বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ

ভারতে শুরু হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় আয়োজন কুম্ভমেলা। ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত। মেলায় প্রতিবার ১০ কোটির বেশি তীর্থযাত্রী পূণ্য স্নান করতে আসেন।  এ বছর হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব কুম্ভমেলায় খরচ করা হবে ৭৫০ কোটি রুপি। এ প্রসঙ্গে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা বলেন, ইউনেস্কো সম্মানের পর, এটি আমাদের প্রথম বৃহত্তম কুম্ভমেলা। ২০১৬ সালের মেলার সরকারি বাজেট ছিল ১০০ কোটি টাকা। এবার এই মেলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে তার ৭ গুণ বেশি খরচ করা হবে। ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, বাহুবলী ছবির সেট জিজাইনার টিম ১০০ কোটি রুপি ব্যয়ে তৈরি করেছে বিশেষ জাদুঘর। ১৫ একর জমি জুড়ে তৈরি হয়েছে সেটি, যার পুরোটা জুড়ে থাকবে ভারতীয় সংস্কৃতির নানা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের দৃশ্যায়ন।
মিউজিয়ামের প্রচারের দায়িত্বে থাকবে একটি আন্তর্জাতিক ব্যালে টিম।এবার উত্তর প্রদেশের এই কুম্ভমেলা একটি পূর্ণকুম্ভ।
সাধারণ কুম্ভমেলা ভারতের ৪টি স্থানে প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়। প্রতি ছয় বছর অন্তর অর্ধকুম্ভ আযয়োজিত হয়। প্রতি ১২ বছর পরপর পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। বারোটি পূর্ণকুম্ভ, অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ। ২০১৬ সালে একটি মহাকুম্ভ আয়োজিত হয়েছিল। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, ৫৫ দিনের এই মেলায় প্রায় ১৫ কোটি মানুষ অংশ নেবে। এ বছর কুম্ভ মেলার জন্য ১০,০০০ একর খোলা জায়গার বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রচারের জন্য ভারতের সমস্ত বিমানবন্দরে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। বিদেশে ভারতের বিভিন্ন দফতর এবং দূতাবাসকেও প্রচারের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। এই বছরের কুম্ভমেলায় বিশেষভাবে নিরামিষভোজী নিরাপত্তাকর্মীদেরই নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কার্যালয় থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
মদ ও মাংস যাতে কুম্ভমেলার থেকে দূরে থাকে, তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ৪৫ দিনের এই মেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয় ৬ দিনকে। এদিন পূণ্যার্থীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে। ১৫ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি দিয়ে মেলার শুরুর দিন এর মধ্যে একটি দিন। ২১ জানুয়ারি পৌষ পূর্ণিমা, ২ ফেব্র“য়ারি মৌনি অমাবশ্যা, ১০ ফেব্র“য়ারি বসন্ত পঞ্চমী, ১৯ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা এবং ৪ মার্চ মহা শিবরাত্রি। এর মধ্য দিয়েই মেলা শেষ হবে।উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে মেলার সার্বক্ষণিক আপডেট প্রচারে ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাণী রয়েছে। পাশাপাশি কুম্ভমেলা, প্রায়োগরাজের নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং পূজার নিয়ম-কানুনসহ সব তথ্য রয়েছে। এটি অ্যাপ আকারেও পাওয়া যাচ্ছে। তুমুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে কুম্ভমেলায়। ১৪ জানুয়ারি দিগম্বর ঘাটের কাছে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মেলা শুরুর আগে এমন আগুন আতঙ্ক সৃষ্টি করে জনমনে। পুলিশ জানায়, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনে কয়েকশ’ তাঁবু পুড়ে গেছে। মকর সংক্রান্তির দিনে প্রথম স্নানে অংশ নেন প্রায় ৩৫ লাখ পুণ্যার্থী। এদিনের স্নানকে শাহী স্নানও বলা হয়। কারণ, প্রয়োগরাজ তথা সাবেক এলাহাবাদের এই স্থান গঙ্গা, যমুনা ও স্বরস্বতী এই তিন নদীর মিলনস্থল। চার পবিত্র কুম্ভস্থানে এখানেই তিনটি নদীর সম্মীলন ঘটেছে। অন্যদিকে হরিদ্বার, উজ্জয়ন, নাসিক প্রতিটি স্থানই একটি করে নদী তীরে অবস্থিত।
কুম্ভমেলায় যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে ইতোমধ্যে ট্রাফিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। শুধু উত্তর প্রদেশের প্রায়োগরাজেই ৫০০ টি বাড়তি বাস কুম্ভমেলা উপলক্ষে চালু করা হয়েছে। যাতায়াত সুগম করতে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে, যাতে শিক্ষার্থীদের চলাচলও ব্যহত না হয়। অ্যাপস থেকে জেনে নেওয়া যাবে কোথায় কোন অঞ্চলে সহজে যাতায়াত করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.