সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযানের ফলে কি ইসলামিক স্টেট ফিরে আসতে পারে?

সিরিয়ায় ঢুকে পড়েছে তুর্কী বাহিনী, কুর্দি অবস্থানগুলোর ওপর আকাশ থেকে বোমা ফেলছে তাদের যুদ্ধ বিমানগুলো।
ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর ওপর বোমা পড়ছে, ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠে আকাশে। ইতিমধ্যেই খবর আসছে শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে এসব আক্রমণে।
পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। কারণ এখানে পেছন থেকে খেলছে অনেক রকম শক্তি। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ।
উত্তরপূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি অবস্থানগুলোর ওপর তুর্কি বাহিনীর বোমাবর্ষণ
তুরস্কের প্রকাশ্যে ঘোষিত লক্ষ্য: উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের তাড়ানো এবং সেখানে তাদের ভাষায় একটা 'নিরাপদ এলাকা' প্রতিষ্ঠা - যেখানে বাস্তুচ্যুত সিরিয়ানদের বসতি প্রতিষ্ঠা করা যায়।
কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী যখন সিরিয়ার মাটিতে নেমে জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল, তখন তাদের সহযোগী ছিল এই কুর্দি যোদ্ধারাই।
অনেকের আশংকা, তুরস্ক যেভাবে অভিযান চালিয়ে কুর্দি মিলিশিয়াদের তাড়িয়ে দিচ্ছে - তাতে হয়তো সিরিয়ায় জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নতুন করে উত্থান ঘটতে পারে।

সত্যি কি তাই হতে পারে?

বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার লিখছেন, হ্যাঁ, এটা খুবই সম্ভব। অন্তত সীমিত অর্থে হলেও ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদার মতো সংগঠনের পুনরুত্থান হতেই পারে।
এটা মনে করার কারণ হলো: ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদার মতো সংগঠনগুলো বিকশিত হয় বিশৃঙ্খলা এবং গোলমালের মধ্যে।
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান একটি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় ঠিক একরমই একটা পরিস্থিতির ঝুঁকি তৈরি করেছে।
তবে এরকম ঝুঁকি বাস্তবে পরিণত হবে কিনা তা নির্ভর করে তিনটি ব্যাপারের ওপর। এক. সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান কত ব্যাপক হয়। দুই. অভিযান কতদিন ধরে চলে, এবং তিন. তার তীব্রতা কতটা হয়।
জিহাদি বাহিনী আইএস এবং তাদের স্বঘোষিত খেলাফত কার্যত: সম্পূর্ণ উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল এ বছরই। মার্চ মাসে বাঘুজের যুদ্ধে পরাজয়ের পর তাদের নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ যে ভূখন্ডটিও হারায়।
কিন্তু তাদের হাজার হাজার যোদ্ধা এখনো জীবিত, এবং তাদের সবাই যে প্রতিপক্ষের হাতে বন্দী - তাও নয়।
ইরাক ও সিরিয়ার অনেকগুলো শহর দখল করে নিয়েছিল ইসলামিক স্টেট
আইএস বলেছিল, তারা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাবে, এবং একের পর এক চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে তাদের শত্রুদের পরাজিত করবে।
এমনি একটি বোমা হামলাই তারা চালিয়েছে তাদের এক সময়ের 'রাজধানী' রাক্কা শহরে, এ সপ্তাহেই।

ইসলামিক স্টেটকে ঠেকিয়ে রেখেছিল আমেরিকানরা এবং কুর্দি যোদ্ধারা

উত্তর পূর্ব সিরিয়া এক সময় ছিল আইএসের শক্ত ঘাঁটি।
কিন্তু তাদের উত্থানকে ঠেকিয়ে রেখেছিল কুর্দিপ্রধান সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ মিলিশিয়া, এবং তাদের সমর্থন দানকারী মার্কিন বিশেষ বাহিনী।
তখন তাদের হাতে ছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র।
শুধু তাই নয়, আইএসের পরাজয়ের পর তাদের প্রায় হাজার হাজার যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যেসব শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে - সেগুলো পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণও করে এই কুর্দি মিলিশিয়ারা।
এখানে বহু দেশ থেকে আসা আইএস যোদ্ধারা আটক আছে - যাদের ফেরত নিতে ওই সব দেশ একেবারেই অনাগ্রহী।
কিন্তু তুরস্কের বাহিনীর আক্রমণের মুখে কুর্দি যোদ্ধাদের প্রধান কাজ হবে আত্মরক্ষা এবং পাল্টা আক্রমণ। আইএস যোদ্ধাদের কারাগার পাহারা দেয়াটা তাদের একটা গৌণ কাজ হয়ে পড়বে।
ফলে এখানে এখন দু'রকম ঘটনা ঘটতে পারে।

কারা বিদ্রোহ?

সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো আইএস যোদ্ধারা একটা কারা-বিদ্রোহ ঘটিয়ে ফেলতে পারে, জেল ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারে।
এসডিএফের পরিচালিত কারাগারগুলোয় আটক আছে আনুমানিক ১২,০০০ ইসলামিক স্টেট যোদ্ধা। এদের অনেকেই হয়তো নিজ হাতে শিরশ্ছেদ করেছে, লোকজনকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, অনেকের হাত-পা কেটে দিয়েছে। অন্যরা নিজে এসব না করলেও তা নিজের চোখে দেখেছে।
অনেকেই আছে যারা সামরিক আক্রমণ পরিকল্পনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
সিরিয়ার কোন এলাকা এখন কার নিয়ন্ত্রণে
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশংকা, এই আইএস যোদ্ধারা আটকাবস্থা থেকে বেরুতে পারলে তাদের অনেকে হয়তো নানা পথ দিয়ে ইউরোপে বা অন্যত্র তাদের মূল দেশে চলে আসবে - এবং লন্ডন, প্যারিস বা বার্সেলোনার ঘটনার মতো বড় আকারের আক্রমণের পরিকল্পনা শুরু করবে।
এখন এ জন্য পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ করতে পারে না।
কারণ, ২০১৪-২০১৯ সালে ৭০টি দেশকে নিয়ে গঠিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন এক কঠিন যুদ্ধের পর ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিল। কিন্তু বন্দী যোদ্ধাদের কিভাবে বিচার করা হবে তার জন্য কোন আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত পন্থা নেই।
অবশ্য তুরস্ক সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেবার পরই কিছু বন্দীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের জিম্মায় নিয়ে গেছে । এর মধ্যে আছে আল-শফি আল-শেখ এবং আলেক্সান্ডর কোটে - যারা ব্রিটিশ এবং এ কারণে তাদের বিটলস বলে ডাকা হতো আইএসের মধ্যে।
অন্যদিকে, নারীদের শিবিরগুলো ভর্তি হয়ে আছে আইএস সমর্থক এবং 'নৈতিকতা রক্ষক' বাহিনী 'হিসবাহ'-র সাবেক সদস্যদের দিয়ে।
তারা বন্দী শিবিরের মধ্যেই তাদের প্রিয়ভাজন নয় এমন লোকদেরকে নিয়মিত চাবুক মারা এবং তাঁবু পুড়িয়ে দেয়ার মতো কঠোর শাস্তি দিচ্ছে।
আল-হলের শিবির: বহু আইএস যোদ্ধার পরিবার আছে এই শিবিরে
এই শিবিরগুলোর অবস্থান হচ্ছে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে, সিরিয়ার ঠিক ভেতরে। তুরস্ক ঠিক এই জায়গাটিই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়।
এ ছাড়া আইএস যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য আছে প্রায় ৭০ হাজার - যাদের রাখা হয়েছে অন্য অনেকগুলো শিবিরে - যার একটি আছে আল-হলে।

দ্বিতীয় ভয়: আইএসের পুনরুত্থান?

ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধ চালিয়েছে প্রধানত এসডিএফের কুর্দি যোদ্ধারা।
এ ছাড়াও উত্তর সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের পাঁচ বছরব্যাপী খেলাফত অবসানের পেছনে আরো অনেকের ভুমিকা আছে, যার মধ্যে আছে পশ্চিমা বিশেষ বাহিনী এবং এমনকি ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা।
কিন্তু এখন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুরস্ক যদি সামরিক অভিযান চালিয়ে কুর্দিদের তাড়িয়ে দেয়, তাহলে বন্দী আইএস যোদ্ধাদের পাহারা দেবে কে?
কারণ কুর্দিরা এখন তুর্কি বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধ এবং তাদের বিমান হামলা থেকে আত্মরক্ষাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তারা আর আইএসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন শক্তি হয়ে উঠতে পারবে না। পশ্চিমারাও তার জায়গা নিতে অনিচ্ছুক।
আইএস-বিরোধী যুদ্ধে এসডিএফের যোদ্ধারা
ফলে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর জন্য এটা এক সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
তাদের পলাতক নেতৃত্ব এতদিন মাঝে মাঝে পুনরুত্থানের ঘোষণা দিত। প্রতিবেশী ইরাকে গত বেশ কিছুকাল ধরেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল যে আইএস নতুন করে আবার সংগঠিত হচ্ছে এবং ইরাকি সরকারের ওপর ছোটখাটো আক্রমণ চালাচ্ছে।
কোন এলাকায় যখন সরকার বা প্রশাসন ভেঙে পড়ে বা দুর্বল হয়ে যায় - তখনই জিহাদি গোষ্ঠীগুলো সেখানে তাদের তৎপরতা বাড়াতে পারে। সোমালিয়া, ইয়েমেন, পশ্চিম আফ্রিকা, এবং ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশে তাই হয়েছে।
সিরিয়া-ইরাক ও তুরস্ক সীমান্তের এই জায়গাটিতে অস্থিতিশীল অবস্থা আগামী বেশ কিছুকাল জারি থাকবে বলেই মনে হয়।

আইএসের পুনরুত্থান: কতটা সম্ভব?

একটা কথা বলা দরকার, আইএসের পুনরুত্থানের যে কথা বলা হচ্ছে তা হয়তো না-ও হতে পারে।
তুরস্কে সিরিয়ার ভেতরে অভিযান শুরুর পর থেকেই হোয়াইট হাউজ থেকে নানা রকম বার্তা আসছে।
হয়তো এটা তুরস্ককে সিরিয়ার খুব বেশি ভেতর পর্যন্ত অভিযান চালানো থেকে বিরত রাখতে পারে।
হয়তো তার অভিযান হবে সীমিত আকারের।
হাজার হাজার আইএস যোদ্ধা কুর্দি মিলিশিয়াদের হাতে বন্দী
হয়তো, প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যাবার পর দেখা যাবে, এ অভিযানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এই কোণাটিতে একটা নতুন বাস্তবতার উন্মেষ ঘটবে।

কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিগত শুদ্ধি অভিযান?

মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা নিয়ে এই সেদিন পর্যন্ত এই পুরো এলাকাটিই নিয়ন্ত্রণ করতো কুর্দি যোদ্ধারা।
তাদেরকে তুরস্কের বিশাল সামরিক বাহিনীর আক্রমণের মুখে ফেলে রেখে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি চান না যে আমেরিকান সৈন্যরা দেশের বাইরে কোন 'অন্তহীন' 'অপ্রয়োজনীয়' যুদ্ধে জড়িত থাকুক।
২০১৮ সালে তুরস্ক যখন পশ্চিমদিকের কুর্দিপ্রধান এলাকা আফরিনে অভিযান চালিয়েছিল, তখন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার লোক। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানেও ঠিক একইভাবে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী শহরগুলো থেকে হাজার হাজার লোক পালাতে শুরু করছে।
কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কী জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানো হতে পারে?
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল এ্যাডামস বলছেন, সেরকম সম্ভাবনা সত্যি আছে।
কেন? তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, উত্তর পূর্ব সিরিয়া জনগোষ্ঠীগতভাবে মিশ্র একটি এলাকা।
এখানে কিছু এলাকায় কুর্দিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্য কিছু এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সুন্নি আরবদের। আর অন্য কিছু এলাকাও আছে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেরা হচ্ছে খ্রীষ্টান।
এখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান চাইছেন, সীমান্ত থেকে সিরিয়ার ভেতরে ২০ মাইল পর্যন্ত এলাকা থেকে কুর্দিদের তাড়িয়ে সিরিয়ান বাস্তুচ্যুত লোকদের বসতি গড়ে তুলতে।
তিনি যদি সত্যি ২০ লাখ পর্যন্ত সিরিয়ান শরণার্থীকে এখানে বসতি স্থাপন করাতে সক্ষম হন - তাহলে এই এলাকার জনসংখ্যার অনুপাতই বদলে যাবে।
বাগুজে লড়াইয়ের পর ধরা পড়া আইএস যোদ্ধাদের একটি দল
মি. এরদোয়ান বলেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের জনসংখ্যার অনুপাত আগে যে রকম ছিল - তা পুন:প্রতিষ্ঠা করতে, যাতে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সিরিয়ানদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়।

এই ওয়াইপিজি তাহলে কারা?

ওয়াইপিজি হচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপ এসডিএফ অর্থাৎ সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স নামে একটি মিলিশিয়া জোটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য।
এসডিএফ জোটে কুর্দি এবং আরব উভয় ধরণের মিলিশিয়া গোষ্ঠীই আছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী যখন সিরিয়ার মাটিতে নেমে জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল - তখন তাদের তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল এই এসডিএফ।
কিন্তু তুরস্কের বিশাল সশস্ত্রবাহিনীর মোকাবিলা করার মতো ভারী মেশিনগান, বিমান-বিধ্বংসী কামান বা ট্যাংক ধ্বংসকারী অস্ত্র তাদের নেই।
মি. এরদোয়ানের হিসেবটা হচ্ছে, সীমান্তে সিরিয়ান কুর্দি ওয়াইপিজি সংগঠনের মিলিশিয়ারা আছে তাদের দূরে ঠেলে দেয়া - কারণ ওয়াইপিজি তার চোখে কুর্দি স্বায়ত্বশাসনের সমর্থক পিকেকের একটা শাখা।
মনে রাখতে হবে, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন - সবাই পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ওয়াইপিজি অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
তারা এরদোয়ানকেও একজন 'মিথ্যেবাদী' মনে করে। তাদের মতে মি. এরদোয়ানের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কুর্দিদের নিশ্চিহ্ন করা।

বন্দী আইএস যোদ্ধাদের নিজ দেশে নেয়া হচ্ছে না কেন?

সোজা উত্তর: আইএস যোদ্ধাদের নিজ নিজ দেশগুলোই তাদের নিতে চায় না।
বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা গর্ডন কোরেরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছে - যেন তারা ইউরোপ থেকে আসা আইএস যোদ্ধাদের নিয়ে যায়।
রাস আল-আইন থেকে পালাচ্ছেন কুর্দিরা
কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো অনিচ্ছুক, কারণ এদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিচার করার অনেক সমস্যা আছে। আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ অনেক ক্ষেত্রেই নেই।
ভয় হলো, তখন হয়তো বাধ্য হয়ে তাদের ছেড়ে দিতে হবে।

মি. ট্রাম্প যে কুর্দিদের পরিত্যাগ করছেন, এরই বা কারণ কী?

বিবিসির পল এ্যাডামস বলছেন, মি. ট্রাম্পের হিসেবটা খুবই সোজা।
তার কথা অনুযায়ী, মার্কিন-কুর্দি জোট গঠিত হয়েছিল আইএসকে পরাজিত করার জন্য। সে কাজ হয়ে গেছে, এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় আমেরিকার আর কোন কাজ নেই।
অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু জেনারেলও এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান
কুর্দিরা ছড়িয়ে আছে সিরিয়া, তুরস্ক, ইরাক ও ইরান - এই চারটি দেশে। কুর্দি নেতারাও এটা বোঝেন যে এই দেশ চারটির রাজনীতি এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর নিজস্ব হিসেব-নিকেশের কাছে অবধারিতভাবেই কুর্দিদের স্বার্থ উপেক্ষিত হবে।

আইএসের পুনরুত্থান ঘটলে তার দায় কে নেবে?

তাহলে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ এখন যদি সিরিয়ায় আইএস নতুন করে সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে - তাহলে তার দায় কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই বর্তায় না?
পল এ্যাডামস বলছেন, এ কথা কুর্দিরাও তুলছে, তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাব্লিকান পার্টির অনেক নেতাও।
কিন্তু মি. ট্রাম্প মনে করেন, আইএস 'শেষ হয়ে গেছে।' যদিও খুব কম লোকই তার সাথে একমত।
প্রশ্ন ওঠে, ইসলামিক স্টেটের মতো একটি ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক দল বা একটি আদর্শ কি একটা যুদ্ধে হারলেই 'শেষ হয়ে' যেতে পারে?
এর কোনো সহজ উত্তর নেই।
কিন্তু এটা ঠিক যে আইএস যদি সত্যিই আবার ফিরে আসতে পারে - তাহলে ডোনাল্ড ট্রাস্প এর জন্য ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হবেন।
তুরস্কের সেনা অভিযানের প্রতিবাদে কুর্দিদের বিক্ষোভ

No comments

Powered by Blogger.