যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যিক যুদ্ধে জিতবে কে!

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ। হ্যাঁ, যুদ্ধই তবে রণাঙ্গনের যুদ্ধ নয়। যুদ্ধটা হলো কৌশলগত ও বাণিজ্যিক। দুই দেশের মধ্যেই প্রকাশ্যে শুরু হয়ে গেছে এই যুদ্ধ। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। এই যুদ্ধে জিতবে কেÑ যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীন? এমন প্রশ্নকে সামনে রেখে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নতুন করে দুই দেশই পাল্টাপাল্টি বহুকোটি পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতে স্থানীয় বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা মধ্যবিত্ত বা নি¤œ মধ্যবিত্ত তাদের ওপর এর প্রভাবটা পড়বে বেশি।
বিশ্বের দুই সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দুই দেশ মিলে ৩৬০০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে তা আরো খারাপের দিকে ধাবিত হবে শিগগিরই। প্রথমে সর্বশেষ নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। তারপরই চীন পাল্টা ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে অক্সফোর্ড ইকোনমিকের এশিয়া ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান লুইস কুইজ বলেন, এ ঘোষণার ফলে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। এক যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখা দেবে। এতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে আঘাত লাগবে।  প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে ঘোষণা আসে যে, তারা চীন থেকে আমদানি করা ২০০০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করবে। এ ঘোষণার পর মঙ্গলবার চীনা প্রেসিডেন্ট পাল্টা ঘোষণা দেয়। তারা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬০০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে। যুক্তরাষ্ট্রে এই শুল্ক শতকরা ১০ ভাগ থেকে শুরু হবে। বছর শেষ হওয়ার আগেই তা শতকরা ২৫ ভাগে উন্নীত হওয়ার কথা। এই ঘোষণা আগামী ২৪ শে সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এ শুল্ক আরোপ করা হবে মৌসুমি খাদ্য, বেসবল গ্লোভস থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক রুট, শিল্পে ব্যবহৃত মেশিনারিজের যন্ত্রাংশের ওপর। এর আওতায় আসবে চীনা হাজার হাজার পণ্য। পাল্টা চীন শতকরা ৫ ভাগ থেকে ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করবে। তবে তা নির্ভর করবে পণ্যের ওপর। একই দিনে এ শুল্ক প্রয়োগ হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ৫০০০ পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে মাংস, বাদাম, এলকোহল জাতীয় পানীয়, রাসায়নিক পণ্য, কাপড়, মেশিনারিজ, আসবাবপত্র, অটো পার্টস।
বিশ্বের এই শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে এই বাণিজ্যযুদ্ধে এরই মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত এই দুটি দেশের অনেক কোম্পানিতে আঘাত লাগা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তাতে প্রতি বছর তারা চীন থেকে যে পরিমাণ পণ্য কেনে তার মোটামুটি অর্ধেকটার ওপর এর প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ বাণিজ্যিক যুদ্ধের পক্ষেই মঙ্গলবার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওভাল অফিস থেকে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আমরা ভাল কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুবিধা নিচ্ছে তারা। তা আর হতে যাচ্ছে না।
ট্রাম্প প্রশাসন আসলে চেষ্টা করছে বেইজিংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তার আচরণ পরিবর্তন করছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিষয়ক সম্পত্তি চুরি তদারকি করছে চীন। এ ছাড়া আগ্রাসী শিল্প নীতির মাধ্যমে ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছে চীনের কোম্পানিগুলো।  এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীনা সরকার। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝেই করে থাকে।
এ বছর ৫০০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অন্যকে পাল্টাপাল্টি আঘাত করে যাচ্ছে। এ দুটি দেশ একে অন্যের বিরুদ্ধে ৫০০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এখন নতুন করে আরো শুল্ক আরোপের ফলে তাদের মধ্যে বাণিজ্যিক যুদ্ধ আরো জটিল থেকে জটিল হয়েছে। সোমবার হোয়াইট হাউজ একটি সতর্কতা দেয়। তাতে বলা হয়, বেইজিংয়ের যেকোন প্রতিশোধের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ২৬৭০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে। এর অর্থ হলো চীন থেকে প্রায় সব পণ্যের ওপর কার্যত যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করার কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীন ২০১৭ সালে বিক্রি করেছে ৫০৬০০ কোটি ডলারের পণ্য। জবাবে চীন তাদের টার্গেট ছোট করে আনে। তারা গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনে ১৩০০০ কোটি ডলারের পণ্য।

No comments

Powered by Blogger.