জামায়াত থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। দুটি কারণ উল্লেখ করে পদত্যাগপত্রে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন,  জামায়াত ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধিনাতার বিরোধিতা করার জন্য জগনের কাছে ক্ষমা চায়নি এবং একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার আলোকে ও অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি। যুক্তরাজ্য থেকে বৃহস্পতিবার সকালে পাঠানো একটি চিঠিতে দলের আমীর মকবুল  আহমদের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করেন। পদত্যাগপত্রটি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ব্যক্তিগত সহকারী কাউসার হামিদ পত্রিকায় পাঠান। এ ব্যাপারে কাউসার হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি সত্য। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। কেন পদত্যাগ করেছেন তার বিস্তারিত সেই পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার  রাজ্জাক  তার  পদত্যাগপত্রে  উল্লেখ  করেন  বাংলাদেশের  সমাজ  গঠনে  জামায়াতের  অনেক মুল্যবান অবদান থাকা সত্ত্বেও একবিংশ শতাব্দীতে  ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অপারগ  হয়ে  পড়েছে।  এর  প্রধান  কারণ  হচ্ছে  জামায়াত  ১৯৭১  সালে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতার  বিরোধিতা করেছিল।
তিনি বলেন, আমি বিগত প্রায় দুই দশক নিরবিচ্ছিন্নভাবে জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, ৭১-এ দলের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত এবং ওই সময়ে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমর্থনের  কারণ  উল্লেখ  করে  জাতীর  কাছে  আন্তরিকভাবে  ক্ষমা  চাওয়া  উচিত।  কিন্তু  তার  সকল  প্রচেষ্টা  ব্যর্থ হয়েছে। ফলস্বরূপ ক্ষমা না চাওয়ার দায়ভার আজ তাদেরও নিতে হচ্ছে। যারা তখন এই সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত ছিলনা,  এমনকি  যারা  ৭১-এ  জন্ম  গ্রহণও  করেনি।  অধিকন্তু,  অনাগত  প্রজন্ম  যারা  ভবিষ্যতে  জামায়াতের  সাথে জড়িত হতে পারে তেমন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদেরকেও এই দায়ভার বহন করতে হবে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক আরও বলেন, জামায়াতে যোগদান করার পর তিনি দলের ভেতরে থেকেই সংস্কার  করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কাঠামোগত সংস্কার, নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষে তার মতামত  তুলে  ধরেন।  ২০১৬  সালে  জামায়াতের  আমীরের   কাছে  লিখিত  চিঠিতে  তিনি  অন্যান্য  মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সংস্কারের উদাহরণ টেনে আভ্যন্তরিন সংস্কারের উপর সর্বোচ্চ  গুরুত্ব দেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্রে বাংলাদেশ যুবসমাজের বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'তারা দেশপ্রেমিক এবং দেশের পরিবর্তনের জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে আগ্রহী ও সক্ষম। তিনি আরও বলেন, সময় এসেছে আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি ইসলামি রাষ্ট্রের ধারনায় কোনো পরিবর্তন আনা যায় কিনা তা নিয়ে নতুন প্রজন্মের গভীর ভাবে চিন্তা করার। রিশেষে তিনি কঠিন ও বৈরী সময়ে ব্যাপক কষ্ট এবং অসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দ দলে ঐক্য বজায় রাখার প্রশংসা করেন। পদত্যাগ পত্রের শুরুতেই, ব্যারিস্টার রাজ্জাক দলীয় প্রধানকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, পরম শ্রদ্ধেয় মকবুল ভাই, আসসালাম আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আজ এই মুহূর্তে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করছি। এটি আমার জন্য এক কঠিন সিদ্ধান্ত। ১৯৮৬ সালে যোগদানের পর থেকে আজ অবধি আমি সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করেছি। বিগত তিন দশক ধরে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সাধ্যমত পালন করতে সচেষ্ট থেকেছি। প্রধান কৌশলী হিসাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের  মামলা  আস্থা,  সততা  ও  একাগ্রতার  সাথে  পরিচালনা  করেছি।  আমার  বিশ্বাস,  জামায়াতের  দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শুধ ইসলাম নির্দেশিত কর্তব্যই নয়, দেশের প্রতিও  দায়িত্ব পালন সম্পন্ন হয়।
জামায়াতে  ইসলামী  দুর্নীতি  মুক্ত  রাজনীতি,  অভ্যন্তরীণ  গণতন্ত্র  ও  দলকে  প্রাতিষ্ঠানিক  রূপ  দেয়ার  মাধ্যমে দেশের জন্য অসংখ্য সৎ, দক্ষ ও কর্মনিষ্ঠ নাগরিক তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এতদসত্ত্বেও জামায়াত একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অপারগ হয়ে পড়েছে। একথা অনস্বীকার্য  যে,  জামায়াত  স্বতস্ফুর্তভাবে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  ও  স্বার্বভৌমত্ব  মেনে  নিয়েছে।  এই  দেশের স্বার্থবিরোধী  কোন  কর্মকান্ডের  সাথে  জামায়াত  প্রত্যক্ষ  বা  পরোক্ষভাবে  জড়িত  নয়।  অধিকন্তু,  জামায়াত  গত শতাব্দীর  ৬০-এর দশকে  গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার  সকল সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে; যেমন, কমবাইন্ড অপজিশন  পার্টি (কপ), পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক  মুভমেন্ট (পি ডি এম) এবং ডেমোক্রেটিক একশন কমিটি (ডাক)। একইভাবে গত  শতাব্দীর  ৮০  এর  দশকে  ৮-দল,  ৭-দল  ও  ৫-দলের  সাথে  জামায়াত  যুগপৎভাবে  রাজপথে  সামরিক স্বৈরাচারের বিরদ্ধে সংগ্রাম করেছে। দলটির এসকল অসামান্য অবদান ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভুল রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে স্বীকৃতি পায়নি। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা পরবর্তীকালে জামায়াতের সকল সাফল্য ও অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। এসব কারণে আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি এবং এখনও করি যে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য  ক্ষমা চাওয়া শুধ নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরী কর্তব্য।
আমি বিশ্বাস করি, ইসলাম ও স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলাদেশের সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভিত্তি । এ দুটি কোন অবস্থাতেই আপোষযোগ্য নয়, জাতিসত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ এই দুইটি উপাদানকে বিচ্ছিন্ন করে চিন্তা করার সুযোগ নাই।  সংখ্যাগরিষ্ঠ  মানুষের  উপলব্ধি  ও  মুক্তির  আকাক্সক্ষার  বিপরীতে  দাঁড়িয়ে  তৎকালীন  জামায়াতে  ইসলামী বাংলাদেশের  স্বাধীনতার  বিরোধীতা  করেছিল।  পাকিস্তানি  শাসকগোষ্ঠীর  জুলুম,  বঞ্চনা  ও  বৈষম্যের  বিরদ্ধে ন্যায়সঙ্গত  আন্দোলনকে  যখন  পাকিস্তানী  সামরিক  জান্তা  গণহত্যা  ও  ধ্বংসযজ্ঞের  মাধ্যমে  নিস্তব্ধ  করে  দিতে চেয়েছে  তার  বিরদ্ধে  প্রকাশ্যে  প্রতিবাদ  করেনি।    স্বাধীনতার  ৪৭  বছর  পর  আজও  দলের  নেতৃবৃন্দ  ৭১-এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেনি। এমনকি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেনি। তাই অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের ক্ষতিকর ভূমিকা সম্পর্কে ভুল স্বীকার  করে,  জাতির  কাছে  নিজেদের  সেই  সময়কার  নেতাদের  পক্ষ  থেকে  ক্ষমা  চেয়ে  পরিষ্কার  অবস্থান  নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। যে কোন রাজনৈতিক দল, ইতিহাসের কোন এক পর্বে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ত্রটি-বিচ্যুতির শিকার হতে পারে। কিন্তু তাকে ক্রমাগত অস্বীকার করে, সেই সিদ্ধান্ত ও তার ফলাফল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অনড় অবস্থান বজায় রাখা শুধ অগ্রহণযোগ্যই নয় বরং আত্মঘাতী রাজনীতি। তা কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
আমি বিগত প্রায় দুই দশক নিরবিচ্ছিন্নভাবে জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, ৭১-এ দলের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত এবং ওই সময়ে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট কারণসমূহ উল্লেখ করে যে যে সময় আমি বিষয়টি দলের শীর্ষ সংস্থা ও নেতৃত্বের কাছে উত্থাপন করেছি  তার কয়েকটির বিবরণ দিতে চাইÑ ক) ২০০১ এর অক্টোবর মাসে জামায়াতের তৎকালীন আমীর ও সেক্রেটারী জেনারেল মন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ  করেন।  বিজয়  দিবস  উদযাপনের  আগেই  ৭১-এর  ভূমিকা  নিয়ে  বক্তব্য  দেয়ার  জন্য  আমি জোরালো  পরামর্শ  দিয়েছিলাম।  একটি  কমিটি  গঠন  করা  হয়েছিল।  বক্তব্যের  খসড়াও  প্রস্তুত  করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। খ) ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে আবারো ৭১ নিয়ে বক্তব্য প্রদানের পক্ষে আমি জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করি । আমার সেদিনের বক্তব্য সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। গ) ২০০৭-২০০৮ সালে জরুরী অবস্থার সময় জামায়াতের বিরদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ভিন্ন মাত্রা পায়। তখনও ৭১ প্রসঙ্গে বক্তব্য প্রদানের জন্য জামায়াতকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।
ঘ) আমি ২০১১ সালে মজলিসে শুরার সর্বশেষ প্রকাশ্য অধিবেশনে বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করি।
দলের নেতৃত্ব প্রদানে  এগিয়ে আসার জন্য নতুন  প্রজন্মের  প্রতি আমি বিশেষ  আহবান  জানাই । আমার  সেইপ্রস্তাব শীর্ষ নেতৃবৃন্দের একাশেংর অবহেলার নিকট পরাজিত হয়। ঙ) ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ আপনাকে পাঠানো ১৯ পৃষ্ঠার চিঠিতে ৭১ প্রসঙ্গে বক্তব্য প্রদানের জন্যে আমি পরামর্শ  দিয়েছিলাম।  তাতে  পরিবর্তিত  বিশ্ব  পরিস্থিতির  আলোকে  নতুন  আঙ্গিকে  রাজনীতি  শুর  করার আহবানও জানিয়েছিলাম।
চ)  ২০১৬  সালের  নভেম্বর  মাসে  আপনি  আমীর  নির্বাচিত  হওয়ার  অব্যবহিত  পর  এ  বিষয়ে  আমার মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমি জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি খসড়া বক্তব্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ছ) সবশেষে,   ডিসেম্বরের   নির্বাচনের পর জানুয়ারী মাসে জামায়াতের করণীয় সম্পর্কে আমার মতামত চাওয়া হয়। আমি যুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেই। অন্য কোন বিকল্প না পেয়ে বলেছিলাম, জামায়াত বিলুপ্তি করে দিন। ৬।  কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমার তিন দশকের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
৭১ প্রসঙ্গে গ্রহণযোগ্য বক্তব্য প্রদানের ব্যর্থতা এবং ক্ষমা না চাওয়ার দায়ভার আজ তাদেরও নিতে হচ্ছে  যারা তখন এই সিদ্ধান্তের সাথে জিড়িত ছিলনা, এমনকি  যারা ৭১-এ  জন্ম  গ্রহণও করেনি। অধিকন্তু, অনাগত প্রজন্ম যারা ভবিষ্যতে জামায়াতের সাথে জড়িত হতে পারে তেমন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদেরকেও এই দায়ভার বহন করতে হবে। এই ক্রমাগত ব্যর্থতা জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসাবে আখ্যায়িত করার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে জামায়াত জনগণ, গণরাজনীতি এবং দেশ বিমুখ দলে পরিণত হয়েছে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, জামায়াতে যোগদান করার পর আমি সিদ্ধান্ত  নিয়েছিলাম ভিতর থেকেই সংস্কারের চেষ্টা করব। বিগত ৩০ বছর আমি সেই চেষ্টাই করেছি। আমি কাঠামোগত সংস্কার ও নারীর কার্যকর অংশগ্রহণের পক্ষে ছিলাম। আমার সংস্কার বিষয়ক ভাবনাগুলো মৌখিক ও লিখিতভাবে দলের সামনে একাধিকবার উপস্থাপন করেছি। এ ব্যাপারে কমবেশি সকলেই অবহিত আছেন। ২০১৬ সালে আপনার কাছে লিখা চিঠিতে আমি আভ্যন্তরিন সংস্কারের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সংস্কারের উদাহরণ দিয়েছি। সবশেষে বিশ্ব পরিস্থিতি ও মুসলিম  দেশগুলোর  উত্থান  পতনের  আলোকে  জামায়াতের  উদ্দেশ্য,  পরিকল্পনা  ও  কর্মসূচীতে  আমূল  পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছি। প্রতিবারের ন্যায় কোন ইতিবাচক সাড়া পাইনি।
বাংলাদেশের যুবসমাজ সচেতন, শিক্ষিত এবং আলোকিত।তারা চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞাত এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ওয়াকিবহাল। সর্বোপরি তারা দেশপ্রেমিক এবং দেশের পরিবর্তনের জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকা  রাখতে  আগ্রহী  ও  সক্ষম।এই  সচেতন  যুবসমাজের  একটি  অংশ  জামায়াতের  সাথে  থাকলেও  বৃহত্তর যুবসমাজকে নেতৃত্ব দিতে জামায়াত সফলতা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক দল গড়ে তোলাএখন সময়ের দাবি। সময়ের সে দাবি অনুযায়ি জামায়াত নিজেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করতে পারেনি।
তিনি পদত্যাগপত্রে আরও বলেন, অতীতে আমি অনেকবার পদত্যাগের কথা চিন্তা করেছি। কিন্তু এই ভেবে নিজেকে বিরত রেখেছি যে, যদি আমি আভ্যন্তরিন সংস্কার করতে পারি এবং ৭১-এর ভূমিকার জন্য জামায়াত জাতির কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তা হবে একটি ঐতিহাসিক অর্জন। কিন্তু জানুয়ারি মাসে জামায়াতের সর্বশেষ পদক্ষেপ আমাকে হতাশ করেছে। তাই পদত্যাগ  করতে  বাধ্য  হলাম।  এখন  থেকে  আমি  নিজস্ব  পেশায়  আত্মনিয়োগ  করতে  চাই।  সেই  সাথে  ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে একটি সমৃদ্ধশালী ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করব। পরিশেষে  জামায়াত  থেকে  পদত্যাগের  পূর্বমুহূর্তে  একটি  বিষয়  বলা  আমার  দায়িত্ব  মনে  করছি।  গত  দশ বছরে জামায়াত নেতৃবৃন্দ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছেন। তা এখনও অব্যাহত। এটি প্রশংসনীয় যে, এই কঠিন ও বৈরী সময়েও ব্যাপক কষ্ট এবং অসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দ দলের ঐক্য বজায়
রেখেছেন। দলের প্রতি তাদের নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা অনস্বীকার্য। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আপনার বিশ্বস্ত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, বারকিং, এসেক্স, যুক্তরাজ্য।

No comments

Powered by Blogger.