সাড়ে ৩ ঘণ্টার সংলাপে যে আলোচনা হয় by কাফি কামাল ও আব্দুল আলীম

দেশের চলমান রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই সরকার ও বিরোধী জোটের বহুল কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। সংলাপের পর সরকারপক্ষ বলছে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের ভাষ্য তারা সন্তুষ্ট নয়। সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। তিনটি বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করলেও বিশেষ কোনো সমাধান আসেনি এ সংলাপে। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংলাপ। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলেও আলোচনায় উঠে এসেছে ছোট পরিসরে আরেকটি সংলাপে বসার আলোচনা। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির বেশিরভাগই মানা সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারপক্ষ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- সংসদ ভেঙে দিলে সরকারের মাথা কাটা যাবে, সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। এমনকি এসব অসাংবিধানিক দাবির মাধ্যমে জাতৗয় ঐক্যফ্রন্ট আরেকটি ওয়ান ইলেভেন চান কিনা- সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেয়া হয়।
সংলাপে অংশ নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, পরিবেশ ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন। সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপের প্রারম্ভেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফে শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন যে সূচনা বক্তব্যটি দেন সেটা মুগ্ধ করেছে ফ্রন্টের নেতাদের। সেখানে তিনি দেশের প্রেক্ষিত বর্ণনা করেছেন। তারপর ফ্রন্টের তরফে উত্থাপিত ৭ দফাগুলো পড়ে শোনান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই বক্তব্যে আপত্তি জানান সরকার পক্ষের তিন নেতা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এমন দাবি তো আমাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। একই সঙ্গে তিনি বলেন- এসব দাবির মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে আরেকটি ১/১১ এর ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা? সংলাপে অংশ নেয়া কয়েকজন নেতা জানান প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল ড. কামাল হোসেনসহ ৪-৫ জন নেতা কথা বলবেন। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে সেটা ১১জনে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে সংলাপে উত্তেজনা ছড়ানো বক্তব্য দিয়েছেন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর তিনজন নেতা। সংলাপ সূত্র জানায়, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন শান্তিপূর্ণ ভাষায়। সোজাসুজি। বাইরে নৈশভোজের প্রচারণা চালানো হলেও বাস্তবে নৈশভোজ নয় নেতারা নিয়েছেন সৌজন্যমূলক সান্ধ্যাকালীন নাস্তা। 
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে দুটিপক্ষের মধ্যে বরফ গলতে শুরু করেছে। এটাকে জনগণের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে মনে করছেন তারা। তারা বলেন, সংলাপ নিয়ে মির্জা আলমগীর সুন্দর করেই বলেছেন, উনি সন্তুষ্ট নন। সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে বলেননি। এটাই ইতিবাচক দিক। তবে দু’জন নেতা মনে করেন, সংলাপকে কাহিল করতেই হয়তো খালেদা জিয়ার দুটি মামলার রায় হয়েছে পরপর দুইদিন। নেতারা বলছেন, এ সংলাপ থেকে অন্তত তিনটি বিষয় অর্জিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- সভা সমাবেশের অনুমতি, মামলা-হয়রানি বন্ধ ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের অবাধ পর্যবেক্ষণের অঙ্গীকার। তবে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এটাও বলছেন, প্রধানমন্ত্রী জনসভা, মামলা না করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটার ব্যাপারে সার্কুলার জারি করার কথা না বলায় সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এ সংলাপ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট লক্ষণ প্রকাশ করতে না পারলেও বাড়িয়ে দিয়েছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা। রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতিতে রাজপথের আন্দোলনের চেয়ে ভালোভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেই বড় আন্দোলন হিসেবে ভাবতে চাইছেন তারা। তবুও সংলাপের পথ খোলা রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সংলাপ সূত্র জানায়, সংলাপে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য দেয়ার কথা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কিছু বলেন।’ এরপর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনার পিতা আমাদের গণস্বাস্থ্যকে ৩১ একর জমি দিয়েছিলেন। বহু বছর পর ক্যানসার হাসপাতালের জন্য আপনিও জমি দিয়েছেন। এইজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনার দেয়া জমির দখল এখনো বুঝে পাইনি। তিনি বলেন, আজকে আপনি বলেছেন- সুষ্ঠু নির্বাচন চান, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ভালো কাজটি যদি করেন তবে দেশবাসী আপনাকে স্মরণ রাখবে, পৃথিবী স্মরণ রাখবে, এমনকি আপনি দেশে শান্তি ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি নোবেল প্রাইজও পেয়ে যেতে পারেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনার না মানতে পারার মতো আমাদের তো কোনো দাবি নেই। আপনি সবই মেনে নিতে পারেন। আমি ৭ নম্বর থেকে শুরু করি। এরপর তিনি বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা মোকদ্দমা, ধরপাকড় নিয়ে কথা বলেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের মামলা তুলে নেয়ার দাবি জানান। নির্বাচন হবে কিন্তু বিরোধীরা কথা বলতে পারবো না, এটা হতে পারে না মনে করিয়ে দিয়ে তিনি সভা-সমাবেশের অনুমতির বিষয়টিও তুলে ধরেন। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা একমতও হন। তবে নির্বাচনে ইভিএমের প্রসঙ্গে এলেই তিনি সেটা ঠেলে নির্বাচন কমিশনের কোর্টে পাঠিয়ে দেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবিগুলোকে তিনভাগে ভাগ করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন- প্রথমত, সংসদ বাতিল করতে হবে; দ্বিতীয়ত, নিরপেক্ষ একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং তৃতীয়ত, খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। আমি তিন নম্বরটি যদি আগে তুলে ধরি তাহলে আপনি তো খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তো আইনের ব্যাপার। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী পাল্টা প্রশ্নে বলেন, খুনিরাও যেখানে জামিন পায় সেখানে হস্তক্ষেপ না হলে খালেদা জিয়া কেন জামিন পাবেন না। এ সময় সংসদ ভেঙে দেয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধান বের করতে একটি প্রস্তাব দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি এই জন্য ড. শাহদীন মালিক ও প্রফেসর আসিফ নজরুলের নাম উল্লেখ করে সরকারের তরফে দু’জনকে নিয়ে চারজনের একটি কমিটি গঠনের কথা বলেন। তবে এ প্রস্তাবের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। 
সংলাপ সূত্র জানায়, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সংক্ষিপ্ত কিন্তু আবেগঘন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমার মেয়ে জিজ্ঞাসা করে আমি রোজ কোথায় যাই। মেয়েকে বলি, আদালতে হাজিরা দিতে যাই। আমার ছেলেটা মারা গেছে দুই বছর আগে, সেও আসামি আজ। এটা কেবল আমার বেলায় নয়, আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর আজ এই অবস্থা। এ সময় তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ সেলিমের সঙ্গে একত্রে কারাভোগের বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেন। এছাড়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার তার বক্তব্যে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি ও খালেদা জিয়ার মামলা এবং জামিনের বিষয়ে কথা বলেন।
সংলাপ সূত্র জানায়, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করার পর সমবেদনা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেদিন তাকে সাক্ষাৎ দেননি খালেদা জিয়া, এমনকি গেটটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এই সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সেখানে থাকলেও কোনো উদ্যোগ নেননি।
প্রধানমন্ত্রীকে জেএসডি সভাপতি আ স ম রব বলেছেন, আমরা এখানে আলাদা নয় একটি পক্ষ। দাবিগুলো আমাদের সবার। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ তার বক্তব্যে ৯০-এর দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমাদের সে ঐক্য থেকে কেন বর্তমান এই বিচ্যুতি? 
সংলাপ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর দুই সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ স্বাগতপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। তারা দুজনই সংবিধানকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলেছেন। তবে প্রেসিডিয়ামের অন্য এক সদস্য কিছুটা উত্তেজক বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা বলামাত্র আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, সংসদ ভেঙে দিলে পিএম থাকবে না, তাহলে দেশ চালাবেন কে? তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতিবারই নির্বাচনের জন্য আলোচনার দরকার হবে কেন, এটা নিয়ে স্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়া দরকার। অন্যদিকে হাসানুল হক ইনু বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় সারা দেশে খুনখারাবি নিয়ে কথা বলেছেন। উচ্চ স্বরে বক্তব্য দিয়েছেন মইন উদ্দীন খান বাদল। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বাইরে বিএনপি ও ফ্রন্টের নেতারা বর্তমান সরকারকে বিনা ভোটের সরকার বলে প্রচার করে। মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, আপনারা আরো সংলাপ চাইছেন। কিন্তু আলোচনা যদি চলতেই থাকে তাহলে আপনারা বলবেন গ্লাসে পানি আছে। আমরা বলব গ্লাসে পানি নেই। এই রকম চলতে থাকবে। এগুলো হলে কোনো সমঝোতায় আসা যাবে না। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি মানে নির্বাচন যাতে সময় মতো অনুষ্ঠিত না হয় তার যড়যন্ত্র। আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে যেভাবে বানচাল করার চেষ্টা হয়েছিল, এবারও সেই দিকে যেতে চাচ্ছে। তবে দীর্ঘ বক্তব্য শেষে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘আমি খুব উচ্চ স্বরে বক্তব্য রেখেছি। তার জন্য দুঃখিত।’
সংলাপ সূত্র জানায়, সবার বক্তব্য শেষে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নির্বাচনকালে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী নিয়োগের বিরোধিতা করে যুক্তিসহ তার বক্তব্য দেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করেই বলেছেন- ‘এটা তো আইনি বিষয়। আমার হাতে নেই।’ ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানান, সংলাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্য দেন। এসময় প্রায় ১০ মিনিট ভেতরে গণমাধ্যমের ক্যামেরা ছিল। পরে রুদ্ধদ্বার সংলাপ হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত তার পরিবারের ওপর নির্যাতন, তাকে বারবার হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন। ড. কামাল তার বক্তব্যে বলেন- যেটা হয়েছে সেটা তো চলে গেছে। এখন বর্তমান প্রেক্ষাপটের সমাধান কী সে বিষয়ে কথা হোক। সংলাপ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে সংলাপের সমাপ্তি টানার তাগিদ ছিল না। তবে রাত যখন সাড়ে দশটা বাজে তখন ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে বলেন, আপনাকে আর আটকে রাখা ঠিক হবে না। আপনার কাছে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যে কয়জন বক্তব্য দিয়েছেন তার মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় তুলে ধরেছেন কয়েকজন। খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারটা ৭ দফার ভেতরেই রয়েছে। এটি ড. কামাল হোসেনও উপস্থাপন করেছেন। এর বাইরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এটা আদালতের বিষয়। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
সংলাপের ভেতর ডিনার করার বিষয়ে ওই নেতা বলেন, আমরা তাদের আগেই বলে দিয়েছি- আলোচনার সময় ২ ঘণ্টা। এর মধ্যে খাওয়ার টেবিলে গেলে সময় আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে আসবে। আলোচনা যদি সফল হয় তাহলে পরে কোনো একদিন একবারে ডিনার করা যাবে। তবে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে কিছু খাবার এনে দিচ্ছিল। এটা এমন একটা পরিস্থিতি ছিল তখন না খেলে অসৌজন্যতা হয়ে যায়। এই ছবি ভেতর থেকে কেউ তুলে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটা অত্যন্ত নোংরা মানসিকতার পরিচয়। কোনো শিষ্টাচারের মধ্যেই পড়ে না এটি। ভিআইপি লেভেলের এত বড় বৈঠক। এর চেয়ে বড় বৈঠক বাংলাদেশে আর হয়নি। আর সেই বৈঠকের ভেতরে আলোচনার মধ্যে কে কী খেলো সেটার ছবি অনুমতি ছাড়া বাইরে পাচার করে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এটা নোংরা মানসিকতার পরিচয়। কারণ প্রথম ১০ মিনিট ভেতরে ক্যামেরা ছিল। পরে আর কোনো ক্যামেরা ছিল না। আমরা যখন খাচ্ছি তখন কেউ ছবি তুললে সেটা অবশ্যই সাংবাদিকরা তোলেননি। ভেতরের কেউ তুলেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর ক্যামেরা বের হয়ে যায়। তখন থেকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু কিছু ছবি দেখা যাচ্ছে যেটা ওই বৈঠকের সময় তোলা। আবার কিছু ছবি আমাদের সামনে আনার আগে বাইরে থেকে খাবারের প্রস্তুত রুম থেকে তোলা।

No comments

Powered by Blogger.