররা এখন সাহসের নাম। আমরাও আর অত্যাচারীর অত্যাচারকে ভয় পাই না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। কোনো ছাড় নাই। তিনি আরও বলেন, আজকে শোক দিবস পালন করেন। জাতির সঙ্গে রসিকতা করেন? নাশকতার নামে ১০ হাজার গ্রেপ্তার করেছেন। আড়াই লাখ আসামি। হত্যা মামলায় কতোজনকে গ্রেপ্তার করেছেন? আজকে পত্রিকার ফুটেজে দেখেছি, ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে অস্ত্র। ইউনিফর্ম পরা পুলিশ। সবাই চিহ্নিত। জ্বলন্ত প্রমাণ এরপরেও তো কাউকে দেখিনি গ্রেপ্তার করতে? নাশকতা কারা করেছে আমরা তো এখনো প্রমাণ পাইনি। অথচ হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার করে ফেলেছেন। যেটার প্রমাণ রয়েছে, সেটির জন্য কাউকে ধরেননি।

নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা ও মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক বলেন, আন্দোলনে আহত সমন্বয়করা হাসপাতালে ভর্তি ছিল তাদের তুলে আনা হয়েছে। তারা কি হাসপাতালে নিরাপদ ছিল না?  আপনারা কিসের নিরাপত্তা দিচ্ছেন? এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, গত ১৬ই জুলাই থেকে যে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে ১০০ বছরের ইতিহাসে এই উপমহাদেশে এমন নজির নাই। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে বলছি, হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্মম এবং নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে, আমরা কয়েকদিন তেমন নির্যাতন দেখেছি। এমন বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে অনেক অন্যায়-অনাচার মুখ বুঝে সহ্য করেছি। এনাফ ইজ এনাফ। এই কথা বলার সময়ও অনেক আগে পার হয়ে গিয়েছে। এখন আমরা একটা ভিন্ন সময়ে চলে এসেছি। যখন দেখছি আমাদের সন্তানদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, আমাদেরই ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে। আমাদের নীরবতার সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। আমি অভিভাবকদের হয়ে এটুকুই বলবো। সারা বাংলাদেশে দল-মতের যত অভিভাবক আছেন, আজকে তাদের রুখে দাঁড়ানোর দিন। শুধু এই কথাটি বলার জন্য যে, এভাবে আমাদের সন্তানদের হত্যা, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন করা সহ্য করবো না। ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা যা পারিনি, তা ওরা করবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াল আছে। সহজে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু গেট খুলে বহিরাগতদের এনে আক্রমণ করেছে একদল। শিক্ষকরা আক্রান্ত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। সিন্ডিকেট তা শোনেনি। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রশাসন ছিল না।  তিনি বলেন, সাবেক ছাত্ররা হল দখল করে থাকে। ফলে ছয়জন থাকতে পারে এমন রুমে থাকছে নিয়মিত ২০ জন ছাত্র। অনেক বছর ধরে স্বৈরাচারী আচরণ হয়েছে। আমরা ২০১৫ সাল থেকে বলে আসছি। প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। ফলে আজকের আন্দোলন শুধু কোটা বিরোধী আন্দোলন বলছে না ছাত্ররা, ছাত্ররা বলছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন রাতে তুলে নেয়া হচ্ছে। যখন গুলি হয়েছে তখন কিছু করতে পারেনি। এখন তুলে নেয়া হচ্ছে, আমরা কিছু করতে পারছি না। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। হাসপাতালে গোয়েন্দারা খবর নিচ্ছে। আহতরা চিকিৎসা না নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আবু সাঈদের মামলা থেকে বোঝা যায় কতোটা মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এই আন্দোলনকে ক্রিমিনাল অ্যাসপেক্ট থেকে বের করতে ছাত্র, শিক্ষক, নাগরিকদের পাশে থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষার্থীদের জায়গা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজিবি, র‌্যাব ইত্যাদি চলে আসলো। আর শিক্ষার্থীদেরকে ৬টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হলো। তার আগে হঠাৎ করেই ৩টার দিকে টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হলো। তিনি বলেন, আবু সাঈদ যে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার মনে হয় সে কখনো ভাবতেই পারেনি আমার দেশের পুলিশ গুলি করবে। এরপর ছবি ও ভিডিও থাকার পরও এফআইআরে যা লেখা হলো তা আপনাদের সবারই জানা।

১১ দফা দাবি:
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালানো কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করে অপরাধীকে খুঁজে বেড়ানো এবং ধরিয়ে দেয়ার আহ্বানকে উপহাস হিসেবে দেখছেন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। তারা ১১ দফা দাবি জানিয়ে বলেছেন, প্রতিটি হতাহতের ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার ও বলপ্রয়োগের ঘটনা জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হতে হবে। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

১১ দফা দাবির মধ্যে আছে- কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ, র?্যাব, আনসার, বিজিবি, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারি মদতপুষ্ট অস্ত্রধারীদের গুলি এবং নির্মম আঘাতে নিহত সকল মৃত্যুর সঠিক, স্বচ্ছ তদন্ত হতে হবে এবং প্রকৃত দোষীর, তা সে যতই উচ্চ পদাধিকারী বা কোনো দলমতের হোক, সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য এবং বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে প্রতিটি হতাহতের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহার ও বল প্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হতে হবে। এই প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করতে হবে। ইতিমধ্যে সংগৃহীত ছবি, ভিডিও ফুটেজ এর মাধ্যমে চিহ্নিত সকল হন্তারক ও আক্রমণকারীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

জাতির ইতিহাসে সংঘটিত এমন নজিরবিহীন হতাহতের শিকার সকল নিহত, আহত নাগরিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারকে অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
১৪৭ জন নয়, সকল নিহত ও আহত নাগরিকের সম্মানে জাতির সহানুভূতি, সম্মান আর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় শোক ঘোষণা করতে হবে। এই শোক প্রকাশকে আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু করে আন্তরিক ও অর্থবহ করতে হবে।

দায় মেনে নিয়ে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। অঙ্গ হারানো সকল নাগরিকের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, ক্ষতিপূরণ আর পুনর্বাসনের পুরো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের চিত্র জাতির সামনে অনতিবিলম্বে তুলে ধরতে হবে।

অবিলম্বে আটককৃত সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি দিতে হবে এবং শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে এবং সেখানে অস্ত্রধারী ও প্রভাব বিস্তারের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তথাকথিত ডিবি হেফাজত থেকে সকল সমন্বয়কারীকে মুক্তি দিতে হবে। এমন জোরপূর্বক উঠিয়ে নেয়া আর বেআইনি হেফাজতের ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত সকলকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।

সরকারকে ভয় দেখানোর সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। গুলি করে আন্দোলন দমানোর অসুস্থ মানসিকতার অবসান এখনি করতে হবে। স্বাভাবিক ও স্বস্তির পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারফিউ ও সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, সাঁজোয়া যান সরিয়ে নিতে হবে, হেলিকপ্টারের পাহারা থামাতে হবে, ব্লকরেইড, গণগ্রেপ্তার, ছাত্র-অভিভাবক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

অবাধ তথ্যপ্রবাহে আরোপিত সকল বাধা দূর করতে হবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পূর্ণ মাত্রায় খুলে দিতে হবে। সহিংসতা দমনের নামে বিরোধী মত দমন করা যাবে না। স্পষ্ট প্রমাণের মাধ্যমে সহিংসতার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.