আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে পিষে চলে গেল পিকআপ

চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেখতে আটকানো হয়েছিল একটি পিকআপ ভ্যান। ভ্যানটি ঘিরে যখন শিক্ষার্থীরা চালকের কাছে কাগজ চাইছিল তখন বেপরোয়া চালক সটকে পড়ার চেষ্টা করে। তাকে আটকাতে সামনে দাঁড়ায় এক শিক্ষার্থী। বেপরোয়া চালক দিব্যি  ওই শিক্ষার্থীর ওপর দিয়েই ভ্যানটি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পিকআপ ভ্যানের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে ওই শিক্ষার্থী। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটে যাত্রাবাড়ী থানার শনিরআখড়া এলাকায়। পুরো ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই এলাকায় ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর করে তারা।
গতকাল সকালে ঢাকা-সিলেট রোডের শনির আখড়ায়ও ব্যাপক ছাত্র জমায়েত হয়। তারা গাড়ির চালকের লাইসেন্স আছে কিনা তা পরীক্ষা করছিল। লাইসেন্স না থাকলে তা রাস্তার পাশে সরিয়ে দাঁড় করতে বলা হয়। এমন সময় শনির আখড়ায় রাস্তার একটা অংশ কিছুটা ফাঁকা দেখে একটি পিকআপ ভ্যান দ্রুতগতিতে সেই এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করে। ততক্ষণে অন্য শিক্ষার্থীরা ওই গাড়িটি ঘিরে ফেলে। গাড়িটি আটকাতে সামনে দাঁড়ায় সরকারি তোলারাম কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল মাহমুদ। তখন গাড়িটি না থামিয়ে তার উপর দিয়েই বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।
তার বন্ধু যাত্রাবাড়ীর কবি নজরুল কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ধোলাইপাড়ের বাসিন্দা নাইমুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সকাল থেকে আমি, ফয়সাল ও অন্যরা বাসচাপায় ছাত্র নিহতের প্রতিবাদে ও মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবিতে মিছিলে ছিলাম। তখন একটি পিকআপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফয়সাল মাহমুদের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়। গতকাল ফয়সাল হাসপাতালে মানবজমিনকে বলেন, সকালে আমার সহপাঠীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছিল। বেপরোয়াগতিতে একটি পিকআপ আমাকে চাপা দেয়। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
একটি সিএনজি গ্যাস স্টেশনে কর্মরত তার পিতা শামসুল হক বলেন, সকাল ৮টায় সে কলেজের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। ৯টার সময় দনিয়া কলেজের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় একটি পিকআপ তার উপর উঠে গেলে সে গুরুতর আহত হয়।
চিকিৎসাধীন ফয়সালের বাম কোমরে আঘাত লেগেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতালটির চিকিৎসক একেএম বাহার বলেন, তার কোমরের বামপাশে ফ্র্যাকচার হয়েছে। যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন জ্ঞান ছিল না। প্রস্রাবও বন্ধ ছিল। প্রয়োজনীয় ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। সে এখন শঙ্কামুক্ত। তাকে এক-দেড় মাস হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
আহত ফয়সাল তার বাবা-মা’র সঙ্গে কদমতলীর মোহাম্মদীপাড়ায় থাকেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়।

No comments

Powered by Blogger.