অলিকে সামনে রেখে জামায়াতের নতুন মিশন? by সালমান তারেক শাকিল
বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ইস্যুটিকে সামনে রেখে হঠাৎই সক্রিয়
হয়ে উঠেছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
তার এই উদ্যোগে সামনে থেকে অবস্থান নিয়েছে জামায়াত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ
ঘুরে এসে দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়েছেন দলটির
সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু
হয়েছে গুঞ্জন। প্রশ্ন উঠেছে—কর্নেল (অব.) অলি আহমেদকে সামনে রেখে জামায়াত
কি কোনও নতুন মিশনে নেমেছে?
এলডিপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো দাবি করছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ’ হওয়ায় অলি আহমদকে সামনে আনা হয়েছে। এর পেছনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সহযোগিতা ও পরামর্শ রয়েছে তাদের প্রতি। তবে, গুরুত্বপূর্ণ ওই দেশ দু’টির নাম জানাতে রাজি হননি কেউই।
এলডিপির একজন সিনিয়র নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, মির্জা ফখরুল নির্বাচনের দিন টেলিভিশনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন একাধিকবার বঙ্গবন্ধুর কথা, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কথা উচ্চারণ করেছেন। মির্জা ফখরুল সাংগঠনিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণেই অলি আহমদকে সামনে আনা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকের সমর্থন আছে আমাদের ওপর।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক পক্ষ মনে করে, প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের আপত্তি ও দেশের ভেতরে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশের বিরোধিতার কারণে দলটির উচ্চপর্যায়ের একটি বড় অংশ চায় বিএনপিকে ছেড়ে যাক জামায়াত। আর বিষয়টি টের পেয়ে অলি আহমদকে সামনে আসার পরামর্শ দিয়েছে জামায়াত। ইস্যু হিসেবে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’র বিষয়টিকে নির্বাচন করেছে। এক্ষেত্রে বিএনপির যে অংশটি জামায়াতকে বাদ দিতে তৎপর, সেই মির্জা ফখরুলবলয়কে কোণঠাসা করার কাজটি সহজ হয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এলডিপির প্রধান অলি আহমদ নিয়মিত জামায়াতের বিরোধিতা করে এলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই। ওই মাসের ২ তারিখে অলি আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘জামায়াতের যারা এদেশে আছেন, তারা এদেশের নাগরিক হন, তাহলে রাজনীতি করার অধিকার তাদের আছে। তাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে।’ এরপর গত ১৫ মে এলডিপি আয়োজিত গোলটেবিলে আলোচনায় অংশ নেন জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার। গত ১৭ মে শুক্রবার অলি আহমদের ইফতারে অংশ নেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম।
জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘পবিত্র রমজান উপলক্ষে বছরে একবার আমরা বন্ধুপ্রতিম দলগুলোর আমন্ত্রণে ইফতারে অংশ নেই।’
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অলি আহমদ হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েই বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করছেন। এর জবাবও বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনে অলি আহমদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খান প্রতি-উত্তর দিয়েছেন।
জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমান মনে করেন, ‘অলি আহমদ যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা একেবারেই তার ব্যক্তিগত।’ তিনি বলেন, ‘তিনি কী বক্তব্য রাখবেন, কী ভালো মনে করবেন, তা তো তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই কর্নেল (অব.) অলি আহমদ কথা বলছেন। তিনি শুরু থেকেই এ বিষয়ে কথা বলছেন। আমরা বিষয়টিকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে ভাবছি। এক্ষেত্রে জামায়াত ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবেই আছে।’
‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও বিএনপির সহযোগিতা বা সমর্থন কতটা, যখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল চিকিৎসা নিতে ব্যাংককে, ওই সময়ে অলি আহমদ কথা বলছেন, বিষয়টি কিভাবে দেখছে এলডিপি’—এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বিদেশে, সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না। অলি আহমদ মনে করেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমন্বিতভাবে দাবি করা উচিত। এটা প্রাথমিক পর্যায়। ধীরে-ধীরে এটাকে ঈদের পর কার্যকরভাবে সামনে আনা হবে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান মনে করেন, ‘খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রথমে বিএনপিকেই ভাবতে হবে। তিনি জোটের নেত্রী, এটা ঠিক। কিন্তু মূল কনসার্ন বিএনপি। তারা কী করে, এটাই মূল বিষয়।’
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির কেউ-কেউ বলছেন, গত বছরের শেষ দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে গুরুত্ব কমতে থাকে ২০ দলীয় জোটের। একইসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে দৃশ্যত নিষ্ক্রিয়। কোনও-কোনও অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে কথা বললেও তা মূলত বিএনপির চাপেই বলেন। এ কারণে অলি আহমদকে সামনে এনে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে চাইছে জামায়াত।
জাতীয়তাবাদী ঘরানার কয়েকটি দলের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে অলি আহমদ সক্রিয় হয়েছেন জামায়াতকে সঙ্গে রেখে। যদিও এলডিপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব ছিল যোজন-যোজন। সবমিলিয়ে এমন এক সময়ে জামায়াতের সঙ্গে অলি আহমদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে, যখন দলটির সেক্রেটারি মাত্র কিছুদিন আগে ঘুরে এসেছেন কয়েকটি দেশ। সাধারণত, সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াত নেতাদের ওপর বাড়তি চাপ ছিল। তবে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উদারতা মিলেছে বলেও মনে করেন কেউ-কেউ।
গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান প্রথমে মালয়েশিয়া, এরপর ফিলিপাইন, লন্ডন ও তুরস্ক সফর করেছেন। লন্ডনে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমির খুরিশদ আহমেদের। এরপর তুরস্কে দেখা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দা ‘উতোলো’র সঙ্গে।
জামায়াতের ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে জামায়াতের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, ‘এবার প্রায় ২ সপ্তাহের মতো দেশের বাইরে ছিলেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি লন্ডনে ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন। তিনি একজন রাজনীতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব। এ কারণে অনেকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। রাজনৈতিক সফর হলে তো আমরা কর্মিসভা করতাম বড় করে। লন্ডনে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন আছেন। অনেকদিন পর তিনি বেড়াতে এসেছিলেন।’
জামায়াতের অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, সেক্রেটারি জেনারেলের এবারের সফরটি ব্যক্তিগত ছিল। তিনি এর আগে ভারত ও মিয়ানমারেও গেছেন।
এলডিপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এর আগে অলি আহমেদও ভারত ও মিয়ানমারে গেছেন। গত মার্চে তিনি ভারতে অন্তত ১৫ দিন অবস্থান করেন এবং তার এই সফরটি গোপন রাখা হয়েছে। সফরকালে তিনি ভারতের একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এদিকে, একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ফিলিপাইনে ডা. শফিক তার এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন প্রায় সাতদিন। তুরস্কে তিনি কতক্ষণ অবস্থান করেছেন, তার কোনও তথ্য দেয়নি ইউরোপ জামায়াতের কোনও সূত্র। এই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, ‘ধারণা করি, ডা. শফিকুর রহমান হয়তো লন্ডন আসা-যাওয়ার মধ্যে তুরস্কে যাত্রাবিরতি ছিল।’ তবে, তাও তিনি নিশ্চিত নন বলেও জানান আবু বকর মোল্লা।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘তুরস্কের আহমেদ দা’ উতোলোর সঙ্গে আমাদের সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ হয়েছে কিনা, এক্সাক্টলি বলতে পারবো না। তিনি খুব প্রভাবশালী নেতা।’
বিদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকটাই সহাস্যে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘বাইরের দেশ সাধারণত দেখা হয় না। দেশ দেখার সুযোগ পেয়ে এবার গিয়েছিলাম দেশের বাইরে। মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। লন্ডনে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছেন, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।’
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল জানান, এর আগেও জোটগত রাজনীতির ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে জামায়াত। ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট হওয়ার পর ২০১২ সালের এপ্রিলে জোটের পরিসর বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়।। এই বৃদ্ধিতে মূল কারিগর ছিলেন প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান, যাকে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে জামায়াত। ওই সময় জাগপা, লেবার পার্টি, এনডিপি, এনপিপিসহ কয়েকটি দল যোগ দিয়েছিল জোটে।
এলডিপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো দাবি করছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ’ হওয়ায় অলি আহমদকে সামনে আনা হয়েছে। এর পেছনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সহযোগিতা ও পরামর্শ রয়েছে তাদের প্রতি। তবে, গুরুত্বপূর্ণ ওই দেশ দু’টির নাম জানাতে রাজি হননি কেউই।
এলডিপির একজন সিনিয়র নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, মির্জা ফখরুল নির্বাচনের দিন টেলিভিশনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন একাধিকবার বঙ্গবন্ধুর কথা, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কথা উচ্চারণ করেছেন। মির্জা ফখরুল সাংগঠনিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণেই অলি আহমদকে সামনে আনা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকের সমর্থন আছে আমাদের ওপর।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক পক্ষ মনে করে, প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের আপত্তি ও দেশের ভেতরে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশের বিরোধিতার কারণে দলটির উচ্চপর্যায়ের একটি বড় অংশ চায় বিএনপিকে ছেড়ে যাক জামায়াত। আর বিষয়টি টের পেয়ে অলি আহমদকে সামনে আসার পরামর্শ দিয়েছে জামায়াত। ইস্যু হিসেবে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’র বিষয়টিকে নির্বাচন করেছে। এক্ষেত্রে বিএনপির যে অংশটি জামায়াতকে বাদ দিতে তৎপর, সেই মির্জা ফখরুলবলয়কে কোণঠাসা করার কাজটি সহজ হয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এলডিপির প্রধান অলি আহমদ নিয়মিত জামায়াতের বিরোধিতা করে এলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই। ওই মাসের ২ তারিখে অলি আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘জামায়াতের যারা এদেশে আছেন, তারা এদেশের নাগরিক হন, তাহলে রাজনীতি করার অধিকার তাদের আছে। তাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে।’ এরপর গত ১৫ মে এলডিপি আয়োজিত গোলটেবিলে আলোচনায় অংশ নেন জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার। গত ১৭ মে শুক্রবার অলি আহমদের ইফতারে অংশ নেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম।
জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘পবিত্র রমজান উপলক্ষে বছরে একবার আমরা বন্ধুপ্রতিম দলগুলোর আমন্ত্রণে ইফতারে অংশ নেই।’
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অলি আহমদ হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েই বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করছেন। এর জবাবও বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনে অলি আহমদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খান প্রতি-উত্তর দিয়েছেন।
জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমান মনে করেন, ‘অলি আহমদ যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা একেবারেই তার ব্যক্তিগত।’ তিনি বলেন, ‘তিনি কী বক্তব্য রাখবেন, কী ভালো মনে করবেন, তা তো তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই কর্নেল (অব.) অলি আহমদ কথা বলছেন। তিনি শুরু থেকেই এ বিষয়ে কথা বলছেন। আমরা বিষয়টিকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে ভাবছি। এক্ষেত্রে জামায়াত ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবেই আছে।’
‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও বিএনপির সহযোগিতা বা সমর্থন কতটা, যখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল চিকিৎসা নিতে ব্যাংককে, ওই সময়ে অলি আহমদ কথা বলছেন, বিষয়টি কিভাবে দেখছে এলডিপি’—এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বিদেশে, সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না। অলি আহমদ মনে করেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমন্বিতভাবে দাবি করা উচিত। এটা প্রাথমিক পর্যায়। ধীরে-ধীরে এটাকে ঈদের পর কার্যকরভাবে সামনে আনা হবে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান মনে করেন, ‘খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রথমে বিএনপিকেই ভাবতে হবে। তিনি জোটের নেত্রী, এটা ঠিক। কিন্তু মূল কনসার্ন বিএনপি। তারা কী করে, এটাই মূল বিষয়।’
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির কেউ-কেউ বলছেন, গত বছরের শেষ দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে গুরুত্ব কমতে থাকে ২০ দলীয় জোটের। একইসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে দৃশ্যত নিষ্ক্রিয়। কোনও-কোনও অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে কথা বললেও তা মূলত বিএনপির চাপেই বলেন। এ কারণে অলি আহমদকে সামনে এনে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে চাইছে জামায়াত।
জাতীয়তাবাদী ঘরানার কয়েকটি দলের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে অলি আহমদ সক্রিয় হয়েছেন জামায়াতকে সঙ্গে রেখে। যদিও এলডিপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব ছিল যোজন-যোজন। সবমিলিয়ে এমন এক সময়ে জামায়াতের সঙ্গে অলি আহমদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে, যখন দলটির সেক্রেটারি মাত্র কিছুদিন আগে ঘুরে এসেছেন কয়েকটি দেশ। সাধারণত, সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াত নেতাদের ওপর বাড়তি চাপ ছিল। তবে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উদারতা মিলেছে বলেও মনে করেন কেউ-কেউ।
গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান প্রথমে মালয়েশিয়া, এরপর ফিলিপাইন, লন্ডন ও তুরস্ক সফর করেছেন। লন্ডনে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমির খুরিশদ আহমেদের। এরপর তুরস্কে দেখা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দা ‘উতোলো’র সঙ্গে।
জামায়াতের ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে জামায়াতের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, ‘এবার প্রায় ২ সপ্তাহের মতো দেশের বাইরে ছিলেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি লন্ডনে ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন। তিনি একজন রাজনীতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব। এ কারণে অনেকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। রাজনৈতিক সফর হলে তো আমরা কর্মিসভা করতাম বড় করে। লন্ডনে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন আছেন। অনেকদিন পর তিনি বেড়াতে এসেছিলেন।’
জামায়াতের অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, সেক্রেটারি জেনারেলের এবারের সফরটি ব্যক্তিগত ছিল। তিনি এর আগে ভারত ও মিয়ানমারেও গেছেন।
এলডিপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এর আগে অলি আহমেদও ভারত ও মিয়ানমারে গেছেন। গত মার্চে তিনি ভারতে অন্তত ১৫ দিন অবস্থান করেন এবং তার এই সফরটি গোপন রাখা হয়েছে। সফরকালে তিনি ভারতের একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এদিকে, একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ফিলিপাইনে ডা. শফিক তার এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন প্রায় সাতদিন। তুরস্কে তিনি কতক্ষণ অবস্থান করেছেন, তার কোনও তথ্য দেয়নি ইউরোপ জামায়াতের কোনও সূত্র। এই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, ‘ধারণা করি, ডা. শফিকুর রহমান হয়তো লন্ডন আসা-যাওয়ার মধ্যে তুরস্কে যাত্রাবিরতি ছিল।’ তবে, তাও তিনি নিশ্চিত নন বলেও জানান আবু বকর মোল্লা।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘তুরস্কের আহমেদ দা’ উতোলোর সঙ্গে আমাদের সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ হয়েছে কিনা, এক্সাক্টলি বলতে পারবো না। তিনি খুব প্রভাবশালী নেতা।’
বিদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকটাই সহাস্যে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘বাইরের দেশ সাধারণত দেখা হয় না। দেশ দেখার সুযোগ পেয়ে এবার গিয়েছিলাম দেশের বাইরে। মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। লন্ডনে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছেন, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।’
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল জানান, এর আগেও জোটগত রাজনীতির ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে জামায়াত। ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট হওয়ার পর ২০১২ সালের এপ্রিলে জোটের পরিসর বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়।। এই বৃদ্ধিতে মূল কারিগর ছিলেন প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান, যাকে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে জামায়াত। ওই সময় জাগপা, লেবার পার্টি, এনডিপি, এনপিপিসহ কয়েকটি দল যোগ দিয়েছিল জোটে।
No comments