তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান পুনর্নির্বাচিত, সংসদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা

নির্বাচনে বিজয়ের পর ইস্তাম্বুলে রজব তাইয়্যেব এরদোগান
এ কে পার্টির নেতা রজব তাইয়্যেব এরদোগান তুরস্কের ১৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সিএইচপির প্রার্থী মুহাররম ইনজে পেয়েছেন ৩১ শতাংশ ভোট।
দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কাউন্সিলের প্রধান সাদি গুভেনে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট এরদোগান সব বৈধ ভোটে নিশ্চিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন।’ তবে আর কোনো বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
তুরস্কের ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, ৯৯.২ শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা গেছে, এরদোগান পেয়েছেন ৫২.৫ শতাংশ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাররেম ইনজে পেয়েছেন ৩০.৭ শতাংশ ভোট।
বিরোধী দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় মেনে নেয়নি। তারা বলেছে, ফলাফল যা-ই হোক না কেন,তারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। এর আগে তারা বলেছিল, নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডেই জয় পাবেন না এরদোগান।
মুহাররেম ইনজে
এদিকে, রাত ৩টার পর ইস্তাম্বুলে একে পার্টির সদরদপ্তরের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেয়ার সময় রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেন 'নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে এটা স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।'
সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এরদোগান বলেন, “আগামীকাল থেকে শুরু করছি, আমাদের জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করব আমরা।”
তিনি বলেন, “প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে তুরস্ক দুনিয়াকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে। এ নির্বাচনে তুরস্কের জনগণ, এ অঞ্চল এবং দুনিয়ার সব নিপীড়িত মানুষের বিজয় অর্জিত হয়েছে।”
এরদোগান বলেন, “শাসক নয়, বরং সবসময় জনগণের সেবক হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার দেশের জনগণ এ ব্যাপারে অনেক সজাগ।”
তুরস্কের কর্তৃপক্ষ আরও কঠোরভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
এর আগে, তুর্কি সরকারের মুখপাত্র বেকির বোজদাগও এক টুইটার বার্তায় এরদোগানের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার দাবি করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৯৪ শতাংশ গণনা শেষে তিনি ওই টুইট করেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর ভাষণ দেন এরদোগান
তুরস্কের এবারের নির্বাচনে ৮৭.৫ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তুরস্কের দৈনিক সাবাহ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৯.২ শতাংশ ভোট গণনায় এরদোগান পেয়েছেন ৫২.৫ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সিএইচপি প্রার্থী মোহারেম ইনসে পেয়েছেন ৩০.৭ শতাংশ ভোট।
এছাড়া, এইচডিপির সালাদিন ডেমিরেটাস পেয়েছেন ৮.৪ শতাংশ, গুড পার্টির মেরেল আকসেনার পেয়েছেন ৭.৩ শতাংশ এবং সাদাত পার্টির টেমেল কারামোলাগ্লু পেয়েছেন ০.৯ শতাংশ ভোট।
এদিকে, সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ ভোট গণনায় শাসক পিপলস জোটের একে পার্টি পেয়েছে ৪২.৫ শতাংশ (আসন ২৯৩), এমএইচপি পেয়েছে ১১.১ (আসন ৫০) শতাংশ। পিপলস জোটের পেয়েছে ৫৩.৬ ভাগ (৩৪৩ আসন)।
অন্যদিকে, বিরোধী নেশন জোটের সিএইচপি পেয়েছে ২২. শতাংশ (আসন ১৪৬), গুড পার্টি পেয়েছে ১০ শতাংশ (আসন ৪৪) এবং সাদাত পার্টি পেয়েছে ১.৪ শতাংশ ভোট। নেশন এলায়েন্স জোটের প্রার্থীরা মোট ভোট পেয়েছে ৩শতাংশ (আসন ১৯০)। জোট বহির্ভুত কুর্দি দল এইচডিপি পেয়েছে ১১. শতাংশ ভোট (আসন ৬)
ভোট দিচ্ছেন এরদোগান
তুর্কি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য মোট আসন ৬০০ আসনের মধ্যে ৩০১ আসন দরকার হয়। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে সরকারি জোট।
তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিড্টে নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ ন্যূনতম পঞ্চাশ শতাংশ ভোট না পেলে নির্বাচন গড়াবে দ্বিতীয় দফায়। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের পনের দিন পর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা নির্বাচন। যদিও ইতোমধ্যেই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে গেছেন এরদোগান। তাই দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন হবে না।
আঙ্কারায় একে পার্টির সমর্থকদের বিজয়োল্লাস
এরদোগান ২০০৩ সাল থেকে তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন। তিনি টানা ১১ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হন। ২০১৬ সালের এক ব্যর্থ গণঅভ্যুত্থানের পর ২০১৭ সালে এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেন এরদোগান। এতে তিনি দেশটিকে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্টশাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার জনরায় পান। এরদোগানএবারের নির্বাচনে জয়লাভ করায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সরকারি কর্মকর্তা,ভাইস প্রেসিডেন্ট,মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন এবং যেকোনো সময় সংসদ ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.