‘তোমরা একলা খাইও না আমরার সবরে লইয়া খাও’

শ্রীমঙ্গল মির্জাপুর ইউনিয়নে বালুর ঘাট দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বৌলাছড়া, মুড়াছড়া, ঝলমছড়া ও কালিছড়া- এ চারটি ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মনু মিয়ার ছেলে যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়া ও ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বৌলাসী গ্রামের সভাপতি আব্দুর রশিদ গ্রুপ এখন মুখোমুখি। এনিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ মিয়া মাস্টার বলেন, বালুর ঘাট দখল নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৈশাখের প্রথম থেকে বালুঘাট দখল নিয়ে বৌলাশীর দক্ষিণ পাঁচাউন ও উত্তর বৌলাছড়া গ্রামের দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পরে দুপক্ষের সমঝোতায় বালু তুলবে বলে শ্রীমঙ্গলে ও স্থানীয়ভাবে দুবার শালিস বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত কয়েক দিন ধরে বৌলাছড়ার বালুমহালে একপক্ষের বালু উত্তোলন করতে গিয়ে নতুন করে বিরোধ দেখা দেয়। জুয়েল মিয়া বৌলাছড়ার ভাঙ্গাপুল এলাকা থেকে বালু তুলে আর রশিদ মিয়া একই ছড়ার চা-বাগানের পাশে নন্দর পতিত জমি থেকে বালু তোলা শুরু করে। এ ঘটনায় দুপক্ষের মধ্যে নতুন করে বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি কলিম মিয়া হামলার শিকার হয়, এতে তার মাথায় চারটি সেলাই দেয়া হয়েছে।
এদিকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলার ১নং মির্জাপুর ইউপির ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডেও বাসিন্দারা গতকাল মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, এলাকার প্রভাবশালী মেম্বার মনু মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া, জিতু মিয়া, রুবেল মিয়া জোরপূর্বক প্রাকৃতিক ছড়ার বালু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। এ কারণে এলাকার ব্রিজ, রাস্তাঘাট ও ছড়ার পাড় ভেঙে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। দীর্ঘদিন এর বিরুদ্ধে আপত্তি করেও কোনো লাভ হয়নি।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র উচ্চ আদালতে দায়ের করা একটি রিটের কারণে উপজেলার সবকটি ছড়ার বালু উত্তোলনের ইজারা বন্ধ রয়েছে। তারপরও প্রভাবশালীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এসব ছড়ার বালু উত্তোলন করছে।
রোববার দুপুরে উত্তর বৌলাছড়া গ্রামে সরজমিনে দেখা গেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র ব্রিজটি গোড়া থেকে ওপর পর্যন্ত হেলে পড়েছে। ব্রিজের পাশে ছড়া থেকে বালু তুলে রাস্তার ধারে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ট্রাক্টরে করে এসব বালু প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনে জড়িত শ্রমিক একই গ্রামের জুমান বলেন, ৩০০ টাকা রোজে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানে বালু তুলছি। জুমান বলেন, মনু মেম্বারের ছেলে জুয়েল এসব বালু তোলাচ্ছে।
একইভাবে দক্ষিণ পাঁচাউন এলাকার যাত্রাপাশা গ্রামে আঞ্চলিক সড়কের পাশে ঝলমছড়া থেকে বালু তুলতে দেখা গেছে। এলাকার প্রণব চন্দ্র দেব (৫০) বলেন, বাবার শ্মশানের ওপর তারা বালু তুলে জমা করছে। এখানে ভৈরবতলীও রয়েছে। আমরা আপত্তি দেয়ার পরও মনু মেম্বারের ছেলে জুয়েল ও রুবেল জোর করে বালু তুলছে। প্রদীপ দেব (৫৫) বলেন, এখানে বালু তোলার কারণে ছড়ার পাড় ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের বাধা কেউ মানছে না। সাবেক ইউপি সদস্য আছকির মিয়া বলেন, শ্মশানের ওপর বালু তুলে রাখায় এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত।
এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়া বলেন, ‘আমাদের ৪০-৫০ জন লোক আছে, সবমিলে মির্জাপুরে একটি সিন্ডিকেট হয়েছে। এতে সবদলের মানুষ আছে। স্থানীয় কোন সমস্যা হলে আমরা দেখবো। আমার একার কিছু না। অনেক জনের বিষয়-আশয় আছে’। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘জুয়েলকে বলেছি ‘তোমরা একলা খাইও না, আমরার সবরে লইয়া খাও’। সিন্ডিকেটরে ২০ হাজার টাকাও দিছি। এরপরও হেরা বালু তুলে একলা খায়। তিনি বলেন, ‘দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মার্ডার হওয়া থেকে বালু তোলা বন্ধ থাকা ভালো। আমরা চাই না এলাকায় ভেজাল সৃষ্টি হোক। এখন যে অবস্থা আমরা বাজার-হাটে উঠতে পারি না। সুফি মিয়া নামে এক ছেলে আমাকে হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দিছে’। এই ভয়ে বাজারে যেতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, ‘মনু মেম্বারের ছেলে জুয়েল বালু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে এমন অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসী থেকে পেয়েছি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

No comments

Powered by Blogger.