রাশিয়া বিশ্বকাপ একজন ‘হিরো’ দেখলো না

আর দুদিন পরেই শেষ হয়ে যাবে রাশিয়া বিশ্বকাপ। ফুটবলের মিলনমেলা ভেঙে যাবে। হয় ফ্রান্স জিতবে, নয়তো ইতিহাস সৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা ক্রোয়েশিয়া প্রথমবার শিরোপা ঘরে তুলবে। কিন্তু এ বিশ্বকাপ আসলে ফুটবলপ্রেমীদের অনেক দিক থেকেই মন ভরাতে পারেনি। একে একে বড় দলগুলোর (আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ব্রাজিল) বাদ পড়া অন্যতম। লাতিনরা তো তাদের ফুটবলের ছন্দই খুঁজে পায়নি। অঘটনের এ আসরে আরো দুটি বিষয় আমার কাছে বড় অভাব মনে হয়েছে। একটি হলো রেফারিং, আরেকটি এখন পর্যন্ত এ বিশ্বকাপ থেকে উঠে আসেনি কোন তারকা। প্রতিটি আসরে কেউ না কেউ নিজেকে চিনিয়েছে, হয়েছেন তারকা। যেমনটা আগে দেখা যেত সেই পেলে, ম্যারাডোনা থেকে শুরু করে সবশেষ তারকা বনে যান হামেস রদ্রিগেজ ও পল পগবারা। এবার এমন একজনকেও পেলাম না। বিষয়টি খুবই হতাশ করেছে আমাকে। তবে একজন নিজের নামের প্রতি এখন পর্যন্ত ঠিকই সুবিচার করে যাচ্ছে। সে হলো ফ্রান্সের তরুণ তুর্কী কিলিয়ান এমবাপ্পে। ভালো লেগেছে ওর খেলা।
প্রতিবারই লাতিনদের কেউ না কেউ সেমিফাইনালে খেলে। এবার স্পেন আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর এক মাত্র ভরসা ছিল ব্রাজিল। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত পারেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে ছোট দলগুলো বিশেষ করে ইউরোপের দলগুলো প্রচণ্ড রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে। আর তারা সুযোগের অপেক্ষায় থেকে এমন সময় গোলগুলো করেছে যখন আর তা শোধ করতে পারেনি বড় দলগুলো। আর্জেন্টিনা বলেন আর ব্রাজিল ওরা কিন্তু জেতার জন্যই খেলে। তাই দেখবেন ওরা ডিফেন্সের চেয়ে আক্রমণভাগকে গুরুত্ব দেয় বেশি। আক্রমণ করে গোল দিয়েই জিততে পছন্দ করে। আবার বড় দল হলেও বেলজিয়ামের বিপক্ষে ফ্রান্স কিন্তু ভালো ফুটবল খেলেনি। তারা ১৯৯৮-এ ট্রফি জিতেছে এবারো তারা সুযোগ পেয়ে ভেবেছে, যে কোনোভাবে জিততে হবে। ফাইনালে যেতে হবে। অন্যদিকে আমি কিন্তু সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের সেরা রূপটি একেবারেই দেখিনি। মনে হয়েছে, ওরা খেলতে খেলতে খেই হারিয়ে ফেলছে। হ্যাঁ, আক্রমণে গেছে কিন্তু সেখানেও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেনি। শেষ ম্যাচে তাদের সেই ধার ছিল না।
অন্যদিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল ফুটবল ভক্তরা। কিন্তু ইংলিশ তারুণ্যও ক্রোয়েশিয়ার সামনে দাঁড়াতে পারেনি। আমি এ ম্যাচে ভেবেছিলাম যত তরুণরা আছে ইংল্যান্ডে ওরা তেড়ে ফুঁড়ে খেলবে। ম্যাচটা এক তরফা হতে দেবে না। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া দেখেন ওদের অভিজ্ঞতার দারুণ প্রমাণ রেখেছে। যেমন আক্রমণ ভাগ ঠিক রেখেছে। তেমনি মাঝ মাঠ ও রক্ষণ ভাগ। তাই পিছিয়ে পড়েও খেই হারায়নি। শেষ পর্যন্ত ঠিকই অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেছে। যা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে ইংল্যান্ডের তরুণ ফুটবলাররা। আরো একটা বিষয়, ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার জন্য ছিল আলাদা শক্তি হলো এ দুই দেশের প্রেসিডেন্টই মাঠে উপস্থিত থাকেন। একটি দেশের প্রেসিডেন্ট যখন মাঠে থাকেন তখন কিন্তু দলের মধ্যেও একটা অন্যরকম শক্তি কাজ করে।
ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখবো তবে ক্রোয়েশিয়াও পারে...
ফাইনালে কে জিতবে তা নিয়ে তো অনেক জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। আমি মনে করি ফ্রান্স শিরোপা জয়ের দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। মাঠের ফুটবল ছাড়াও তাদের জন্য অনুপ্রেরণা আরো একবার বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। এটি ওদের আলাদাভাবে এগিয়ে রাখবে। খুব বেশি দিনও কিন্তু হয়নি, ১৯৯৮-এ। আবার ক্রোয়েশিয়াকে যদি তারা দুর্বল টিমভাবে সেটিও ভুল হবে। এ পর্যন্ত সেরা ফুটবল উপহার দিয়েই ওরা ফাইনালে এসেছে। ওদের সামনে বড় অনুপ্রেরণা হলো নতুন ইতিহাস রচনা করা। ওরা পারে সেটি দেখিয়েছে এখন ফাইনালে সেই গতি ও শক্তি ধরে রাখতে পারলেই হয়। তবে আমি যেটি আশা করছি ফাইনাল ম্যাড়মেড়ে হবে না।
‘প্রযুক্তি নষ্ট করেছে রেফারিংয়ের মান’
এমনিতেই রাশিয়া বিশ্বকাপকে অঘটনের আসর হিসেবে বলা যেতে পারে। ফুটবলের সৌন্দর্য ছিল না। যতটা জমজমাট আশা করেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা, তা অনেকটাই পায়নি তারা। ছোট দলগুলো খেলেছে রক্ষণাত্মক নেতিবাচক ফুটবল। তার ওপর রেফারিং ছিল অনেকটা বাজে। প্রযুক্তির ব্যবহার করতে গিয়ে রেফারিংয়ের মান নষ্ট হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো ছিল এলোমেলো। সব মিলিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে দিক ছিল রেফারিং। প্রতিটি দলেরই কম বেশি অভিযোগ রয়েছে। এমন আসরে যদি রেফারিং ভালো না হয় তাহলে মান থাকে না। যদি প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হয় তাহলে রেফারিদের মাঠে থাকার দরকার কি! তারা তো রুমে বসেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অনুলিখন: ইশতিয়াক পারভেজ

No comments

Powered by Blogger.