ভেনিজুয়েলায় আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব মাদুরোর

অবশেষে আগাম নির্বাচন প্রস্তাব করেছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তার কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে শনিবার তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয় দেশটিতে। এতে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। একজন সিনিয়র জেনারেল তার পক্ষ ত্যাগ করে যোগ দিয়েছেন বিরোধী শিবিরে। মাদুরোর ওপর দেশের ভিতরে ও বাইরে ক্রমশ বাড়ছে চাপ। এমন অবস্থায় তিনি শনিবার আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মাদুরোর বিমানবাহিনীর একজন সিনিয়র জেনারেল ভিডিও বার্তায় তার প্রতি আনুগত্য অস্বকিার করেছেন।
তার ওই ভিডিও বার্তা শনিবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ওই জেনারেল পার্লামেন্টের প্রধান, স্বঘোষিত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হুয়ান গাইডোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তবে সেনাবাহিনী এখনও সমর্থন করছেন মাদুরোকে। এটাই তার দৃশ্যত দেশের ভিতরে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় শক্তি। দেশের ভিতরে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য জনসমর্থন অনেকাংশে হােিয়ছেন মাদুরো। তবে তিনি নিজে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনায় অভ্যুত্থানের শিকার বলে দাবি করেছেন।
এমন অবস্থায় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে নিকোলাস মাদুরো একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী ‘কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলি’তে এ বছরে ‘ন্যাশনাল এসেম্বলি’ বা পার্লামেন্টের আগাম নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। শনিবার রাজধানী কারাকাসে প্রয়াত সমাজতান্ত্রিক নেতা হুগো শাভেজের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম শপথ নেয়ার ২০তম বার্ষিকী স্মরণে সরকারপন্থিদের একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বক্তব্য রাখেন মাদুরো। এতে তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচন চান? আপনারা আগাম নির্বাচন চান? আমরা পার্লামেন্ট নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
বর্তমানে ভেনিজুয়েলার পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিরোধীদের হাতে। গত বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন নিকোলাস মাদুরো। এরপর এ বছর ১০ই জানুয়ারি তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন। কিন্তু ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে ব্যাপক হারে জালিয়াতি হয়েছে। তাই হুয়ান গাইডো একটি নতুন ও সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।  বিরোধীদলীয় একজন এমপি আরমান্দো আরমাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২০২০ সালে পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনের শিডিউল রয়েছে। সেই পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রস্তাব সামনে ঠেলে দেয়া আরেকটি প্ররোচণামূলক কর্মকান্ড। নিকোলাস মাদুরো ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নন আর। তাই এ দেশে কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলিরও কোনো বৈধতা নেই, কোনো মূল্য নেই।
উল্লেখ্য, ভেনিজুয়েলায় সেনাবাহিনীর খুবই সামান্য একটি অংশ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে বিপুল সংখ্যক অথবা প্রায় পুরোটা সেনাবাহিনী তাকে সমর্থন করছে। এক্ষেত্রে বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন দেশটির বিমানবাহিনীর হাই কমান্ডের একজন জেনারেল ফ্রান্সিসকো ইয়ানেজ। তিনিই প্রথম দায়িত্বে থাকা একজন জেনারেল, যিনি হুয়ান গাইডোকে স্বকিৃতি দিয়েছেন। গত ২৩ শে জানুয়ারি নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন গাইডো। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত ভেনিজুয়েলার প্রধান সামরিক অ্যাটাচেও মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করেছেন। জেনারেল ফ্রান্সিসকো ইয়ানেজ বলেছেন, ভেনিজুয়েলার মানুষ, সশস্ত্র বাহিনীর শতকরা ৯০ ভাগ সদস্য আর স্বৈরাচারের সঙ্গে নেই। তারা ভেনিজুয়েলার জনগণের সঙ্গে মিশে গেছেন। গণতান্ত্রিক পালাবদল ঘটবে শিগগিরই। তার এমন বক্তব্যের জবাবে বিমান বাহিনীর হাই কমান্ড ওই জেনারেলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছে।
অন্যদিকে কারাকারে অনুষ্ঠিত র‌্যালিতে গাইডো তার সমর্থকদের বলেন, ফ্রান্সিসকো ইয়ানেজের পথ অনুসরণ করবেন আরো অনেকে। এমনটা আশা করেন তিনি। এর আগে ৩৫ বছর বয়সী শিল্প বিষয়ক প্রকৌশলী হুয়ান গাইডো নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করে সেনাবাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের তার প্রতি আনুগত্য আনার আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে তারা যদি পক্ষ ত্যাগ করে তার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.