মানসিক আঘাতে বিধ্বস্ত নওয়াজ শরীফ

একের পর এক আঘাতে বিধ্বস্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। প্রথমে তিনি দুর্নীতির অভিযোগে হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীত্ব। তারপর এ বছর ওই মামলায় তার, মেয়ে মরিয়ম ও জামাই মোহাম্মদ সফদারের বিরুদ্ধে জেল দেয় আদালত। সেই জেলের রায় মাথায় নিয়েই তিনি পাকিস্তানে ফেরেন। তাকে বিমানবন্দর থেকেই গ্রেপ্তার করে নেয়া হয় জেলে। এরপর তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ক্ষমতা হারায়। সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে মঙ্গলবার। এদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত তার সহধর্মীনি কুলসুম নওয়াজ মারা যান। এ আঘাতে একেবারে ভেঙে পড়েছেন তিনি, মেয়ে মরিয়ম। অনলাইন ডন জানাচ্ছে, মৃত কুলসুমের প্রথম জানাজা লন্ডনে হবে বৃহস্পতিবার। এরপর তার দেহ বিমানে করে আনা হবে লাহোরে। সেখানে জাতি উমরায় দাফন করা হবে তাকে। এ জন্য রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি থাকা নওয়াজ শরীফ, মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ ও জামাই অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সফদারকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার কুলসুম মারা যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই তাদেরকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা ১২ ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্ত থাকবেন। তবে ডন বলছে, এই প্যারোল শুক্রবার বিকালে জাতি উমরায় বেগম কুলসুমকে দাফন না করা পর্যন্ত বর্ধিত করা হতে পারে। তাদেরকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় পাঞ্জাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। এরপর মুক্ত নওয়াজদেরকে সেই নূর খান বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখান থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তাদের কমপক্ষে ৫ দিনের প্যারোলে মুক্তি দাবি করে আবেদন করেছিলেন নওয়াজ শরীফের ভাই ও পিএমএলএনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরীফ। কিন্তু প্যারোল অনুমোদন করা হয়েছে ১২ ঘন্টার জন্য। সরকারের একটি সূত্র বলেছেন, লাহোরে শরীফ পরিবারের আবাসিক এলাকা জাতি উমরায় বেগম কুলসুমের দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্যারোলের মেয়াদ বাড়াবে পাঞ্জাব সরকার। ওদিকে পিএমএলএনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আরো একটি আবেদন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ওই আবেদনে জাতি উমরা বাসভবনকে একটি সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে শরীফদের থাকার অনুমতি চাওয়া হবে।
কুলসুম নওয়াজ অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। গত বছর আগস্টে তার গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১৫ই জুন তার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়। তাকে দ্রুত লন্ডনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে মৃত্যৃর শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। পরিবারের সূত্র মতে, রোববার রাত থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। কিন্তু কুলসুম আর ফিরতে পারেন নি। মঙ্গলবার তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারিবারিক সূত্র আরো বলেছে, দলের সভাপতি ও জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ ও তার ছেলে হামজা শাহবাজ লন্ডন যেতে পারেন। লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে বৃহস্পতিবার প্রথম নামাজে জানাজা হবে। তারা তাতে যোগ দিতে চান। সেখান থেকে লাহোরে নিয়ে আসা হবে দেহ। তবে তার সঙ্গে পাকিস্তানে আসবেন না ছেলেরা। মৃতদেহের সঙ্গে থাকবেন শরীফ দম্পতির কন্যা আসমা, নাতনী জাক্রিয়া শরিফ।

No comments

Powered by Blogger.