ঢাবিতে শিক্ষকদের প্রতিবাদী মিছিল

মানুষের মত প্রকাশের সুযোগ না দিয়ে শুধু শুধু উন্নয়নের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোনো লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকদের এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের নামে হয়রানিমূলক মামলা, গ্রেপ্তার, কারাগারে প্রেরণ ও রিমান্ডের প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তারা ক্যাম্পাসে একটি মৌন মিছিল করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিম, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, বাংলা বিভাগের মুহম্মদ আজম, অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরিদী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার আবদুর রাজ্জাক খান, কাজলী শেহরীন ইসলাম, মার্জিয়া রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক। এ সময় শিক্ষকরা মাইদুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে তাদের নিঃশর্তে মুক্তি দেয়ার দাবি করেন।
একই সঙ্গে শিক্ষক মাইদুলকে সম্মানের সঙ্গে চাকরিতে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, কথা বলতে পারাটা আমাদের অধিকার, আমরা এই অধিকার অর্জন করেছি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। অধ্যাপক ফাহমিদুল হক উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, নিম্ন আদালত মাইদুল হককে রিমান্ডে পাঠালেও উচ্চ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা  এই বিষয়ে ১৭ই অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা করবো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সমালোচনা করে চবি শিক্ষক জি. এস. হাবিব বলেন, চবি শিক্ষক সমিতি ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করছে। একজন শিক্ষক কারাগারে আছে, এটা খুবই লজ্জার বিষয়। মাইদুল ছিলেন সত্যের পক্ষে, তাই আমরা তার সঙ্গে আছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন সময় এসেছে মুখ খোলার। সমালোচনা থেকে ভালোটুকু নিয়ে, খারাপটা বর্জন করতে হবে।
হাইকোর্টে জামিন পেলেন মাইদুল
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন  পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম। কারাগারে থাকা মাইদুল ইসলাম আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করলে গতকাল শুনানি নিয়ে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের এ আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে মাইদুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ। আদেশের পর আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট মাইদুল ইসলামকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে। এর আগে গত  সোমবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সার মাইদুল ইসলামকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে গত ২৩শে জুলাই মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাটহাজারি থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখারুল ইসলাম। গত ৬ই আগস্ট হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান মাইদুল ইসলাম। হাইকোর্টের দেয়া আট সপ্তাহের জামিন শেষে গত ২৪শে সেপ্টেম্বর  চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানি নিয়ে আদালত আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে ২৫শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

No comments

Powered by Blogger.