নওয়াজ শরীফের জন্য ‘শেষ বিচারের দিন’

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সামনে ‘শেষ বিচারের দিন’ আজ। তার ভাগ্য ঝুলে আছে। কি হবে তা নির্ভর করছে জবাবদিহিতা বিষয়ক (এনএবি) আদালতের ওপর। অজ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১৪ বছরের জেল ও জরিমানার রায় হতে পারে। কেড়ে নেয়া হতে পারে বিপুল অর্থের কয়েকটি মিলকারখানা।
তাই কি রায় দেয় আদালত সেদিকে তাকিয়ে আছে পুরো পাকিস্তান। আল আজিজিয়া স্টিল মিলস এবং ফ্লাগশিপ ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে যে মামলা আছে নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এর চূড়ান্ত রায় সোমবার স্থানীয় সময় সকালে ঘোষণার কথা রয়েছে।
এ জন্য এ দিনটিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার পাকিস্তানি সংস্করণ এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ‘জাজমেন্ট ডে’ বা শেষ বিচারের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এর আগে ভাগ্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে রোববার লাহোর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছেন নওয়াজ শরীফ। সেখানে জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতা ও তার ছোট ভাই শাহবাজ শরীয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ওই দুটি মামলায় আজ সকালে তার বিরুদ্ধে দুটি রেফারেন্সের চূড়ান্ত রায় দেবেন বিচারক মুহাম্মদ আরশাদ মালিক। এ জন্য আদালত চত্বরে ও আর আশপাশে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে। নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক অর্ডিন্যান্সের সেকশন ৯এ৫-এর অধীনে অজ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হওয়ায় অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়ার জন্য আবেদন করেছে জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি)।
এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৪ বছরের জেল ও জরিমানা করা হতে পারে নওয়াজ শরীফকে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি পদের অধকারী কোনো ব্যক্তিকে যদি দুর্নীতির দায়ে বা দুর্নীতি চর্চা করা, নিজে অথবা তার ওপর নির্ভরশীল কাউকে আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক দেখা যায়, তাহলে তার ওপর এই ধারাটি কার্যকর হবে। এতে নির্ধারিত আয়ের বেশি সম্পদ থাকলে এবং দুর্নীতি পাওয়া গেলে ওই সম্পদ জব্দ করতে পারবে সরকার।
জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো মামলায় বলেছে, নওয়াজ শরীফের বড় ছেলে হুসেইন নওয়াজ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন আল আজিজিয়া স্টিল মিলস। ২০০৫ সালে স্থাপন করেছেন হিল মেটালস এস্টাবশিলমেন্ট। এতে ৩৪ লাখ দিরহাম বিনিয়োগ করেছেন তিনি। তবে ওই অর্থ কোথা থেকে পেয়েছেন বা এর অর্থ কোথায় যায় তিনি তা প্রকাশ করেন নি।
তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এনএবি প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, হিল মেটালসের শতকরা ৮৮ ভাগ লভ্যাংশ পাঠানো হয়েছে নওয়াজ শরীফের পাকিস্তানি ব্যাংক একাউন্টে। কারণ, তিনিই হলেন ওই সম্পদের প্রকৃত মালিক। বেনামি মালিক হলেন হুসেইন নওয়াজ।
আত্মপক্ষ সমর্থন না করে নওয়াজ শরীফ বলছেন, আল আজিজিয়া এবং হিল মেটালসের মালিক তার ছেলে হুসেইন নওয়াজ। বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে হুসেইন তার একাউন্টে অর্থ পাঠিয়েছে।
ফ্লাগশিপ রেফারেন্সে এনএবি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, নওয়াজ শরীফের সম্পদের বেনামি মালিক তার আরেক ছেলে হাসান নওয়াজ। এনএবি প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, ফ্লাগশিপ ইনভেস্টমেন্টস এবং ক্যাপিটাল এফজেডই সহ ১৬টি কোম্পানি ২০০১ সালে সৃষ্টি করেছেন হাসান নওয়াজ। এতে তার বিনিয়োগ ৪২ লাখ দিরহাম। এ মামলায়ও আত্মপক্ষ সমর্থন করেন নি শরীফ। এখানেও তিনি বলেছেন, এসব ব্যবসার মালিক হাসান। ব্যবসায় নওয়াজের কোন কিছুই করার ছিল না।

আদালতে অব্যাহতভাবে অনুপস্থিত হাসান ও হুসেইন। ফলে তাদেরকে আদালত পলাতক হিসেবে ঘোষণা দেয়। সোমবার আদালত যে রায় দিচ্ছে তার অংশ হাসান ও হুসেইন নন। আদালত এদিন শুধু নওয়াজ শরীপের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.