জাতীয় সংলাপের সিদ্ধান্ত আজ, ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে সফর সোমবার: চলতি সপ্তাহে ট্রাইব্যুনালে মামলা by আব্দুল আলীম

নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় সংলাপের দিনক্ষণ ঠিক করতে আজ বৈঠকে বসবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কবে সংলাপ ও কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বৈঠকে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনী সহিংসতায় আহত, নিহত ও সহায়-সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে আগামী সোমবার থেকে সারা দেশে সফর শুরু করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রথমে সিলেটের বালাগঞ্জে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অন্যদিকে নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল না পাওয়ায় নিজেদের সংগৃহিত তথ্য-প্রমাণের  ওপর ভিত্তি করে চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য চেয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে ৮টি ক্যাটাগরিতে তথ্য চেয়ে গত ৩রা জানুয়ারি চিঠি দেয় বিএনপি। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য সাতদিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর জমা দিতে হবে। চিঠিতে বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ১০ই জানুয়ারি।
তবে গতকাল পর্যন্ত ১৮০ জন প্রার্থী নিজ নিজ আসনের অনিয়মের প্রতিবেদন জমা দেন। ধানের শীষ প্রতীকে ২৮১ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৫৬ জন ছিল বিএনপির, বাকিরা ২০ দলীয় জোটের শরিক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর কারণে অনেক প্রার্থী দেরিতে চিঠি পেয়েছেন।
তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রার্থী প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। আর দু-একদিনের মধ্যে সবাই জমা দিয়ে দেবেন। জানা গেছে, নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য চেয়ে যে চিঠি দেয়া হয়, তাতে বলা হয়- প্রার্থীদের নিজের ও পরিবারের অবরুদ্ধ হয়ে পড়া কিংবা হামলায় আহত, সহায়-সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য ও ছবি, নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় সংঘটিত অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি, সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের তাণ্ডব এবং সন্ত্রাসের একটি সচিত্র প্রতিবেদন দিতে হবে। পরে প্রার্থীরা এসব তথ্য-সংবলিত ভিডিও এবং ছবি ও লিখিত বর্ণনা দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য প্রার্থীর কাছেও এসব তথ্য চাওয়া হয়। সব প্রার্থী নির্বাচনে অনিয়মের এসব তথ্য জমা দিলে তার ওপর ভিত্তি করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। ভিডিওগুলো দিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে। এরপর এগুলো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমে তুলে ধরাসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছেও তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছেও তুলে ধরা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, ইতিমধ্যে ১৮০ জন প্রার্থী নিজ নিজ আসনে ভোটের অনিয়মের তথ্য জমা দিয়েছেন। বাকিরা দু-একদিনের মধ্যে জমা দেবেন। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। তথ্যচিত্র ও ভিডিওচিত্র তৈরি করা হতে পারে। এছাড়া, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত তিন দফা কর্মসূচির দিনক্ষণ নির্ধারণ নিয়েও কাজ চলছে। শিগগিরই জানানো হবে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মোস্তফা মোহসিন মন্টু মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলা করার নিয়ম রয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের হাতে কিছু সময় রয়েছে। আমরা কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল পাওয়ার আশায় ছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব করায় অন্যভাবে তথ্য সংগ্রহ করছি। শেষ পর্যন্ত এগুলো দিয়েই মামলা করা হবে। এটা চলতি সপ্তাহের মধ্যেই করা হতে পারে। অন্যদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় সংলাপের দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে আজ শনিবার আমরা বৈঠক করব। রাতে হয়তো চূড়ান্ত হবে জাতীয় সংলাপে বসার দিনক্ষণ। এছাড়া, আগামী ১৪ তারিখ থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের দেখতে যাওয়া শুরু করব। প্রথম দিন সিলেটের বালাগঞ্জে যাওয়ার ঘোষণা আগেই দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.