জুমুয়ার নামাজের গুরুত্ব

আল্লাহ বলেছেন, "يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ " অর্থাৎ শুক্রবারে যখন নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, "فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ" তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করতে দ্রুতবেগে যাও। জুম্মার নামাযের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? জুম্মার নামাযের সময় মহানবী (সাঃ)মানুষকে কুরআনের আয়াত পাঠ করে শুনান। জুম্মার নামায হল সেই সময় যখন আপনাদের পুনর্জাগরিত হওয়ার কথা। জুম্মার খুতবা আল্লাহর একটি অসাধারণ বিধান, যা হল এই উম্মতের সাপ্তাহিক সম্মেলন। এটা একটা সাপ্তাহিক সম্মেলন।যখন আপনাদের কোন বিশেষ অনুষ্ঠান থাকে, কোন বক্তৃতা কিছু দিনের মধ্যেই হবে, বক্তা আসবে। কিন্তু সবাইকে কি অনুষ্ঠানে দেখা যায়? অনেক মানুষই আসে কিন্তু সবাই তো আসে না। কিন্তু একটা ব্যাপার সব সময়ই ঘটে, তা কোন বিখ্যাত বক্তাই হোক বা ততটা বিখ্যাত কেউ না হোক, বা কোন বক্তা না থাকলেও বা কোন ইমাম থাকলেও সবাইকে কি জুম্মার নামাযে পাওয়া যায়? এটা একটা ঐশ্বরিক বিধান।এটার জন্য কোন লিফলেট বিতরণ করতে হয়না, এটার জন্য ফেসবুকে কোন ইভেন্ট পেজ খুলতে হয় না। কাউকে কোন ইমেইল পাঠাতে হয় না। এটা একটা কার্যক্রম যেটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা নিজে ঠিক করে দিয়েছেন যেন আমরা মহানবী (সাঃ)-এর পদ্ধতিকে হারিয়ে না ফেলি।
শুক্রবারে যখনই জুম্মার নামাযের আযান দেওয়া হয় তখন দ্রুত আল্লাহকে স্মরণ করতে যাও। فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ আল্লাহকে স্মরণ করতে দ্রুত যাও। এই বিধানের মধ্যে এই পদ্ধতিকে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।এখান থেকেই এই সূত্রপাত।একারনেই আমাদের বাস্তব অবস্থায় আমি বলব জুম্মার খুতবা হল সবচেয়ে বড় আমানা, এটা হল সবচেয়ে বড় সম্পদ যেটা সব মসজিদেরই আছে। জুম্মার খুতবা এত শক্তিশালী, এত মর্মস্পর্শী হওয়া উচিত, যে ব্যক্তি ইসলামের কোন কিছুই জানেনা সেও যেন এটা শুনে কেঁপে উঠে। জুম্মার খুতবা এত উদ্দীপনাপূর্ণ, এত ভাল হওয়া উচিত যে কেউ ভীষণ পরিশ্রান্ত হলেও হাই তুলবেনা। এটা একটা আমানা-সব মসজিদকেই ভরসা করে এই দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। তাদের উচিত মানুষের কাছে আল্লাহর আয়াত পৌঁছে দেওয়া। মানুষের কাছে আল্লাহর আয়াত পৌঁছানোর সবচেয়ে ভাল সুযোগ হল শুক্রবারের নামায। শুক্রবারের নামাযে এটাই দায়িত্ব। ফাসআউ ইলা যিকরিল্লাহ। আমাদেরকে বলা হয়েছে, "আল্লাহকে স্মরণ করতে দ্রুত যাও। কেনাবেচা বন্ধ কর"। وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
কিন্তু আজকাল কি ঘটে? আমাদের সময়ে ঘটা অন্যতম বিপর্যয়কারী একটা ঘটনা। বেশির ভাগ মানুষ জুম্মার নামাযে খুতবা শুরুর আগে নাকি পরে এসে হাজির হয়? পরে আসে।বেশির ভাগ মানুষই পরে আসে।সিংহভাগ মানুষ আসে যখন প্রায় ইকামত শুরু হয়। সুতরাং তারা কি আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে?না। কারণ যেহেতু তারা আরবী বুঝেনা তাই নামাযে কি পাঠ করা হচ্ছে তা তারা বুঝেনা। একমাত্র যে জিনিসটা তারা হয়তোবা বুঝতো সেটা কি? খুতবাটাই তো। কিন্তু তারা তো সে সময় আসেনি। তাই আমাদের এখন আগে আসার ব্যাপারে খুতবা দেওয়া দরকার। আগে আসার ব্যাপারে খুতবা দেওয়া উচিত।যেন আমরা এই প্রথাকে পুনরূজ্জীবিত করতে পারি। আমাদেরকে এটা শুরু করতে হবে। যদি তাদের আসতে ৫ মিনিট দেরী হয় তবে খুতবাও ৫ মিনিট অতিরিক্ত বলতে হবে। খুবই দৃঢ়ভাবে বলতে হবে কেন আমাদের খুতবায় আগে আসা দরকার এবং এটা আল্লাহর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য তিনি এটাকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ করেছেন যে আমাদের আল্লাহর স্মরণে দ্রুত যেতে বলেছেন এবং আমাদের কেনাবেচা বন্ধ রাখতে বলেছেন তখন। তোমরা যদি জানতে যে এটা করাই তোমাদের জন্য ভাল। তারপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা পরিশেষে মহানবী (সাঃ)-কে একটা উদাহরণ দিয়েছেন। فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ নামায শেষ হয়ে গেলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর। তোমাদের কাজে, ব্যবসার ফিরে যাও। ওয়াবতাগু মিন ফাদলিল্লাহ। কিন্তু আল্লাহ আরো বলেছেন, " وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرً" অর্থাৎ আল্লাহকে বেশি করে স্মরণ কর।আপনারা কি জানেন কিভাবে এক ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি করে স্মরণ করতে পারে? বেশিরভাগ সময়ই জুম্মার নামায শেষ হয়ে গেলে আপনাদের মনে হয় যে দিনের ধর্মকর্ম করার অংশ শেষ এখন আমি পার্টি করতে পারি। সর্বোপরি আজ তো শুক্রবার রাত। বিশেষকরে আমেরিকায় এমন ঘটে, ঠিক না? কিন্তু খুতবাটা যদি খুব শক্তিশালী হয় তাহলে সেটা অন্তত ওই দিনটা পর্যন্ত আপনার সাথে টিকে থাকে। এভাবেই আল্লাহকে বেশি স্মরণ করা হয়। তাই আল্লাহ বলেছেন, "ওয়ায কুরুল্লাহা কাছীরাল লাআল্লাকুম তুফলিহূন" যেন তোমরা সফলকাম হও। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সফলকামদের মধ্যে একজন করেন। وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا তারা যখন কোন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে...
এবং এটা মহানবী (সাঃ)-এর জীবনে একটা বিশেষ ঘটনা যে, যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন তখন একটা ব্যবসায়ীক কাফেলা সে জায়গা অতিক্রম করে যাচ্ছিল এবং মানুষ সেই কাফেলার দিকে দৌড়ে গিয়েছিল। মানুষ এখনও এই কাজটা করে। তারা নামাযে সালাম দেয় এবং সালাম শেষ হওয়া মাত্র তারা খুঁজতে থাকে যে তাদের জুতাটা আসলে কোথায় আছে। তারা তাড়াহুড়ো করে। দৌড়াও,দৌড়াও,দৌড়াও। খুব দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে। এখান থেকে বের হতে হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে এই আচরণ গড়ে তুলেছি।সুবহানাল্লাহ। তারা ব্যবসার দিকে তাড়াহুড়ো করে যায়।
ওয়া তারাকূকা কাইমা।ওয়ানফাদ্দু ইলাইহা ওয়া তারাকূকা কাইমা। তারা ওই দিকে দৌড়ে গেল আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে। কুল মাইনদাল্লাহি খাইর। তাদেরকে বলুন আল্লাহর কাছে যা আছে তা তুলনামূলকভাবে ভাল। আল্লাহর কাছে কি আছে? এমনকি আল্লাহ এটা বলেন নাই যে মহানবী (সাঃ)-এর কাছে যা আছে তা তুলনামূলকভাবে ভাল। তিঁনি এটাও বলেন নাই যে শুক্রবারের নামায তুলনামূলকভাবে ভাল। তিঁনি বলেছেন, "আল্লাহর কাছে যা আছে তা তুলনামূলকভাবে ভাল"। এবং আল্লাহর কাছে আছে ''ওয়াল্লাহু ইন্দাহু হুস্নুল মা'আব'' আল্লাহর কাছে আছে পুরস্কার...জান্নাত। তোমরা কোন ব্যবসার চুক্তি করতে পারবে যেটা তোমাদের জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে? কি করলে সেখানে যেতে পারবে? আসো, তোমাদের আরো ভাল কিছু দেখাই। কুল মাইনদাল্লাহি খাইরুম মিনাল্লাহ ইওয়া মিনাত্তিজারা। এটা যে কোন বিনোদন, যে কোন সিনেমা... যেটা শুরু হবে ২:৪৫ এ আর জুম্মার নামায শেষ হবে ২:১৫ তে। সুতরাং আপনার কাছে মাত্র ৩০ মিনিট আছে সিনেমা হলে যাওয়ার জন্য। এটা তার চেয়ে ভাল।যে কোন বিনোদনের চেয়েও। কোন ফাইনাল গেম, কোন শিরোপা জেতার খেলা যাই হোক না কেন তার চেয়ে এটা ভাল।ওয়া মিনাত্তিজারা শব্দটি যে কোন ধরণের ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড বুঝায়। ওয়াল্লাহু খাইরুর রাঝিকীন। এবং দুশ্চিন্তা করনা তোমাদের ব্যবসার কোন ক্ষতি হবেনা জুম্মার নামাযে আসার জন্য কারণ আল্লাহ বলেছেন, "আল্লাহ হল প্রদানকারীদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল"।ওয়াল্লাহু খাইরুর রাঝিকীন। কি সুন্দর ভাবে এখানে শব্দটাকে ব্যবহার করা হয়েছে।মানুষ কেন জুম্মার নামাযের পড়ে তাড়াহুড়ো করে ফিরে যাওয়ার জন্য? অনতিবিলম্বেই। নামায ঠিক মত শেষ না করেই। কেন তারা দেরী করে আসে? কারণ তারা ভাবে তাদের রিজক কমে যাবে। আল্লাহ এখানে বলেছেন, " আস! আল্লাহ আরো ভাল প্রদানকারী...আল্লাহ সবচেয়ে ভাল প্রদানকারী"। সুবহানাল্লাহ!

No comments

Powered by Blogger.