প্লেবয় মডেল এখন...

জেসিকা ল্যান্ডন (৩৭)। এক সময়ের খ্যাতনামা প্লেবয় মডেল। ভোদকার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। ২৪ ঘন্টায় তাকে একবার অন্তত এই নেশাদ্রব্য পান করতে হতো। বিছানার পাশে পানির বোতল ভরে রাখতেন ভোদকা। কিন্তু ভিতরে ভিতরে এই নেশা, সেই নেশা তার দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিকল করে দিচ্ছিল। পচন ধরেছিল ত্বকে। শেষ পর্যন্ত তার চেতনা ফেরে।
এখন তিনি সুস্থ। তবে বার বার পিছন ফিরে দেখে নেন সেইসব দিনকে।
মাত্র ৫ বছর বয়স তার। তখন এক বেবিসিটারের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন জেসিকা। এতে মানসিক অস্থিরতা ও লজ্জাজনক একটি অবস্থার শিকারে পরিণত হন তিনি। ১৯ বছর বয়সে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যানজেলেসে। সেখানে প্লেবয় ম্যানসনে হিউ হেফনারের সঙ্গে উদীয়মান, নামকরা হলিউডি অভিনেত্রীদের ঝলমলে পার্টি। তাতে যোগ দেন জেসিকাও। তার কাছে স্বপ্নিল হয়ে ওঠে জীবন। জেসিকা বলেন, তখন আমি মডেলিং করতাম। অভিনয় করতাম। প্লেবয় ম্যানসনে অফুরান আনন্দে মেতেছি। মনে হতো এক স্বপ্নের ভিতর বসবাস করছি। আমি তখন এলকোহল, প্রেম আর খাদ্যের মধ্যে ডুবে থাকার চেষ্টা করেছি। এলকোহল আমাকে স্তস্তি দিতো। এতে আমি বেদনা ভুলে থাকতে পারতাম। খুব ছোট থেকেই আমি মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। প্রকাশ্যে বা পার্টিতে আমি এমন পানের আড্ডায় মেতে উঠতাম। আমার কাছে তখন মদ পান ছিল ম্যাজিকের মতো। ম্যাজিকের মতো আমার সব কিছু ভুলিয়ে রাখতো তা। ২৬ বছর বয়সের মধ্যে আমি খুব বেশি মদপানে আসক্ত হয়ে পড়ি। বিশেষ করে ২৪ ঘন্টায় একবার ভোদকা পান করা চাই-ই চাই। রাত জাগতাম। আবার রাতে যখন নানা বেদনা আমার ভিতর জেগে উঠতো, আমি মারাত্মকভাবে কাঁপতাম। এ সময় একবার যাতে পান করতে পারি, সে জন্য আমি বিছানার পাশে পানির বোতলে ভরে রাখতাম ভোদকা।
জেসিকা বলেন, নিয়মিত বমির সঙ্গে রক্ত বেরুতে থাকে আমার। আস্তে আস্তে মনে হতে থাকে নরকের ভিতর বসবাস আমার। এ সময়ে মনে হয় এভাবে জীবন টেনে নেয়া যায় না। এমন করলে আমি মারা যাবো। আমি বুঝতে পারি, নিজের জন্য জেলখানা রচনা করেছি আমি। আমার জীবনে যারাই এসেছেন, তাদের কেউই জানতেন না তা কতটা বাজে ছিল। মদ পান করার বিষয়টি আমি খুব দীর্ঘ সময় গোপন রেখেছি। খুব বেশি যে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম সে বিষয়ে সততার বিষয়ে আমি ছিলাম খুব উদ্বিগ্ন।

এক পর্যায়ে নিজে গৃহহীন হয়ে পড়েন জেসিকা। একজন আগন্তুকের এক চিলেকোঠায় বসবাস করতে থাকেন তিনি। এ সময় নিয়মিত তার রক্তবমি হতে থাকে। এতে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েন। একদিন সিঁড়ির রেলিংয়ের ওপর পড়ে যান। এতে তার মাথা পড়ে নিচে। এতে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। জেসিকা বলেন, এতে আস্তে আস্তে আমার শরীরের একপাশ বিকল হয়ে যায়। মুখ ঝুলে যেতে থাকে। আমার কথা বলার শক্তি হারিয়ে যেতে থাকে। হাসপাতালে গেলাম। সেখানে সিটি স্ক্যান করা হয়। তাতে আমার ব্রেনের কেন্দ্রীয় অংশে বেসবলের মতো একটি অংশে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। ব্রেনকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেয়ার আগেই অপারেশন করে তা সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রথমেই আমার মাদকাসক্তি কাটিয়ে উঠার চিকিৎসা দেয়া হলো। কারণ, আমার রক্ত তখন একেবারে হালকা হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় সার্জারি বা অপারেশন করার জন্য উপযুক্ত নয়। এভাবে ৫ দিন ওষুধ প্রয়োগের পর জরুরি ভিত্তিতে তার ব্রেনে সার্জারি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। জেসিকা বলেন, আমাকে অ্যাকিউট রিহ্যাব ফ্যাসিলিটিতে পাঠানো হলো। কি সৌভাগ্য, সেখানে অলৌকিকভাবে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম। আমি কিছু দিনের মধ্যে শক্তি ও মানসিক বল ফিরে পেলাম। ব্রেনের ক্ষত সেরে উঠার পর আমি আমাকে উদ্ধার করি এক বন্ধুর বাসার ফ্লোরে। আবার যেন সেই যন্ত্রণার শুরু।
জেসিকা বলেন, আমি ওই বন্ধুর ফ্লোরে পড়ে থাকি। মদ পান করায় নিজেকে যেন মৃত্যুর একেবারে কাছে নিয়ে যাই। আমি উঠে তার রেস্টরুমে যাওয়ার মতো সামর্থও ছিল না। ফলে ওই ফ্লোরেই শুয়ে সেখানেই মল ও মূত্র ত্যাগ করতে থাকে এক মাসের মতো। এ সময়ে আমার মূত্রে থাকা এসিড আমার নিতম্ব দেশের ত্বক খেয়ে ফেলছিল। এ সময় বুঝতে পারি দ্রুততার সঙ্গে মারা যাচ্ছি। এ সময় সাবেক একজন বন্ধুকে ডেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য অনুনয় করি। ঈশ্বরের কৃপায় পরের দিন সকালে সে একটি এম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হলো। যখন আমাকে হাসপাতালে নেয়া হলো, তখন আমার রক্তে এলকোহলের মাত্রা শতকরা ০.৫৩৩ ভাগ। আমার কোনো অঙ্গই কাজ করছিল না। আমি দুর্বল হতে হতে ৭৮ পাউন্ডে এসে দাঁড়ালাম। দ্রুত দুবার রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন হলো। আমাকে ১৬ দিন রাখা হলো আইসিইউতে।
জেসিকার বয়স এখন ৩৭ বছর। তিনি এখন নতুন জীবন পেয়েছেন। কাজ করছেন মদ্যপান থেকে ফেরত আসা বিষয়ক একজন কোচ হিসেবে। লোকজনকে মদ্যপান থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন। তার লাইফ পার্টনার ম্যাথিউ। এ বছর ডিসেম্বরে তাদের প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। অতীত নিয়ে গর্ব করেন না এই প্লেবয় মডেল। তিনি বলেন, আমি বিব্রত বোধ করি। এক সময় যে জীবন আমি যাপন করেছি তা নিয়ে লজ্জিত। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই যুবতীরা গ্লামারাস, জাকজমকপূর্ণ জীবনের সন্ধানে লস অ্যানজেলেসে পাড়ি জমাচ্ছেন। তারা মনে করেন, হলিউডে যোগ দিতে পারলেই জীবন হবে সুখের, পাওয়া যাবে সফলতা। কিন্তু জেসিকা তাদের দুঃসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত, অনিরাপদ ও মানবতা হারানো জায়গা হলো হলিউড।

No comments

Powered by Blogger.