পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের উত্তাপ বাড়ছে: বিজেপির রথযাত্রার পাল্টা মমতার পবিত্রযাত্রা

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের এখনও ৫-৬ মাস বাকি। কিন্তু এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব নানা কারণে বেড়েছে। আর তাই রাজনৈতিক উত্তাপ একটু একটু করে বাড়তে চলেছে। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২২টি আসন পাবার লক্ষ্যে সর্ব শক্তি বিনিয়োগ করছে। দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, ভারতের অন্যত্র সরকার বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে বিজেপিকে। তাই পশ্চিমবঙ্গে আসন বাড়াতে পারলে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ধাক্কা সামলে দেয়া যাবে। গত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি ২টি আসন পেয়েছিল।  অতিরিক্ত আসনের লক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বিজেপি প্রথম রথ নামাতে চলেছে। আগামী ৫, ৭ ও ৯ই ডিসেম্বর রাজ্যের তারাপিঠ, কোচবিহার ও গঙ্গাসাগর থেকে তিনটি রথ বের করবে।
তিনটি রথেরই সূচনা করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আর এই তিন রথ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র পরিক্রমা করবে। রথ পরিক্রমার শেষে কলকাতায় হবে মহাসমাবেশ। সেই সভায় ভাষণ দেবেন নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে এই রথ পরিক্রমা নিয়ে জোর কথার লড়াই শুরু হয়েছে। শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির রথযাত্রাকে রাজনৈতিক রথযাত্রা উল্লেখ করে বলেছেন, বিজেপির রথযাত্রার পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস পবিত্র যাত্রা করবে। এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বলেছেন, বিজেপির রথ যে রাস্তা কলুষিত করবে, সেই রাস্তাতেই হবে তৃণমূলে কংগ্রেসের  শান্তিযাত্রা বা পবিত্রযাত্রা।
অর্থাৎ বিজেপির রথ যে রাস্তা ধরে যাবে, সেখানেই পরেরদিন পবিত্রযাত্রা করবে তৃণমূল। বিজেপির রথযাত্রাকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, ওটা তো রাবণ যাত্রা। সেই সঙ্গে তিনি খোঁচা দিয়ে বলেছেন, বিজেপির রথ তো এক একটি ফাইভস্টার হোটেল। মমতা অবশ্য এদিন নির্বাচনের প্রস্তুতি জোর কদমে শুরু করে দেয়ার জন্য দলীয় নেতা ও কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে কলকাতায় সর্বভারতীয় নেতাদের নিয়ে যে চিবরোধী ফেডালের ফ্রন্টের সমাবেশ করতে চলেছেন মমতা তা নিয়েও এদিন বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বিজেপির রথযাত্রাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। তাই এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। এজন্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব বেশ ক্ষুব্ধ।  প্রয়োজনে আদালতে যাবার হুশিয়ারিও দিযেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
অন্যদিকে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন রথ যারা আটকাতে আসবে তাদের রথের চাকায় পিষ্ট করে দেয়া হবে। বিজেপি নেত্রী অবশ্য দাবি করেছেন রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচাতেই এই রথযাত্রা করছে বিজেপি। বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মতে, এই সুযোগেই গণসংযোগের কাজটা এগিয়ে নিতে চাইছে বিজেপি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বাম দলগুলি অভিযোগ করেছে, বিজেপি রথযাত্রার নামে বিভেদের রাজনীতিকেই উসকে তোলার চেষ্টা করছে। আর তাই বাম দলগুলি রথযাত্রা ঠেকাতে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিজে নেতারা রথযাত্রার প্রস্তুতি জেলায় জেলায় বৈঠক করছেন। বিজেপর এক শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, গত কয়েকটি নির্বাচনে যেভাবে বিজেপির ভোট বেড়েছে তাতে নেতারা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আশাবাদী। আর তাই অমিত শাহ ২২টি লোকসভা আসনকে পাখির চোখ করে নির্বাচনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.