মিয়ানমারে শান্তি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে! by লাউয়ি ওয়েং

কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশানের (কেআইও) ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল গুন মাও চলতি মাসের শুরুর দিকে তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “আমি কে?”। এর মাধ্যমে চলমান শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজের সশস্ত্র গ্রুপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও কবিত্ব করে তিনি কথাটা বলেছেন, সরাসরি বলেননি।

২০১১ সালে ১৭ বছরের অস্ত্রবিরতি চুক্তি যখন ধসে পড়ে, কেআইও এর পরও মিয়ানমার সরকারের সাথে শান্তির জন্যে দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে এবং একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বরং আরও অবনতি হয়েছে এবং এই মুহূর্তেও লড়াই চলছে।

মিয়ানমার সরকার ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডাব্লিউএসএ) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এনডিএএ) মধ্যে একটা ন্যাশনাল সিজফায়ার এগ্রিমেন্ট (এনসিএ) স্বাক্ষরের চেষ্টা করছে। চুক্তি স্বাক্ষর করা হলে তাদেরকে পূর্ণ ও স্থায়ী শান্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বলে জেনারেল গুন মাউ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন।

ইউডাব্লিউএসএ এবং এনডিএএ দুটোই জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন যেগুলো চীন সীমান্তের কাছে শান রাজ্যে গড়ে উঠেছে। এই দুটো গ্রুপই পরিপক্ক সশস্ত্র গ্রুপ যাদের সফল ব্যবসায় রয়েছে, এবং তারা ৩০ বছরের জন্য সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তারা আবার এনসিএ স্বাক্ষর করার কোন কারণ দেখছে না, কারণ এই সময়টাতে তারা কোন সঙ্ঘাতে জড়ায়নি।

কাচিন ও শান রাজ্যের চারটি সশস্ত্র গ্রুপ বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। এনসিএ স্বাক্ষরের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির চেষ্টা করছে। চীন তাদেরকে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনার ব্যাপারে সাহায্য করছে। আমরা দেখেছি এই আলোচনার প্রক্রিয়া আগাচ্ছে, তবে কখনও কখনও এটাকে আমরা পেছাতেও দেখেছি।

তাং ন্যাশনাল লিবারেশান আর্মির (টিএনএলএ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তার ফোন কিয়াউ অভিযোগ করেছেন যে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের অবস্থান বারবার বদলাচ্ছে এবং আস্থা অর্জন করাটা অসম্ভব করে তুলছে। সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেছেন।

তার ফোন কিয়াউ বলেছেন, সামরিক বাহিনী, এনএলডি সরকার না জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপ – কারা শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে, এটা এখন খুঁজে বের করা দরকার।

মিয়ানমারে কিছু রাজনৈতিক পুনর্গঠন হয়েছে, কিন্তু দেশের রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর এখনও বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে এনএলডি সরকারের সাথে চুক্তির উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ছিল কিন্তু পরে তারা দেখেছে তাতমাদাওয়ের এখনও বড় ভূমিকা রয়েছে এখানে এবং তাদের অনুমোদন ছাড়া এনএলডি কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এনএলডি ও তাতমাদাও এমনকি এক হয়েও কাজ করছে। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি পুলিশের উপর হামলার পর তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যে অভিযান চালাচ্ছে, সেখানে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে সরকার।

জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নেতারা যখন সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকায়, তারা দেখতে পায় যে এনএলডি আর তাতমাদাও একই জায়গায় অবস্থান করছে। এটা তাদের মধ্যে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে এবং তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই অবস্থায় তারা দুটো কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে: একদিকে তারা সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মনে করছে রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের জন্য তাদেরকে যুদ্ধ করতে হতে পারে।

জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নেতারা এমনকি এটাও বোঝেন যে, আগামী বছরের নির্বাচনেও এনএলডি জয়ী হবে, এবং এরপরও শান্তি আলোচনার ধারা সামান্যই বদলাবে। সামরিক বাহিনী এরপরও সরকারের উপর কর্তৃত্ব অব্যাহত রাখবে।

কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে শান্তি প্রক্রিয়া কেন সঠিকভাবে এগুচ্ছে না, এর উত্তর হলো তাতমাদাও।
একবিংশ শতাব্দির পাংলং সম্মেলনের বিজ্ঞাপন দেয়া একটি বিলবোর্ড

No comments

Powered by Blogger.