পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বন্ধ হয়নি, তবে...

পাকিস্তানিদের ভিসা দেয়া বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নানা কারণে ইসলামাবাদ মিশন থেকে ভিসা ইস্যু করা যাচ্ছে না। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশনের ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকার ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী গতকাল নিজ দপ্তরে সংবাদিকদের বলেন, আমরা কারও ভিসা দেয়া বন্ধ করিনি। তবে ব্যক্তি বিশেষে হয়তো ভিসা না-ও পেতে পারেন। এটা সারা দুনিয়াতে হয়। সন্ত্রাসসহ অপরাধী কর্মকাণ্ডে আবেদনকারী কোন সম্পৃক্ততা আছে কি-না? তার খোঁজ খবর নিতে হয়। এটি বিশ্বব্যাপী প্র্যাকটিস।
একটি রিপোর্ট এসেছে আমরা পাকিস্তানিদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি, না আমাদের ভিসা বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পাকিস্তান আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ভিসা দেয়নি। বিশেষ করে আমাদের কাউন্সেলরকে (কনস্যুলার) ভিসা দেয়নি। তিনি পাকিস্তানে না গেলে ওখানে ভিসা প্রক্রিয়া কিভাবে হবে? প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, জানি না এ নিয়ে তারা কী বলবেন! আমি আশা করবো, ঝুলে থাকা  (পেন্ডিং) ভিসা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) ভিসা নবায়নের আবেদনটির তারা দ্রুত সমাধান করবেন। এ সময় মন্ত্রী অভিযোগ করেন-পাকিস্তান জোর করে বাংলাদেশকে ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে কোন সমস্যার সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস কাউন্সেলর ও ভারপ্রাপ্ত ভিসা কাউন্সেলর মুহম্মদ ইকবাল হোসেনের ভিসার আবেদন ৪ মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখা এবং নতুন নিয়োগ পাওয়া পরবর্তী ভিসা কাউন্সিলরের ভিসার আদেন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রতিবাদে ১৩ মে থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন পাকিস্তানিদের ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে। সোমবার রাতে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করে। মঙ্গলবার এ নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। কর্মকর্তারা এটা নিশ্চিত করেন যে ইসলামাবাদ মিশনে লোকবল সংকটের কারণে ৭ দিনে কোন ভিসা ইস্যু হয়নি।
কিন্তু করাচির বাংলাদেশ মিশন ঠিকই ভিসা দিচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের নভেম্বরে ভিসা কর্মকর্তার পদ শূন্য হওয়ায় ভিসা সেকশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান প্রেস কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন। সে মতে তিনি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য গত জানুয়ারিতে পাকিস্তান সরকার বরাবর আবেদন করেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আশ্বাসও দেয়া হয়। কিন্তু ফাইল অনুমোদন হয়নি। এ অবস্থায় গত ৩০শে মার্চ ইকবাল হোসেনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেয়েকে নিয়ে ইসলামবাদে থাকা ওই কর্মকর্তা দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আর এ জন্য তিনি গত ২৭শে এপ্রিল তার ব্যক্তিগত মালামাল ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। এদিকে ঢাকায় থাকা ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে শেষ বেলায় তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গোছানোর জন্য পাকিস্তান যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আবেদনও প্রত্যাখ্যান করে ঢাকাস্থ পাকিস্তান মিশন। এর আগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ভিসা কর্মকর্তাকেও ভিসা দেয়নি পাকিস্তান। সব মিলে চরম অবস্থার মুখে পড়ে ইসলামাবাদ মিশন। জনবল সংকটসহ সার্বিক বিষয়ে দফায় দফায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি হয়।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের ডেকেও বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করে সেগুনবাগিচা। কিন্তু ফল হয়নি। বরাবরই পাকিস্তান ‘আবেদন প্রক্রিয়াধীন’ রয়েছে জানিয়েছে কালক্ষেপন করে। উপায়ান্তর না দেখে ভিসা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ১৩ই মে দায়িত্ব থেকে হাই কমিশনারের কাছে ইস্তফা দেন। ফলে ভিসা সেকশনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। মন্ত্রী হাই কমিশনের লোকবল সংকট এবং অচলাবস্থার বিস্তারিত না বলেও তিনি আশা করেন পাকিস্তান সমস্যাটির সমাধনে আন্তরিক হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি বড় কোনো ইস্যু নয়। এটাকে কেন্দ্র  করে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েনের আশঙ্কা নেই। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, বাংলাদেশ আশা করে তারা সমস্যাটির সমাধান করবে। এদিকে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে নতুন হাই কমিশনার হিসেবে পাকিস্তানী কূটনীতিক সাকলাইন সায়েদার নাম প্রস্তাব করে ইসলামাবাদ।
তার এগ্রিমো আসার পর এটির অনুমোদন পেতে দফায় দফায় চেষ্টা চালায় পাকিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশ তা অনুমোদন করেনি, তাকে গ্রহণে সম্মতি দেয়নি। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায়। অবশ্য বাংলাদেশ পরবর্তীতে নতুন নাম চেয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান নতুন নাম পাঠায়নি। হাই কমিশনারের এগ্রিমে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান এমনটি করছে কি-না? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা অপ্রাসঙ্গিক এই কারণে যে তারা একটা নাম পাঠিয়েছেন, আমরা সেটা গ্রহণ করিনি। তাহলে আরেকটা নাম পাঠাবে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তারা নতুন কোনো নামই পাঠায় নি। আমাদের দিক থেকে কেনো সমস্যা নেই। তারা নতুন নাম পাঠালে অবশ্যই ইকিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চলছে। ওই বিচার নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তান। তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়টিকে একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দফায় দফায় এক কড়া প্রতিবাদ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.