দালালরা আমারে বেইচা দিছে by রেজাউল প্রধান

‘দালালরা আমারে বিদেশে বেইচা দিছে। তুমি আমারে দেশে ফিরাই নিয়া যাও। ওরা আমাকে ঘরে আটকে রাখে, যখন তখন আমার ওপর নির্যাতন করে। তুমি আমারে দেশে ফিরাই না নিয়া গেলে আমি বিদেশে মইরা যাবো।’ এমনি ভাবে আকুতি করে স্বামী সামিরুল ইসলামকে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে মোবাইলফোনে কথাগুলো বলে তার স্ত্রী তানজিলা আক্তার। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৭ নং হাজীপুর ইউনিয়নের দেহানগর (রাজশাহী পাড়া) গ্রামে। স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য পীরগঞ্জ থানায় এজেন্সির দালাল সম্রাট ও স্থানীয় দালাল  শাহাজান ও তার স্ত্রী অলেদা বেগমকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন সামিরুল।
এজাহারে বলা হয়, স্থানীয় দালালদ্বয় ঘটনার ২/৩ মাস আগে তানজিলার স্বামী সামিরুলকে বলতো যে, তোমার স্ত্রীকে দেশে রেখে কি হবে- সৌদি আরবে পাঠাও, সেখানে মোটা অঙ্কের টাকা বেতন পাবে। তোমার সংসার সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে চলবে বলে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে আসে। সে তাদের কথায় রাজি হয়ে বহুকষ্টে ২০ হাজার টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে পাসপোর্ট ও ভিসা করে দেয়।
যা পাসপোর্ট নং-ইজ০৪৭৮৯১১, তাং-১১/০৬/২০১৮ ইং। পরবর্তীতে ঐ দালালরা তানজিলাকে ঢাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেয়। গত ২৮/০৩/২০১৮ইং তারিখে মেসার্স তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, বাড়ি ৩৫/ডি, রোড নং-০৭, ব্লক-জি, বনানী, ঢাকা-১২১৩, লাইসেন্স নং-আর এল ৪৩৬ এজেন্সি’র দালাল সম্রাটের মাধ্যমে (ভিসা নং-ঝঅ-ও-২০১৮-০১৭৬৪২৮) সৌদি আরবের রিয়াদে পাঠায়। তানজিলা বিদেশ যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে স্বামী সামিরুলকে মোবাইলফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আদম ব্যাপারী আমাকে বিদেশে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে।
তারা একটি ঘরে আমাকে তালা  মেরে রাখে। আমাকে যখন তখন মারপিট, শারীরিক, মানসিক ও নির্যাতন করে। তারা আমাকে মেরে ফেলবে। তুমি আমারে দেশে ফিরাই নিয়ে যাও।’ সে আরো বলে যে, আমি অর্ধাহারে-অনাহারে বহু কষ্টে দিনযাপন করছি। এ কথা শোনার পর আমি স্থানীয় দালালদের বাড়িতে যাই, তাদের স্ত্রী তানজিলার ওপর নির্যাতনের বিষয়গুলো জানালে তারা আমাকেই উল্টাপাল্টা কথা বলে এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তারপরও আমি শাজাহানকে নিয়ে ঢাকায়  দালাল সম্রাটকে ঘটনার বিষয়ে অবগত করি এবং আমার স্ত্রীকে ফেরত আনার কথা বলি। কিন্তু সম্রাট আমাকে বলে যে, তোমার স্ত্রীকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে পাচার করেছি। তোমার স্ত্রীকে আর  কোনোদিনও ফেরত পাবে না। পীরগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রশীদ এজাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবুল বাসার বলেন, সরজমিন তদন্ত করে সামিরুলের স্ত্রী তানজিলা সৌদি আরবে রিয়াদে যাওয়ার ব্যাপারে সত্যতা পেয়েছি। মেসার্স তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল-এর দালাল সম্রাট মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, সামিরুলের স্ত্রী তানজিলা সৌদি আরবের রিয়াদে ভালোই আছে। মূলত সামিরুল অকর্মা ও অলস হওয়ায় তার স্ত্রী’র টাকায় বসে বসে খেতো। স্ত্রী আর টাকা না পাঠানোর কারণে সে আমাদের বিরুদ্ধে পীরগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে সামিরুল ইসলাম বলেন, আমি একজন গরিব অসহায়, আমার ভিটেমাটিটুকুও নাই, তাই স্ত্রীকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

No comments

Powered by Blogger.