ভ্রুণের মধ্যে অ্যালকোহল সিনড্রোম

ভ্রুণের মধ্যে অ্যালকোহল সিনড্রোম-বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার শিশুদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি বলে দেখা গেছে।
আর দেশটির ওয়েস্টার্ন কেপ এলাকায় অভাব আর বেকারত্বের শিকার বেশিরভাগ দম্পতির মধ্যে মদ্যপানের সংস্কৃতি একটি দেখা যায়।
এই ধরনের সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের প্রায়ই মস্তিস্কের ক্ষতি এবং বেড়ে ওঠার সময় বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
কোনও কোনও সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রুণের এই অ্যালকোহল সিনড্রোম এত মারাত্মক রূপ নেয় যে, তা এইচআইভির চেয়েও ভয়াবহ।
কেপটাউনের সমুদ্র উপকূলবর্তী গ্রাম ভ্রেডেনবার্গের এক হাজার শিশুর মধ্যে ৬৫ জন শিশু ভ্রুনের অ্যালকোহল সিনড্রোম সমস্যায় ভুগছে।
চার সন্তানের মা ৩২ বছর বয়সী ম্যারির দশ বছর বয়সী মেয়ের মধ্যে এই সমস্যা প্রথম প্রকাশ পায় যখন সে স্কেুলে যেতে শুরু করে।
যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় মদ্যপান করেন তাদের সন্তানদের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি।
"সে যখন একেবারে ছোট ছিল তখন প্রচুর কান্নাকাটি করতো। এরপর যখন একটু বড় হতে শুরু করলো তখন সে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে হাসতে থাকতো। সে খুবই ভুলোমনা। কিন্তু আমার দুই বছর বয়সী আরেকটি শিশুরও এই সমস্যা আছে বলে সন্দেহ হচ্ছে"-বলছিলেন ম্যারি।
ম্যারি স্বীকার করেন, সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সে প্রচুর মদ্যপান করতো।
"আমি যখন গর্ভবতী ছিলাম সে সময় বাচ্চাদের বাবার দ্বারা খুব নির্যাতনের শিকার হতাম। আমি জানতাম না যে, মদ্যপান করলে আমার বাচ্চাদের ব্রেনের স্থায়ী ক্ষতি হবে। নিজের কষ্ট ভুলে থাকার জন্য আমি মদ্যপান করতাম আর মাদক নিতাম। তখন আমি মদ পান করতাম বাচ্চাদের বাবার সাথেই। কিন্তু এখন দায়-দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে আমাকে একাই"।
এই অঞ্চলে ম্যারির ঘটনার মত আরও বহু ঘটনা রয়েছে।
অনেক সম্প্রদায়ে ১৩ শতাংশের বেশি শিশুর জন্মানোর সময় এর প্রভাব দেখা যায়।
অ্যালকোহল সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক লিওনা অলিভিয়ের বলেন, "যেসব গর্ভবর্তী নারীরা অ্যালকোহল খান তারা অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের জন্ম দিচ্ছেন। এই সমস্যা কখনো খুব বেশি আবার কখনো সামান্য হতে পারে। এটি মস্তিস্কের অপরিবর্তনযোগ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই হার সর্বোচ্চ। কোনও কোন সম্প্রদায়ের মাঝে এর প্রাদুর্ভাবের হার এইচআইভির চেয়েও বেশি"।
হাজার হাজার শিশুর এবং তাদের পরিবারের জন্য এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ভয়ানক অভিজ্ঞতা। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা বা সহায়তা পেলে এই শিশুরাও অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে।
ভিভিয়ান লরেন্স ষোল বছর ধরে একশোর বেশি শিশুকে প্রতিপালন করেছেন।
তাদের বেশিরভাগেরই অ্যালকোহল সিনড্রোম ছিল। এরকম দুটো শিশুকে তিনি দত্তক নিয়েছেন।
মিসেস লরেন্সের এই দুজন পালিত সন্তানের একজন তিমা। এখন তার বয়স ২০ বছর। মিসেস লরেন্স স্থানীয় একটি কাপ কেক তৈরির কোম্পানিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন লরাকে কাজে লাগানোর জন্য। এখন সেখানেই সে কাজ করছে।
নারীদের অ্যালকোহল পানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে।
কিন্তু ভ্রুণের অ্যালকোহল সিনড্রোম সমস্যাটি দূর করা যে এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ, সরকারও তা স্বীকার করছে।
বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই হার সর্বোচ্চ।

No comments

Powered by Blogger.