সিলেটে নদীপথ ঘুরে ঘুরে... by মতিউর রহমান

কয়েকশ’ মাইল দূরে পাহাড়ের মাথায় ঝকঝকে সাদা কিছু একটা দেখে মনে হচ্ছিল, সেখানে বুঝি কোনও বিরাট সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে! যতই কাছাকাছি যাচ্ছি ততই এর আকৃতি বাড়ছিল। পরে বুঝলাম ওটা আদতে একটা জলপ্রপাত। ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়ের মাথা থেকে জলধারা নেমে এসেছে আমাদের সীমানায়। কাঁটাতারের কারণে ওই ঝরনায় অবগাহনের সুযোগ নেই আমাদের।
সিলেট আমার পছন্দের জায়গা। ছোটবেলা থেকেই পাহাড়-টিলা ভালো লাগে। চা বাগান নিয়ে নানান গল্প পড়ার সুবাদে তা পোক্ত হয়েছে আরও।
এবার যাচ্ছি সিলেটের ভোলাগঞ্জ। দু’পাশে টিলা আর চা বাগান, মাঝ দিয়ে চলে গেছে সড়ক– গল্প-উপন্যাসে এমনটাই পড়েছি। সিলেটে দর্শনীয় জায়গা অনেক। আমরা নিরিবিলি একটা স্পট খুঁজছিলাম, যেখানে মানুষ কম যায়। উৎমা-ছড়া তেমনই। তার আগে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর দেখার ইচ্ছে হলো।
ভোলাগঞ্জে পৌঁছে নৌকা নিলাম সাদাপাথর পর্যন্ত। সাত মিনিটের পথ। এরপর হেঁটে কিছুদূর যেতেই মিলে গেলো পাহাড় থেকে নেমে আসা কাঙ্ক্ষিত জলধারা। সেই পানিতে দাপাদাপি করছে হাজারও মানুষ। স্রোতধারা যেখানে বেশি সেখানে অবশ্য লোকজন কম। আমরা সেই বেশি স্রোতধারায় নেমে পড়লাম। প্রচণ্ড রোদে গা পুড়ে যাওয়ার মতো অস্বস্তি ছিল। সাদাপাথরের জলে নেমে শরীর জুড়িয়ে গেলো। পানিতে আধঘণ্টা গা ভেজানোর পর রওনা দিলাম উৎমা-ছড়ার উদ্দেশে।
নদীপথ নৌকায় পার হয়ে সিএনজি নিলাম। দু’পাশে সবুজের সমারোহ। বিকেলের নরম আলোয় চোখ ভরে যাচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছে সিএনজি থেকে নেমে ১৫ মিনিটের মতো হেঁটে উৎমা-ছড়া যেতে হয়। সাদাপাথরের মতোই এখানেও পাথুরে নদী। দূর পাহাড় থেকে নেমে এসেছে জলধারা। সেখানে হুটোপুটি করছে ছোট্ট সোনামণিরা। আমরা আগেই গোসল সেরে নেওয়ায় এবার আর পানিতে নামলাম না। শুধু পা ভিজিয়ে চোখ মেলে দেখলাম।
আফসোসের ব্যাপার এই যে, সাদাপাথর ও উৎমা-ছড়া দুটি জায়গাই সীমান্ত এলাকায়। এ কারণে সৌন্দর্যের বেশি গভীরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বারবার মনে হচ্ছিল, কেউ বুঝি অপরূপ প্রকৃতিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে বেঁধে রেখেছে। দূর থেকে দেখা ছাড়া সেসব ছোঁয়ার সুযোগ নেই।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়। নন-এসি বাস ভাড়া ৪৭০ টাকা। ট্রেনের টিকিট ২৮৫ টাকা থেকে শুরু। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ বাজারে যেতে হবে রিজার্ভ গাড়িতে। কম মানুষ হলে সিএনজি নেওয়া ভালো। দল বড় থাকলে লেগুনা বেছে নেন অনেকে। ১০ জন বসা যায় এমন লেগুনার ভাড়া ২৩০০ টাকা।
ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে সাদাপাথর যাওয়ার নদীপথের দূরত্ব মাত্র ৭ মিনিটের। আটজন চড়া যায় এমন নৌকার ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা। আর ভোলাগঞ্জ থেকে উৎমা-ছড়া যাওয়ার পথে নদী পার হতে হবে। নৌকার ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকার মতো, সময় লাগবে পাঁচ মিনিট। নদী পেরোলেই দয়ার বাজার। সেখান থেকে উৎমা-ছড়ার সিএনজি ভাড়া একেকজনের পড়বে ৩০ টাকা।
যা যা দেখবেন
সিলেটে দেখার আছে অনেক কিছু। ভোলাগঞ্জে সাদাপাথরের সৌন্দর্য উপভোগের পর উৎমা-ছড়া দেখার পর আরও গভীরে তুরুংছড়া যাওয়া যায়। হাতে বেশি সময় নিয়ে গেলে জাফলং, রাতারগুল, পান্থুমাই, বিছানাকান্দি ইত্যাদি স্থানে বেড়িয়ে আসুন।

>>ছবি: লেখক

No comments

Powered by Blogger.