ইমরান খানের প্রস্তাবে অনড় ভারত

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রস্তাবে দৃশ্যত অনড় ভারত। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থায় আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ‘ভুল’ না করার কথা বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে তিনি আশাবাদী। কিন্তু বুধবার ভারত জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে বিমান হামলা বা আকাশপথে যুদ্ধ হচ্ছে তা আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের ফল। অর্থাৎ ভারত বলতে চাইছে, পাকিস্তান আগ্রাসী অবস্থান নেয়ার কারণে ওই নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের মধ্যে আকাশপথের লড়াই চলছে। ভারতের এমন অবস্থানে লড়াই আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়টিকে জোরালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে আরেকটি ঘটনা। তা হলো, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাই কমশিনার সৈয়দ হায়দার শাহকে তলব করে ভারত।এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এতে আরো বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে তার তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারপর তিনি ‘বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন’ চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধে গেছেন। দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এ কারণে ভারত ওই প্রতিশোধে গেছে।
ওদিকে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সংলাপের জবাবে তার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে ভারত তার হাতে প্রমাণ হিসেবে দলিল তুলে দিয়েছে। তাতে পালওয়ামা হামলায় জৈশ ই মোহাম্মদের জড়িত থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তাতে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ভিতরে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্যাম্পের উপস্থিতি  আছে। তাদের নেতারাও রয়েছেন পাকিস্তানের ভিতরে।
ইমরান খান এ উত্তেজনা নিয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি ভুল হিসাবের বড় বিপদের কথা উল্লেখ করেছেন। দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি পালওয়ামা হামলায় যে বেদনা সৃষ্টি হয়েছে তাও স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রস্তাব করেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো সংলাপের জন্য প্রস্তুত তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের ভিতরে সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো থাকার কথা ক্রমাগতভাবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সেনা নেতারা অস্বীকার করার কারণে ভারত এর নিন্দা জানিয়েছে। তাই ভারতীয় নেতারা ইমরান খানের প্রস্তাবকে কোনো রকম উল্লেখযোগ্য ছাড় না দিয়েই অথবা কোনো রকম ব্যবস্থা না নিয়েই উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।
ওআইসিতে যাচ্ছেন সুষমা স্বরাজ, প্রতিবাদে পাকিস্তানের বর্জন
পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনাকর অবস্থার মধ্যে আবু ধাবিতে অনুষ্ঠেয় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) বৈঠকে যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তাকে গেস্ট অব অনার হিসেবে এতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ওআইসি। এমন আমন্ত্রণের প্রতিবাদে পাকিস্তান ওই সম্মেলন বর্জনের হুমকি দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে ভারতীয় মিডিয়া অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে ও জি নিউজ। এতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশটির বিরুদ্ধে সুষমা স্বরাজ সংযুক্ত আরব আমিরাত বা সৌদি আরবের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, সুষমা স্বরাজ এমন এক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন যখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। পাকিস্তানের হাতে বন্দি হয়েছেন ভারতের বিমান বাহিনীর একজন পাইলট। এ উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওআইসিতে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে বুধবার প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। তিনি হুমকি দিয়েছেন, ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন না। তিনি জিও নিউজ শোতে বলেছেন, এ নিয়ে আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। (ভারতকে) আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে আমার বিরোধিতার কথা জানিয়েছি। আমি তাকে পরিষ্কার করে বলেছি, ভারত আগ্রাসন দেখিয়েছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ওআইসিতে, যেখানে সুষমা স্বরাজ উপস্থিত থাকবেন, সেখানে যোগ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথমবার ওআইসির সম্মেলনে ভারতকে গেস্ট অব অনার হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওআইসি হলো একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। তারা মুসলিম বিশ্বকে রক্ষা ও এর অধিকারের রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত, এবং তারা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি আবু ধাবিতে সম্মেলনের উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ওদিকে অনলাইন জি নিউজ বলেছে, পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটকে মুক্তি দেয়া হবে, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমে এসেছে। কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ কথা লিখেছে জি নিউজ। তবে ভারতের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডদের মহারাষ্ট্র ও গুজরাট উপকূলে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল যান।

No comments

Powered by Blogger.