নির্জন দ্বীপে একলা!

২৮ বছর আগে কিম সিন-ইয়োল ও তাঁর স্বামী অন্য রকম এক সিদ্ধান্ত নেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধপূর্ণ এক নির্জন দ্বীপে জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ওই সময় থেকে তাঁদের সঙ্গে কত মানুষ আসা-যাওয়া করলেন—পুলিশ, বাতিঘরের অপারেটর, পর্যটক। থেকে গেলেন শুধু কিম সিন-ইয়োল ও তাঁর স্বামী। গত বছর স্বামীর মৃত্যুর পর এখন দ্বীপটির একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে রয়ে গেছেন তিনি।
আজ শুক্রবার সিএনএন অনলাইনে উঠে এসেছে দকদো বা তাকেশিমা দ্বীপের একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা ৮১ বছর বয়সী কিম সিন-ইয়োলের গল্প। দ্বীপটির দুটো নামের কারণ হচ্ছে বিরোধপূর্ণ জায়গায় হওয়ায় দুই পক্ষ এটাকে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী নামকরণ করেছে। কেউ কারও দেওয়া নামে ডাকে না। দ্বীপটির শাসক হিসেবে দাবিদার দক্ষিণ কোরিয়া ডাকে দকদো নামে। দ্বীপটির আরেক দাবিদার জাপান এর নাম দিয়েছে তাকেশিমা।
খবরে বলা হয়, আবহাওয়া খারাপ হলেই দ্বীপটি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিশ্ব থেকে। দ্বীপের চারপাশের সাগরের (জাপান সাগর) পানিতে মাছের প্রাচুর্য রয়েছে। কিম সিন পেশায় ছিলেন স্বাধীন ডুবুরি। স্থানীয়ভাবে এ ধরনের পেশাজীবীকে বলা হয় ‘হায়েনইয়ো’। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ২০১৭ সালে তিনি পেশা ছেড়ে দেন। গত বছরের অক্টোবরে স্বামী কিম সুং-দো মারা যাওয়ার পর তিনি একা হয়ে পড়েছেন। এরপরও দ্বীপ ছেড়ে আসতে রাজি নন তিনি।
তাঁর জামাতা কিম কিয়াং-চুল জানিয়েছেন, তাঁর শাশুড়ি বলেন, দকদোর জীবন শান্তির। সেখানে থাকলে মন ভালো থাকে।
দ্বীপটি নিয়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ঐতিহাসিক তিক্ততা রয়েছে। জাপানের দাবি, পাহাড়ি দ্বীপটি দক্ষিণ কোরিয়া অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। সতেরো শতক থেকে এটি একটি স্বাধীন অঞ্চল।
১৯৫০ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দ্বীপটি। সেখানে তারা সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী মজুত রাখত। দেশটির মতে, দ্বীপের সাগরের তলদেশে গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে।
তবে দ্বীপটি নিয়ে দুই দেশের বিরোধ থাকলেও সেটির অবস্থান জাপানের চেয়ে কোরিয়ার মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি এবং কোরিয়ার পর্যটকদের যাতায়াতই সেখানে বেশি।
দ্বীপটিতে এখন সংস্কারের কাজ চলছে। এপ্রিল নাগাদ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত কিম সিন তাঁর মেয়ে কিম জিন-হিয়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকা পোহাংয়ে থাকবেন।
দকদো দ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে দেশটির অনেক নাগরিক সেখানে বসবাস করতে যেতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্বীপটিতে শুধু একটি বাড়ি থাকার মতো ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে কিম সিনের শরীর এখন বেশির ভাগ সময় খারাপ থাকায় তাঁর মেয়ে ও জামাতা ওই দ্বীপে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ব্যবসায়িক লাইসেন্স পেয়েছেন মেয়ে কিম জিন। ওই লাইসেন্স ব্যবহার করে পর্যটকদের কাছে তিনি স্ট্যাম্প, সাবান ও সামুদ্রিক খাবার বিক্রির পরিকল্পনা করছেন।
তবে পরিবারটির কাছে দকদো দ্বীপ ব্যবসার সুযোগের চেয়েও বড় কিছু। মেয়ে কিম জিন বললেন, ‘দকদো দ্বীপ একেবারে ছেড়ে চলে আসার কথা আমরা ভাবতেও পারি না।’

No comments

Powered by Blogger.