দেশের উন্নয়নে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাকশাল গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু -প্রধানমন্ত্রী



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করে একটি প্লাটফরম করেন। যেটাকে অনেকে বাকশাল হিসেবে বলে। বাকশাল ছিল বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক আওয়ামী লীগসহ দেশের সব স্তরের মানুষের। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। সবাইকে এক প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, আমাদের সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনের সব কর্মকর্তা সবাইকে একটি প্ল্যাটফরমে নিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক কাজে তাদেরকে সম্পৃক্ত করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য এই জাতীয় ঐক্য তিনি গড়ে তোলেন। গতকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। এই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেয়ার জন্য চেষ্টা করেছে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া। কিন্তু পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগের শেকড় জনগণের কাছে প্রোথিত, বাংলার মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শেকড় এমনভাবে প্রোথিত, এত চেষ্টায়ও এই সংগঠনকে শেষ করতে পারেনি। এটা দ্বারা প্রমাণিত হয়, যারা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে, তাদের শেষ করা যায় না। আর যারা উচ্ছিষ্ট ছিটিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তাদের গোড়ায় কিছু থাকে না, সেজন্য ক্ষমতা ছাড়া তাদের অস্তিত্বই থাকে না। এটা এখন প্রমাণিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাঙালিকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। তার নেতৃত্ব-নির্দেশনায় বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর পর বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে মনোনিবেশ করেছিলেন, কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে পরাজিত শক্তি বাঙালি জাতিকে নিঃশেষ করে ফেলার চেষ্টা চালায়। এরপর ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, তা মুছে ফেলা হয়েছিল, স্বাধীনতাযুদ্ধে তার নেতৃত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু পারেনি। ২১ বছর তারা সরাসরি বা সরাসরি নয়, এভাবে ক্ষমতায় ছিল। তখন দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়। তোষামোদি, খোশামোদি, চাটুকারের দল সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। জনগণ তখন সত্যিকারের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করেছে বলে দেশ এখন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থ দিয়ে তারা মরুভূমিতে ফুল ফুটিয়েছিল, আর আমাদের মরুভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধেই ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম। এসময় তিনি বলেন, আমাদের পাট-চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অর্থকরী ফসল বিদেশে রফতানি করে সব অর্থ নিয়ে যেত পাকিস্তানিরা। তাদের ওখানে তিন বার রাজধানী পরিবর্তন হয়।
যতবার রাজধানী পরিবর্তন হয়েছে, ততবার অনেক টাকার প্রয়োজন হয়েছে। সব টাকা দিতে হয়েছে আমাদের। আর উন্নতি হয়েছে ওখানে। বাঙালিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে এগিয়ে ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের চিন্তা-চেতনা, খাদ্যাভ্যাস কোনো কিছুতেই পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের কোনো মিল নেই। শিক্ষা-দীক্ষা-সংস্কৃতি সবদিক থেকে আমরা উন্নত ছিলাম। সংখ্যা গরিষ্ঠের ওপর সংখ্যা লঘিষ্ঠের বৈষম্য-শোষণ-নির্যাতনের সময় ছিল সেটি। এমনকি দেশভাগ (১৯৪৭ সালে)-এর পর ভারতের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে বাঙালিরাই এগিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা বাঙালিরাই করেছে। পাকিস্তানের উঁচু-লম্বা সৈন্যরা কিন্তু এগিয়ে যায়নি, বাঙালি রেজিমেন্টই এগিয়ে গিয়েছিল। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে বাঙালি ছাড়া রক্ষা হতো না।
এরপর ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা ছয় দফা দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দুই মাস পরপর আমাদের ঋতু বদলায়, সবই বদলায়। যার ফলে আমরা খুব বিস্মৃত পরায়ণ। নাহলে যে পাকিস্তানিরা বাঙালিকে অত্যাচার করেছে, স্বাধীনতার সময় কীভাবে একটা অংশ সেই পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করলো। স্বাধীনতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মিত্র বাহিনীকেও দেশে ফেরত পাঠান। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন স্বাধীনচেতা নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন নেতার কারণে। বিশ্বের কোনো দেশে মিত্রবাহিনী যুদ্ধের পর ফেরত যায়নি, শুধু বাংলাদেশেই এটা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাবো। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। এ দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করব। এ দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, এসব করতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, রমেশ চন্দ্র সেন, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের (উত্তর) সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, (দক্ষিণ) সভাপতি আবুল হাসনাত, সাবেক ছাত্রনেতা আমিরুল আলম মিলন, আওয়ামী লীগ নির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.